এমপির বিরুদ্ধে এমপির অভিযোগ

 

দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও দিনাজপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারের বিরুদ্ধে দলের মধ্যে গ্রুপিং সৃষ্টি, নিজ দলের এমপিদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও দ্বন্দ্ব সৃষ্টি, দলীয় প্রার্থীকে হারিয়ে দেওয়ার অপকৌশল এবং পকেট কমিটি গঠনসহ নানান অভিযোগ করেছেন খোদ আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক।

দিনাজপুর-৬ আসনের সংসদ সদস্য শিবলী সাদিকের অভিযোগ, মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার আওয়ামী লীগকে নষ্ট করতে চান, ধ্বংস করতে চান, গ্রুপিং করতে চান। আগামীতে আচরণ এবং ব্যবহারের পরিবর্তন না করলে প্রত্যেকটি এলাকায় সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারকে প্রতিহত করারও ঘোষণা দিয়েছেন শিবলী সাদিক।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে শিবলী সাদিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তার নিজস্ব পেজ থেকে এক ভিডিও বার্তায় এই অভিযোগ করেন।

ভিডিওতে তিনি বলেন, ‘আমাদের বিপক্ষে যারা অবস্থান নিয়েছেন, বিশেষ করে আমার জেলার সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার সাহেব; তার গাত্রদাহ ও ঈর্ষার কারণ যে, শিবলী সাদিকের প্রোগ্রামে কেন হাজার হাজার মানুষ আসে? শিবলী সাদিক কেন এত বড় প্রোগ্রাম করছে, শিবলী সাদিকের নাম কেন জেলায় শোনা যাচ্ছে? জেলার প্রতিদ্বন্দ্বী কেন সে হবে বা শিবলী সাদিক আওয়ামী লীগকে কেন গঠনতান্ত্রিকভাবে করতে চাচ্ছে? আওয়ামী লীগ আমরা যেভাবে করি, পকেট কমিটি করি। এভাবে করলেই তো হয়।’

শিবলী সাদিকের অভিযোগ, ‘জেলা কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে আমার সঙ্গে নবাবগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যানেরও সম্পর্কের অবনতি ঘটিয়েছেন, তাকে দিয়ে অভিযোগ করিয়েছেন। প্রত্যেকটি উপজেলাতেই তিনি গ্রুপিং করছেন। অবস্থানে থাকার জন্য মানুষে মানুষে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করেছেন। আমি দিনাজপুর-৫ আসনে নির্বাচন করব না। মাঝে মাঝে শোনা যায় আপনারাই নাকি দিনাজপুর-৬ এ নির্বাচন করবেন। আপনি সাতবারের এমপি, আপনি ১০ জায়গাতে এমপিশিপ করতে পারেন, সেই ক্ষমতা আল্লাহ আপনাকে দিয়েছেন। আমার পরিবার আপনার কি ক্ষতি করেছে, আমরা কি ক্ষতি করেছি?’

‘ফুলবাড়িতে আমাদের যে জমি ছিল আপনার আচরণের জন্য বিক্রি করে দিয়েছি। আমরা লাখ লাখ টাকা খরচ করে আপনাকে প্রধান অতিথি করি। তার প্রতিদানে আপনি আমাদের এভাবে প্রতিদান দেন।’

তিনি বলেন, ‘আপনার (ফিজার) চাওয়া-পাওয়া (হচ্ছে), যে কোনোভাবে মানুষকে ছোট করতে হবে, ধ্বংস করে দিতে হবে। এককভাবে আপনার আসনে এমপি হবেন। প্রত্যেকটা সংসদীয় আসনে আপনি বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড় করিয়েছেন। আমার বাবাকে নির্বাচনে হারিয়েছেন, আমি ভুলি নাই সেই কথা। আপনি সূক্ষ্মভাবে আপনার আসন ছাড়া সব প্রার্থীকেই হারিয়েছেন। খালিদ (খালিদ মাহমুদ চৌধুরী) বাবাকে হারিয়েছেন, ইকবাল ভাইয়ের বাবাকে হারিয়েছেন, মিজানুর রহমান মানুকে হারিয়েছেন, আমার বাবাকে হারিয়েছেন। এই কথাগুলো কষ্টের সঙ্গে, দুঃখের সঙ্গে বলছি, বিনয়ের সঙ্গে বলছি, এখান থেকে পরিবর্তন হয়ে আসতে হবে।’

এমপি শিবলী সাদিক অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার এলাকায় দুটি কমিটি অনুমোদন দিচ্ছেন না। আপনার সুপারিশে ৬২ হাজার টন কয়লার দেওয়া হয়েছে। যে কয়লা সাড়ে ৯ হাজার টাকা করে ক্রয় করে ২২ থেকে ২৬ হাজার টাকা টন বিক্রি হয়েছে। আপনার সুপারিশে কাছের মানুষ এসব কয়লা পেয়েছেন। এটা তো রাষ্ট্রীয় সম্পদ ছিল। আমরা তো কোনোদিনই বলিনি। আমাকে আঘাত ও অপমানিত করতে আসিয়েন না, আমি বিনয়ের সঙ্গে বলছি। আমি আওয়ামী লীগের এমপি, বিএনপি-জামায়াতের এমপি নই।’

তিনি বলেন, ‘আগামীতে যদি আপনার দ্বারা ষড়যন্ত্র রচিত হয় তাহলে আমাদেরও আপনার চরিত্রে আসতে হবে। যদিও নোংরামির খেলা আমাদের পরিবার আমাদের শেখায়নি। আমি প্রকৃতপক্ষে ভূমিদস্যু হয়ে থাকলে আমার বিরুদ্ধে মামলা করা হোক, আমাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হোক, আমাকে শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। মানববন্ধন কেন করতে হবে? আদালত তো ওপেন আছে। আমরা সেটাই ফেইস করতে চাই।’

‘আমি আওয়ামী লীগের এমপি, শেখ হাসিনার কর্মী। আমাকে আঘাত করে আপনি কত দূরে যেতে পারবেন। আমাকে খুঁড়তে খুঁড়তে নিজের চারপাশে যে কতগুলো গর্ত করে ফেলেছেন তার ধারণা আপনার নাই।’

‘আমি শুনেছি ইন্ডিয়ান হাইকমিশন এবং রাষ্ট্রপতির কাছেও আমারসহ আরও বেশ কয়েকজনের নামে অভিযোগ করা হয়েছে। যাতে করে আগামীতে আমরা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে মনোনয়ন নাই পাই। আমরা শেখ হাসিনার সৈনিক। কোন পদে থাকলাম, না থাকলাম এটা বড় কথা নয়। কিন্তু এখন শেখ হাসিনাকে টেকাতে যা করা দরকার, সেটাই করব আমরা। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে রক্ষা করার জন্য যেটা করা দরকার সেটাই করব। আওয়ামী লীগকে নষ্ট করাতে চান, ধ্বংস করাতে চান, গ্রুপিং করাতে চান, অনেক ক্ষমতাধর