বিএনপি লক্ষ্য চূড়ান্ত আন্দোলন

bnp logo

 

নির্বাচনকালীন সরকার, জ্বালানির দাম বৃদ্ধি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ জনসম্পৃক্ত ইস্যুতে ২২ আগস্ট থেকে দেশব্যাপী কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। আগামী কয়েক মাস এভাবেই মাঠ গরম রাখবে দলটি। এরপর মোক্ষম সময়ে সরকার পতনের এক দফা নিয়ে রাজপথ দখলের চিন্তাভাবনা রয়েছে। চূড়ান্ত আন্দোলনের আগেই সরকারবিরোধী বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়ার কাজ শেষ করা হবে।

যারা বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়ার বাইরে থাকবে তাদেরও মাঠে নামানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়েরর একাধিক নেতা যুগান্তরকে বলেন, সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়েছে। তৃণমূল থেকে শুরু হওয়া এ আন্দোলন আরও বেগবান করা হবে। হামলা-মামলা কিংবা গ্রেফতার কোনো কিছুতেই রাজপথ না ছাড়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাধা আসলে আপাতত পালটা হামলা এড়িয়ে কৌশলে কর্মসূচি পালনে কেন্দ্র থেকে বার্তা পাঠানো হয়েছে। কখন প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে তা সময়মতো হাইকমান্ড থেকে জানিয়ে দেওয়া হবে। সরকার পতনের একদফা আন্দোলনে মাঠে নামার সঙ্গে সঙ্গে যে কোনো বাধা রাজপথে মোকাবিলা করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান দলের স্থায়ী কমিটির এক নেতা।

এদিকে ৩০ আগস্ট তৃণমূলে চলমান কর্মসূচি পর্যালোচনা করবে দলটির হাইকমান্ড। বাধার কারণে যেসব স্থানে কর্মর্সূচি পালন করা সম্ভব হয়নি তা পুনরায় করার সিদ্ধান্ত আসতে পারে। পাশাপাশি আরও কমর্সূচি দেওয়া যায় কিনা তা নিয়েও আলোচনা হবে। এছাড়া দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ১ সেপ্টেম্বর থেকে মাঠে থাকবে বিএনপি। আলোচনা সভা, র‌্যালিসহ পালন করা হবে নানা কর্মসূচি।

তৃণমূলে দুদলের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়লেও কেন্দ্রে সেই ছোঁয়া এখনো লাগেনি। দুদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে চলছে বাগযুদ্ধ, রাজপথ দখল পালটা দখলের হুঁশিয়ারি। সেপ্টেম্বরে রাজধানীসহ দেশের বড় শহরগুলোতে রাজনীতির উত্তাপ ছড়িয়ে পড়তে পারে।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, আমরা গোড়া থেকে আন্দোলন শুরু করতে চাই। বিএনপির গোড়া বা আন্দোলনের সূতিকাগার হচ্ছে তৃণমূল। সেখান থেকে আন্দোলন শুরু হয়েছে। আন্দোলন করলে হামলা হবে, মামলা হবে এমনকি গ্রেফতার হবে। এখন নেতাকর্মীদের এসব সামলে নেওয়ার সময় এসেছে। যতই হামলা হোক আমরা আন্দোলন থেকে সরব না। জনগণকে সম্পৃক্ত করে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

তিনি বলেন, বিএনপির গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে হামলা চালিয়ে সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায় সরকার। কিন্তু আমরা সরকারের পাতা ফাঁদে পা দেব না। কর্মসূচি পালনে আমরা আমাদের কৌশলে এগোতে চাই। সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিজয়ের লক্ষ্যে পৌঁছাতে যা যা প্রয়োজন আমরা তাই করব।

জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু বলেন, আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ধরে অত্যাচার-নির্যাতন করেই ক্ষমতায় টিকে আছে। একদিকে তারা আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালাচ্ছে, মামলা দিয়ে গ্রেফতার করছে অন্যদিকে তাদের অনেককে কারাগার থেকে মুক্তি দিচ্ছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ দেশে একটা অরাজকতা সৃষ্টি করতে চায়। তবে আগামীতে তারা সফল হবে না।

তিনি বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে জনগণকে সম্পৃক্ত করে তৃণমূল থেকে আন্দোলন শুরু হয়েছে। ধীরে ধীরে তা কেন্দ্রের দিকে আসবে। দেশের মানবাধিকার ও গণতন্ত্র রক্ষায় এবার আমরা পিছু হটব না।

২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে কোনো উত্তেজনা ছিল না। নির্বাচন নিয়ে নানা অভিযোগের পরও রাজপথের কর্মসূচিতে যায়নি মাঠের বিরোধী দল বিএনপি। নির্বাচনের পর দলটি সাংগঠনিকভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর দিকে নজর দেয়। তৃণমূল থেকে দলকে গোছানোর কাজ শুরু করে। কয়েক বছরে দলকে অনেকটাই গুছিয়ে এনেছে। সাংগঠনিক পুনর্গঠনের পাশাপাশি ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচি নিয়ে ব্যস্ত থাকে বিএনপি। কিন্তু নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে রাজপথে কঠোর কর্মসূচির পরিকল্পনা করছে দলটি।

দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার স্পষ্ট ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। দলটির নেতারা মনে করেন, তাদের এমন দাবি ক্ষমতাসীনরা সহজেই মেনে নেবে না। তাই দাবি আদায়ে রাজপথই তাদের একমাত্র ঠিকানা। সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপির একার পক্ষে আন্দোলন করে সফলতা পাওয়া কঠিন। প্রয়োজন রাজনৈতিক ঐক্য এবং জনসম্পৃক্ততা। সেদিকেই নজর দিয়েছেন তারা। সরকারবিরোধী বৃহত্তর ঐক্য গড়ার কাজ অনেকটা এগিয়েছে। রাজপথে যুগপৎ আন্দোলনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ আন্দোলনে এবার সাধারণ জনগণকে পাশে চায় দলটি। সে লক্ষ্যে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে তৃণমূল পর্যায়ে কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হয়। জনসম্পৃক্ত ইস্যু নিয়ে ২২ আগস্ট থেকে সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। ৩০০ সংসদীয় আসনে এ কর্মসূচি পালন করা হবে।

এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নে কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে বিগত সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তদেরও। কর্মসূচিতে যারা অংশ না নেবেন আগামী নির্বাচনে তাদের মনোনয়ন পাওয়া কঠিন হবে বলে বার্তা দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রের এমন কঠোর সিদ্ধান্তে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকছেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে উজ্জীবিত তৃণমূলও। আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে এসব কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি অনেকটাই বাড়ছে। যুক্ত হচ্ছেন সাধারণ জনগণও।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা জানান, শুরুতে অনেকটা বাধাহীনভাবেই এসব কর্মসূচি পালন করে তৃণমূল। কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় ক্ষমতাসীনদের হামলা, ভাঙচুর। বিএনপির কর্মসূচি বন্ধের কৌশল হিসাবে অনেক স্থানে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জারি করা হচ্ছে ১৪৪ ধারাও।

শুধু হামলা-মামলা নয়, শুরু হয়েছে নেতাকর্মীদের গ্রেফতারও। ক্ষমতাসীন দল ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এমন আচরণকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন দলের অনেকে। তাদের মতে, প্রথম থেকে এসব কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতি ঘটলেও গণমাধ্যমে সেভাবে আসেনি। সাধারণ মানুষও তেমন গুরুত্ব দেয়নি। কিন্তু হামলা-মামলা ও গণমাধ্যমে গুরুত্ব সহকারে তা প্রচার ও প্রকাশ হওয়ায় এখন রাজনীতিতে আলোচনায় বিএনপি। ফলে সারা দেশে নেতাকর্মীদের মধ্যে চাঙ্গা ভাব সৃষ্টি হয়েছে।