বেপরোয়া এমপি জাফর দুদকের জালে

 

জাফর আলম কক্সবাজার-১ আসনের ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য। তিনি চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগেরও সভাপতি। এই দুই পদের অপব্যবহার করে চকরিয়া-পেকুয়া সংসদীয় এলাকায় তিনি কায়েম করেছেন রামরাজত্ব। আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে করেছেন বিভিন্ন কমিটি গঠন, আছে নিজস্ব গুন্ডা বাহিনী। এই বাহিনী দিয়ে অবৈধভাবে দখল করছেন সরকারি জমি, জলাশয়, নদী এবং বিক্রি করছেন পাহাড় কেটে মাটিও। তাঁর এসব কুকীর্তির অনুসন্ধান করতে গিয়ে চাকরিচ্যুত হয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিন। অবশেষে বুঝি এই সংস্থার জালেই তিনি ধরা পড়ছেন। সম্পদের হিসাব দিতে এই এমপিকে স্ত্রী-সন্তানসহ তলব করেছে কমিশন।

 

 

নানা অপকর্ম ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এমপি জাফরসহ তাঁর পরিবারের আরও তিন সদস্যের বিরুদ্ধে অবশেষে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। সেই অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে জাফর, তাঁর স্ত্রী শাহেদা বেগম, ছেলে তুহিন আলম ও মেয়ে তানিয়া আফরিনকে আগামীকাল রোববার দুদকের কক্সবাজার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে হাজির হয়ে বক্তব্য দেওয়ার জন্য নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

 

দুদকের কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন স্বাক্ষরিত গত ২৪ আগস্টের নোটিশে বলা হয়েছে, এমপি জাফরের স্ত্রী ও উপজেলার পালাকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শাহেদাসহ পরিবারের চারজনের বিরুদ্ধে সরকারি জমি ও জলমহাল দখল, মাদকের কারবার নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজি ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ বিষয়ে তাঁদের বক্তব্য নেওয়া প্রয়োজন। তাই রোববার বেলা ১১টায় দুদকের কক্সবাজার কার্যালয়ে তাঁদের উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

 

ওইদিন একই সঙ্গে তাঁদের জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, আয়কর রিটার্নের কপি, বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা হিসাবের বিবরণী, অর্জিত স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের ক্রয়-বিক্রয়ের দলিল এবং তাঁদের ওপর নির্ভরশীলদের চাকরি বা ব্যবসা অথবা অন্য উৎস থেকে প্রাপ্ত আয়ের বিবরণীসহ সংশ্নিষ্ট রেকর্ড নিয়ে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। দুদক কর্মকর্তা মুনিরুল ইসলাম বলেন, এমপি জাফর ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে তাঁদের ডাকা হয়েছে।

 

চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ফজলুল করিম সাঈদি বলেন, এমপি জাফর তাঁর গুন্ডা বাহিনী দিয়ে শত কোটি টাকার জমি দখল করেছেন। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ইয়াবা কারবারসহ হেন কোনো অপকর্ম নেই, যা এই সংসদ সদস্য করেন না। এরপরও জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগের পদের কল্যাণে এলাকায় চলেন বীরদর্পে।

পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলমগীর চৌধুরী বলেন, এভাবে চলতে থাকলে এমপি জাফরের জন্য দলকে চরম মূল্য দিতে হবে। ভবিষ্যতে এই সংসদ সদস্যের অপকর্মের ভার যাবে আওয়ামী লীগের ওপর। এ জন্য মানুষ তাঁর সঙ্গে দলকেও ঘৃণা করবে।

 

তবে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে এমপি জাফর বলেন, কিছু বিষয় নিয়ে আমার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছে দুদক। এর পরিপ্রেক্ষিতেই পরিবারের সদস্য হিসেবে আমাকেও নোটিশ দেওয়া হয়েছে। সংস্থাটি চাইলে যে কারও বিরুদ্ধে ওঠা অনিয়মের অভিযোগ অনুসন্ধান করতে পারে। এতে আমি বিচলিত নই; কারণ, আমি এবং আমার পরিবারের কেউ কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত নয়। অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন।

 

কক্সবাজারে সরকারের ৩ লাখ কোটি টাকার ৭২টি মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। এর আগে দুদক তিনটি তদন্তে ভূমি অধিগ্রহণে মোট ৭২ কোটি টাকার দুর্নীতির প্রমাণ পায়। এ অনিয়মের তদন্ত করতে গিয়ে দুদকের উপসহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিন প্রথমে বদলি এবং পরে গত ফেব্রুয়ারিতে চাকরিচ্যুত হন। প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে তদন্ত করতে গিয়ে যাতে তদন্ত আর কোনো সৎ কর্মকর্তাকে এই পরিণতি ভোগ করতে না হয়- সেই কামনা স্থানীয়দের।