সুশাসন নিশ্চিত করতে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ

gov logo

নির্ভুল আইন প্রণয়ন এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এজন্য প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে পৃথক আইন উইং চালু করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে প্রস্তাবিত কোনো আইন ও নীতিমালা অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় উপস্থাপনের আগে নির্ধারিত কমিটির নেতৃত্বে বিদ্যমান ফিল্টারিং ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হচ্ছে। এছাড়া প্রতিটি আইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জবাবদিহি নিশ্চিত করা হবে। আইনের অপব্যবহার করলে সরল বিশ্বাসে ইনডেমনিটি বা দায়মুক্তি পাওয়ার সুযোগ থাকবে না। অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে ‘সরল বিশ্বাস’-এর বিষয়টি প্রমাণ করতে হবে।

 

এ প্রসঙ্গে মন্তব্য জানতে চাইলে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার শনিবার যুগান্তরকে বলেন, ‘প্রস্তাবিত আইন মন্ত্রিসভায় উত্থাপনের আগে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে কোনো কমিটির নেতৃত্বে যাচাই-বাছাই করা হলে দীর্ঘসূত্রতা আরও বাড়বে। রুলস অব বিজনেস ফলো করলে এ ধরনের কমিটির প্রয়োজন নেই। এছাড়া কোনো ব্যত্যয় থাকলে তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কিংবা বিভাগের কাছে ফেরত পাঠানোর এখতিয়ার রয়েছে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের।’ অবশ্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা দাবি করেন, ‘গঠিত এই কমিটি ইতোমধ্যে অনেক ভালো কাজ করেছে। বরং অনেক আগে থেকে এ ধরনের কমিটি কাজ করলে সবার জন্য ভালো হতো।’ তিনি জানান, এই কমিটিও হয়েছে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তে।

 

 

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মূলত সুশাসন নিশ্চিত করাসহ আদালতে মামলার চাপ কমাতে এ ধরনের বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে তার আওতাধীন সব আইন, বিধি, প্রবিধি ও সার্কুলার সম্পর্কে হালনাগাদ বিস্তারিত তথ্য সংরক্ষণ ও জানতে হবে। যেভাবে প্রয়োগ করার কথা, সেভাবে প্রয়োগ হচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত করতে হবে। কোনো কিছুই যেন সংবিধান ও মূল আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হয়, সেটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হবে। বিশেষ করে আপিল তামাদি হওয়ার বিষয়টি আর মানা হবে না। সময়মতো আপিল না করার কারণে যদি কোথাও সরকারি কোনো স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগতভাবে দায় নিতে হবে।

 

প্রস্তাবিত আইন ও নীতিমালা যাতে মন্ত্রিসভায় ত্রুটিমুক্তভাবে উপস্থাপন করা হয়, তা নিশ্চিত করতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিবের (আইন) নেতৃত্বে কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাঁচ বছর আগে গঠিত এই কমিটিকে আরও কার্যকর করা হচ্ছে। আইনের খসড়া পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক মতামত প্রদানসংক্রান্ত এই কমিটিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুবিভাগ প্রধান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (সিআর), লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের যুগ্মসচিব (ড্রাফটিং), জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের যুগ্মসচিব (আইন প্রণয়ন), আর্থিক সংশ্লেষ থাকলে অর্থ বিভাগের উপসচিব (বাজেট), জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বাংলা ভাষা বাস্তবায়ন কোষের অ্যাসাইনমেন্ট অফিসারকে সদস্য হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা আছে।

 

মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মন্ত্রিপরিষদ থেকে এ কমিটি গঠন করা হয় ২০১৭ সালের ১১ মে। এর আগে অনেক সময় ত্রুটিপূর্ণভাবে মন্ত্রিসভায় প্রস্তাবিত আইন উপস্থাপন করা হতো। এজন্য ভালোভাবে যাচাই-বাছাই বা ফিল্টারিং করে আইন উপস্থাপনের জন্য এ কমিটি গঠন করা হয়। সূত্রমতে, বিদ্যমান কমিটিকে আরও কার্যকর করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এ কমিটি নতুন নতুন আইন প্রণয়নে যথেষ্ট প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে। এ কমিটির ক্লিয়ারেন্স বা সার্টিফিকেট ছাড়া কোনো মন্ত্রণালয় ও বিভাগ মন্ত্রিসভায় প্রস্তাব উত্থাপন করতে পারবে না। এটি আরও একটি সেভগার্ড।

 

উচ্চ আদালতে চলমান বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগের সরকারি স্বার্থসংশ্লিষ্ট মামলা পরিচালনা কার্যক্রম পরিবীক্ষণের জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের একটি কমিটিও ২০১৯ সাল থেকে কাজ করছে। কিন্তু এ উদ্যোগ নেওয়া সত্ত্বেও সরকারের স্বার্থসংশ্লিষ্ট অনেক মামলায় সরকার হেরে যাচ্ছে। যার অন্যতম কারণ সময়মতো আপিল না করা। আপিল তামাদি হওয়ার কারণে সরকারের অনেক মূল্যবান সম্পত্তি হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। এমনকি আদালত অবমাননার মামলায় মাঠ ও কেন্দ্রীয় প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের প্রায় সময় উচ্চ আদালতে উপস্থিত হতে হয়।

 

এজন্য মন্ত্রণালয়/বিভাগের যত মামলা উচ্চ আদালতে বিচারাধীন আছে তার বিস্তারিত তথ্য চেয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে চিঠি দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে বেশির ভাগ মন্ত্রণালয়/বিভাগ তথ্য পাঠানো শুরু করেছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কম