ছাত্রলীগের পদ নিতে কোটি টাকার মিশনে ইয়াবা কারবারি

student lig logo

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সংগঠনকে গতিশীল ও সুসংগঠিত করতে জেলা ছাত্রলীগের আওতাধীন উপজেলা ও কলেজ ছাত্রলীগ কমিটি গঠন করছে কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগ। নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টির খবরে পদ বাগিয়ে নিতে কোটি টাকার মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছে ডজনের বেশি ইয়াবা কারবারি এবং বিভিন্ন মামলার আসামিরা। অভিযোগে জানা যায়, ইতোমধ্যে সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের ম্যানেজ করে কেন্দ্রের শীর্ষ নেতাদের ম্যানেজ করার চেষ্টায় তাদের নিকটাত্মীয় এবং ঘনিষ্ঠ লোকজনকে ম্যানেজ করতে ঢাকায় অবস্থান করছেন চক্রের সদস্যরা। এমন দাবি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের। তবে মাদক মামলাসহ যে কোনো মামলার আসামি বা বিবাহিত কাউকে পদে আনা যাবে না বলে জানিয়েছে জেলা ছাত্রলীগ।

ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, উখিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন মাদক মামলা ও বিজিবির ওপর হামলা-মামলার আসামি আনোয়ার হোসেন। ২০১৯ সালে ইয়াবাসহ আটক সহযোগীদের বাঁচাতে বিজিবির ওপর হামলা চালিয়েছিলেন তিনি। (জিআর মামলা নং ৫৭/১৯)। আনোয়ার ইতোমধ্যে মাদক মামলার বিষয়টি গোপন করে বিপুল অর্থের বিনিময়ে জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ বাগিয়ে নিয়েছেন।

আনোয়ার উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের পশ্চিম ফারির বিল এলাকার বাসিন্দা মৃত আহমদুল্লাহর ছেলে। কয়েক বছর আগে ভালোবেসে বিয়ে করেছেন কক্সবাজারে মহিলা কলেজের ছাত্রী স্থানীয় বিএনপি নেতা সোলাইমান মেম্বারের মেয়ে ছমিরা আক্তারকে। তার ভাই জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আলি আহমেদ পরপর দুইবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর পরাজয় নিশ্চিত করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। শুধু আনোয়ার নয়, পুরো জেলায় মাদক ব্যবসায়ী বা নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া পরিবারগুলো পদ ভাগিয়ে নিতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে। অনেক ক্ষেত্রে মাইম্যান বানাতে মরিয়া আওয়ামী লীগ নেতারাও।

এ অবস্থায় সংগঠনের সুনাম রক্ষার্থে মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পরিবারের কোনো সদস্য যেন পদে আসতে না পারে, সেদিক বিবেচনার অনুরোধ জানিয়েছেন তারা। এছাড়া ইয়াবার সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে উখিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মো. ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে। তার দুই ভাই ইয়াবা মামলার আসামি। সে নিজেও ছাত্রলীগ কর্মী হামলা মামলার আসামি। রায়হান নামে অপর প্রার্থীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা রয়েছে। নিজ বাড়ি থেকে অস্ত্রসহ র‌্যাব-১৫-এর হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন রায়হান। শিবিরের সাবেক দুই নেতা দেলোয়ার হোসাইন, মোজাম্মেল হকের ছোট ভাই আলমগীরও ছাত্রলীগের নেতা হতে মাঠে নেমেছে আটঘাট বেঁধে। অভিযোগ রয়েছে, তার পক্ষে জামায়াতের নেতারা বিপুল পরিমাণ টাকা ইনভেস্ট করছেন।

টেকনাফ উপজেলা ছাত্রলীগের পদ বাগিয়ে নিতে কোটি টাকার মিশন নিয়ে ঢাকায় অবস্থান করছেন অনেক শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী। পরিবারের ছোট ভাই কিংবা নিকটাত্মীয় যে কাউকে নেতা বানাতে এ মিশন বলে জানিয়েছেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।

টেকনাফ উপজেলার পদ পেতে মরিয়া হ্নীলার তারেক মোহাম্মদ নুর। তার মেজো বোনের বড় ছেলে সামসুদ্দিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী, নুরের অপর ভাগিনা ছোট ভাই আয়াছ উদ্দিন ৭০ হাজার পিস ইয়াবা নিয়ে আটক হয়ে কারাগারে আছেন। বড় বোনের অপর ছেলে ১০ হাজার পিস ইয়াবা নিয়ে আটক হয়ে কারাগারে আছেন। ইয়াবাসহ আটক হয়ে দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলেন হ্নীলার মো. আব্দুল্লাহ। কারামুক্ত হয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতার এক ভাইকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করছেন তিনি। তার ম্যানেজের তালিকায় কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকের কাছের লোকজনও। সায়েদ আমিন নিশান নামের একজন নেতা মরিয়া তার ভাই টেকনাফের শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী আব্দুল আমিন জিসান। এ জিসান বন্দুক যুদ্ধে নিহত ইয়াবা গডফাদার সাইফুল করিমের ব্যবসায়িক পার্টনার। তার চাচাতো ভাই নুরসাত স্বঘোষিত ইয়াবা ব্যবসায়ী। তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে আত্মসমর্পণ করেছিলেন।

কুতুবদিয়া উপজেলা বিএনপির অর্থ সম্পাদকের ছেলে রায়হান শরিফ, এক সন্তানের জনক হান্নান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হত্যাচেষ্টা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি তারেকসহ কয়েকজন মাদকাসক্ত অছাত্র। এছাড়া নারী নির্যাতন মামলায় আটকের পর কারামুক্ত হয়ে কক্সবাজার সদর উপজেলার সভাপতি হতে চান খায়রুল ইসলাম জিসান। ঈদগাঁও উপজেলায় সভাপতি পদ বাগিয়ে নিতে মরিয়া ইয়াবা মামলার আসামি সাদ্দামসহ আরও কয়কেজন মাদকসেবানকারী ও চিহ্নত চাঁদাবাজ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সাধারণ সম্পাদক মারুফ আদনান বলেন, কোনো মাদক মামলার আসামি, সেবনকারীদের ছাত্রলীগে স্থান দেওয়া হবে না। এছাড়া সংগঠনের গঠনতন্ত্র উপেক্ষা করে বিতর্কিত কাউকে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আনা হবে না। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এসএম সাদ্দাম হোসেন বলেন, কাউকে ছাত্রলীগের নেতা বানানোর আগে পদপ্রত্যাশীদের নাম-ঠিকানা স্থানীয় থানায় পাঠিয়ে যাচাই-বাছাই করা হবে। যাতে কমিটিতে কোনো মাদক মামলা, নারী নির্যাতন মামলার আসামি আসতে না পারে।