মির্জা ফখরুলকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান হানিফের

mahabubul alam hanif
ফাইল ছবি

‘বর্তমান বাংলাদেশের চেয়ে পাকিস্তান অনেক ভালো ছিল’- এমন বক্তব্যের জন্য বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে জাতির কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি।

তিনি বলেন, মির্জা ফখরুল এই কথা বলার মধ্যদিয়ে প্রমাণ করেছেন তিনি পাকিস্তানের আদর্শে বিশ্বাসী। এ কথার মধ্যদিয়ে তিনি ৩০ লাখ শহীদকে অপমানিত করেছেন, মুক্তিযোদ্ধাদের অপমানিত করেছেন। বাংলাদেশে পাকিস্তানের আদর্শের রাজনীতি করা যাবে না। নিঃশর্ত ক্ষমা চান, আর না হলে দেশের জনগণ আপনার পাকিস্তান প্রীতির জবাব রাজপথে দিবে।

সোমবার ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সূত্রাপুর থানা ও ৪২, ৪৩ ও ৪৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
বিএনপিকে মিথ্যাচার, অভিযোগের রাজনীতি বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বলেন, তাদের দলের নেতা-কর্মীরা নিজেরা মারামারি করে আওয়ামী লীগের দোষ দেয়। গত কয়েকদিনে চট্টগ্রাম, বরিশাল, গাজীপুর এবং আজকেও পল্টনে বিএনপির নেতা-কর্মীরা নিজেরা মারামারি করেছেন। মিথ্যাচার, অভিযোগের রাজনীতি বন্ধ করুন।

আওয়ামী লীগ কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে বাধা দেয় না উল্লেখ করে হানিফ বলেন, বিএনপি বলে আওয়ামী লীগ তাদের কর্মসূচিতে নাকি বাধা দেয়। আমরা কাউকে বাধা দেই না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোনো দলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা না দেয়ার জন্য। কেউ আন্দোলনের নামে রাজপথে জ্বালাও-পোড়াও করলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নিবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের দিকে কেউ চড়াও হলে আমাদের দায়িত্ব আছে। আপনি আক্রমণ করবেন আর আমাদের চুপচাপ বসে থাকা সমীচীন হবে না।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ হত্যা, খুনের রাজনীতি করে না। এসব অভ্যাস আপনাদের আছে। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি ক্ষমতায় ছিল। তাদের শাসনামলে আওয়ামী লীগের ২৬ হাজার নেতা-কর্মীকে প্রাণ দিতে হয়েছিল।

দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, বিএনপি নেতারা বনানীতে লাইট পোস্টের নিচে মোমবাতি প্রজ্বলন করে তামাশা করছেন। লাইটের আলোর নিচে হারিকেন জ্বালিয়ে নাটক করছেন। এসব তামাশা মানুষ পছন্দ করে না, উল্টো ক্ষুদ্ধ হয়। বনানীতে কেউ একজন জয় বাংলা স্লোগান দিয়েছিল। স্লোগান শুনে বিএনপি নেতারা হুড়মুড় করে দৌঁড় দিয়ে পড়ে আহত হয়েছেন। আসলে জয় বাংলা স্লোগান শুনলে তাদের হৃদয়ে কম্পন শুরু হয়। একাত্তরে রাজাকারদেরও কম্পন শুরু হতো। কোনো দলের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাধা দেয়ার দরকার নেই। তবে জয় বাংলা স্লোগান দিবেন। এতেই তারা ভয় পেয়ে পালাবে।

আওয়ামী লীগের এই সিনিয়র নেতা বলেন, দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও হত্যা মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত তারেক রহমান বিদেশে পলাতক। লন্ডনে বসে স্লোগান দিচ্ছে ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’। আমরা জানতে চাই বাংলাদেশকে আপনারা কোথায় নিতে চান? সম্প্রতি মির্জা ফখরুল সাহেবের এক বক্তব্যে প্রমাণ হয়েছে তারা বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানাতে চায়।

বাংলাদেশকে পাকিস্তানের ফেডারেল স্টেট বানানোর জন্য বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার হত্যা করা হয়েছে উল্লেখ করে হানিফ বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর খুনীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে পুরস্কৃত করেছে। পাকিস্তানের সৈনিকদের পুনর্বাসন করেছিল। সেই বিএনপির নেতারাও পাকিস্তানি ভাবাদর্শের অনুসারী, আদর্শে বিশ্বাসী।

আওয়ামী লীগের এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, তারেক রহমানের সীমাহীন দুর্নীতির কারণে বাংলাদেশ ৫ বার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এখন তারাই সরকারের দুর্নীতি খুঁজে বেড়ায়। যাদের শীর্ষ নেতা এতিমের টাকা আত্মসাতের মামলায় জেলে আছেন। শেখ হাসিনার দয়া অনুকম্পায় বাসায় বসে চিকিৎসা নিতে পারছেন খালেদা জিয়া। তবুও তাদের লজ্জা হয় না।

কোনো ষড়যন্ত্র করে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করা যাবে না উল্লেখ করে হানিফ বলেন, শেখ হাসিনা যতদিন রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকবেন, কোনো অপশক্তি নেই তার কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নেয়। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমরা ২০২৪ সালের ৮ জানুয়ারির নির্বাচনে জনগণের সমর্থন নিয়ে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করতে চাই।

ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধন করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মন্নাফি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি, আইন সম্পাদক এডভোকেট কাজী নজিবুল্লাহ হিরু ও দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া।

সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির।