দুই ভাইপোর বিরুদ্ধে হত্যা মামলার স্বাক্ষী চাচা!

যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান মুন্নার সমর্থক আলমগীর মন্ডল ওরফে আলম (৪৫) হত্যা মামলায় মোজাহিদুল ইসলাম লাল্টু স্বাক্ষী হওয়ায় এলাকাবাসী হতবাক হয়েছেন। তিনি যশোর শহরের পালবাড়ি এলাকায় বসবাস করেও স্বাক্ষী হয়েছেন। আসামী পক্ষের দাবি, লাল্টুর টার্গেট মিথ্যা স্বাক্ষীর মাধ্যমে আপন দুই ভাইপো মেহেদি হাসান রুনু ও মাসুদ হাসান রানাকে ফাঁসিয়ে দিয়ে পারিবারিক বিরোধের বদলা নেয়া। তাকে ( লাল্টু) ইন্ধন দিচ্ছে সাবেক চেয়ারম্যান মুন্না।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আলম মন্ডল হত্যা মামলায় নিরীহ অনেক মানুষকে ফাঁসানো হয়েছে। ঘটনাস্থলে না থেকেও চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দাউদ হোসেনের ছেলে তানভীর হাসান রক্সি, যুবলীগ নেতা মেহেদি হাসান রুনু, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামান বাদলসহ অনেকেই হয়েছেন হত্যা মামলার আসামি। অথচ প্রকৃত খুনিদের রক্ষা করে মামলায় আসামি করা হয়নি। কিন্তু হত্যার আগে আলমকে ধরে নিয়ে যাওয়ার ভিডিও ফাঁস হওয়ার পর ঘটনার সাথে জড়িতরা আলোচনায় রয়েছে। স্থানীয়রা আরও জানান, আলম হত্যা মামলায় মোজাহিদুল ইসলাম লাল্টু স্বাক্ষী হওয়াতে নানা আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। তিনি (লাল্টু) যশোর শহরের পালবাড়ি এলাকায় স্ব পরিবারে বসবাস করেন। আর আলম হত্যার ঘটনাস্থল হলো চুড়ামনকাটি গ্রামের কাজীর বাগানের পুকুর পাড়। আলম হত্যার ঘটনায় কারা জড়িত বা দুর্বৃত্তরা তাকে কখন কিভাবে ধরে এনেছিলো তা জানেন না লাল্টু। তারপরেও হত্যা মামলার দুই নম্বর স্বাক্ষী হয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুই জন জানান, রুনু ও রানা হলো লাল্টুর আপন ভাইপো। উভয়ের মধ্যে পারিবারিক বিরোধ রয়েছে। তাদের শায়েস্তা করার জন্য লাল্টু বিগত দিনে সাবেক চেয়ারম্যান মুন্নার সাথে হাত মেলায়। তাদের পরিকল্পনায় রুনুকে হত্যার চেষ্টাসহ একাধিক মিথ্যা মামলায়ও ফাঁসানো হয়েছে। সর্বশেষ এবার রুনু ও রানাকে আলম হত্যা মামলায় ফাঁসানো হলো। আপন দুই ভাইপোকে আসামি করা মামলায় চাচা লাল্টু স্বাক্ষী হয়েছেন। অথচ ঘটনার সময় লাল্টু যশোর শহরের পালবাড়ি এলাকার ভাড়া বাড়িতে ছিলেন।

রুনু ও রানার মা রুবি বেগম জানান, আমার ছেলেদের বিরুদ্ধে লাল্টুর ষড়যন্ত্র দীর্ঘদিনের। বিগত দিনে একাধিকবার হত্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকিও দিয়েছে। সাবেক চেয়ারম্যান মুন্নার অপরাধ জগত নিয়ন্ত্রণকারী আলম মন্ডল খুন হওয়ার পর সেই সুযোগ কাজে লাগালো লাল্টু। ঘটনার সাথে জড়িত না থেকেও আমার দুই ছেলে রুনু ও রানা আলম হত্যা মামলার আসামি হলো। আর সেই মামলার স্বাক্ষী হয়েছে লাল্টু। এতে তারা অবাক হয়েছেন।

রুবি বেগম আরও জানান, আব্দুল মান্নান মুন্না চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে আলমের পাশাপাশি লাল্টু নানা অপরাধ কর্মকান্ডে জড়িত ছিলেন। গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মুন্নার পরাজয় হওয়ার পর জনরোষের ভয়েে লাল্টু চুড়ামনকাটি এলাকায় যাতায়াত বন্ধ করে দেন । স্ব-পরিবারে পালবাড়ির ভাড়াবাড়িতে থাকেন। ঘটনা সম্পর্কে কিছু না জেনেও পারিবারিক বিরোধের বদলা নিতে হত্যা মামলার স্বাক্ষী হয়েছেন।

রানা ও রুনুর পিতা মোফাজ্জেল হোসেন মন্ডল জানান, সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান মুন্নার সাথে আমাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল। মুন্নার নানা অপকর্মের প্রতিবাদ করে আমার পরিবার তার প্রধান শত্রুতে পরিণত হয়। তার ইশারায় আমাদের নির্দোষ ছেলেদের নামে একাধিক মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। এমনকি ছোট ছেলেকে রুনুকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। মোফাজ্জেল হোসেন আরও জানান, পারিবারিক বিরোধের জেরে আমার শত্রু পক্ষ মুন্নার সাথে হাত মেলায় আমার ভাই মোজাহিদুল ইসলাম লাল্টু। এরপর তারা দুইজন আমার পরিবারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে থাকে। মুন্নার ক্যাডার আলম খুনের মামলায় আমার দুই ছেলেকে আসামি করা হয়েছে। আর আমার ছেলেদের ওপর প্রতিশোধ নিতে এই মামলার স্বাক্ষী হয়েছেন লাল্টু। পুলিশ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে মোফাজ্জল হোসেনের দাবি, আলম মন্ডল হত্যা মামলা সঠিকভাবে তদন্ত করে প্রকৃত খুনিদের চিহ্নিত করা হোক৷

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই সালাউদ্দিন জানান, চুড়ামনকাটি আলম মন্ডল হত্যা মামলাটি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে তদন্ত করা হচ্ছে। নিহতের পরিবার ও মামলার স্বাক্ষীদের সাথে নিয়মিত কথা বলছেন।

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার দুপুর দেড়টার দিকে চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান মুন্নার সমর্থক একাধিক মামলার আসামি আলম মন্ডলকে পিটিয়ে জখম করে দুর্বৃত্তরা। পরে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেল ৪ টার দিকে তার মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় নিহতের স্ত্রী রোকসানা ১১ জনকে আসামি করে কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।