যশোরে ২০ মাসে ২০৬১ মামলার রায় প্রদান,আস্থা বেড়েছে বিচার প্রত্যাশীদের

যশোরের নির্বাহী আদালত মামলা নিষ্পত্তিতে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। গত ২০ মাসে এই আদালতে দুই হাজার ৬১টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এসব মামলায় রায় পেয়েছেন ১ হাজার ৯৯৫জন বিচার প্রার্থী। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এসব মামলা নিষ্পত্তি হওয়ায় বিচার প্রত্যাশীরা যেমন খুশি, তেমনি খুশি এসব মামলা পরিচালনার দায়িত্বে থাকা আইনজীবীরা।
এদিকে যশোরের নির্বাহী আদালতে মামলার জট কমে যাওয়ায় আইন আদালতের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থাও বেড়েছে বহুগুনে।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, ২০২১ সালের জানুয়ারিতে যশোরের নির্বাহী আদালতে পেন্ডিং মামলার সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৬২২টি। ওই মাসেই এই কোর্টে মামলা রেকর্ড হয় ১৯৫টি। গত মাসের ২৭ তারিখে যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট হিসেবে যোগদান করেন কাজী সায়েমুজ্জামান। যোগদানের পর পরই তিনি মামলা নিষ্পত্তিতে গুরুত্বারোপ করে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা প্রদান করেন। এ কারনে চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যশোরের নির্বাহী আদালত ২ হাজার ৬১টি মামলা নিষ্পত্তি করে রেকর্ড গড়েছে। এসব মামলার রায় পেয়ে যাপরনায় খুশি বিচার প্রার্থী সাধারণ মানুষ। এর আগে বছরের পর বছর ঘুরেও মামলা রায় না পেয়ে হতাশ ছিলেন এই আদালতের বিচার প্রার্থীরা।
২০১৯ সালে যশোর সদর উপজেলার কচুয়া ইউনিয়নের মুনসেফপুর গ্রামের মোস্তফা সরদারের জমি সংক্রান্ত এক মামলায় নির্বাহী আদালত ১৪৪ ধারা জারি করেন। মোস্তফা সরদার জানান, বছরের পর বছর ঘুরেও মামলার কোন অগ্রগতি হচ্ছিলো না। সর্বশেষ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মো. সায়েমুজ্জামান যোগদানের পর মামলার দীর্ঘসূত্রতার অবসান ঘটে।
তিনি বলেন, ‘২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ২৪ জুলাইয়ের মধ্যে মাত্র তিনটি ধার্য্য তারিখে মামলার নিস্পত্তি করে দেন তিনি। এতে আমি দীর্ঘদিনের বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি পাই এবং এই বিচারকের কারনে এটা সম্ভব হওয়ায় আমি সন্তষ্ট। সব দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা যদি তার মতো দ্রুত মামলার নিস্পত্তির উদ্যোগ নেন এবং পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি দিতেন তাহলে বিচারালয়ে জনভোগান্তি অনেক কমে যেত।’
মোস্তফা সরদারের মতো যশোরের নির্বাহী আদালত থেকে দ্রুততম সময়ে মামলার রায় পেয়েছেন এক হাজার ৯৫৮ জন বিচার প্রত্যাশী।
নির্বাহী আদালত সুত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসের ২৭ তারিখে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে যশোরে যোগদান করেন কাজী সায়েমুজ্জামান। এসময় ওই আদালতে ১ হাজার ৬২২ টি মামলা বিচারাধীন ছিলো। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে চলতি বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২ হাজার ৩৬৫ টি নতুন মামলা দায়ের হয়েছে এই আদালতে। এসব মামলার ভিতর থেকে এই সময়কালের মধ্যে ২ হাজার ১২টি মামলা নিস্পত্তি করেছেন। এক মাসে সর্বাধিক ২০৫টি মামলার রায় দিয়েছেন এই অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। বর্তমানে এই আদালতে বিচারাধীন রয়েছে এক হাজার ৯৪৯ টি মামলা।
সেবা গ্রহীতারা জানান, নির্বাহী আদালতে চরম বিপদে পড়েই আশ্রয় নিতে হয়। বিশেষ করে আকস্মিক জমির অবৈধ দখল রোধে ১৪৪ ধারা জারির জন্য এই আদালতের কোন বিকল্প নেই। ইতিপূর্বে এ আদালতে একটি মামলা দায়ের করে বিবাদমান জমিতে স্থিতিতাদেশের উপর রায় পেতে মাসের পর মাস এমনকি বছরের পর বছর ঘুরতে হয়েছে।
সেবাগ্রহীতারা আরও জানান, দেরির বিষয়ে আইনজীবীরা আদালতের বিভিন্ন কারণ তাদের কাছে উল্লেখ করতেন।
ভুক্তভোগিরা আরও জানান, গেল দুই বছর ধরে ১৪৪, ১৪৫, ৬২ ধারার মামলাগুলো প্রচুর পরিমানে শুনানি হয়েছে। সেই সাথে রায়ও পাওয়া গেছে। বিশেষ করে রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি মিলছে। ফলে আদেশ নিয়ে কোন জটিলতা বা প্রতিপক্ষের ছল চাতুরি করার সুযোগ নষ্ট হয়েছে।
যশোরের নির্বাহী আদালতের গত দুই বছরে সর্বাধীক মামলা নিস্পত্তির নজির গড়েছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী সায়েমুজ্জামান।
আদালত সুত্রে জানা গেছে, তার আদালতে গত বছরে সর্বোচ্চ ৯০৭টি মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ৭৯ টি, ফেব্রুয়ারি মাসে ৬৩ টি, মার্চ মাসে ১৪৮ টি, এপ্রিল মাসে ১১৭ টি, মে মাসে ১৬৬ টি, জুন মাসে ২০৫ টি, জুলাই মাসে ১৩৯ টি আগস্ট মাসে ১১১ টি, সেপ্টেম্বর মাসে ১৪৪ টি মামলা নিস্পত্তি করেছেন।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মোঃ সায়েমুজ্জামান বলেন, ‘বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশক্রমে এই আদালতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে মামলা নিস্পত্তির উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আমি সব মামলা প্রতিদিনের টা প্রতিদিন শুনেই নিস্পত্তি করতে পরবর্তি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে চাই। যেন সেবা প্রার্থীরা এই আদালতে হয়রানির শিকার না হন। আমি এসব বিষয়ে সোচ্চার ছিলাম। একারনেই আমি উদ্যোগ নিয়ে এতগুলো মামলা নিস্পত্তি করেছি এবং আমার সময় যতগুলো মামলা দায়ের করা হয়েছে তার সবগুলো বিচার জনগণ পেয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৯৮ ধারার মামলাগুলো অনেক আগে নির্বাহী আদালতের আওতাধীন ছিল। বিচার বিভাগ পৃথক হওয়ার পর সেগুলো জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এখতিয়ারভূক্ত হয়। যে কারণে অনেক মামলা এখানে ঝুলে ছিলো। সেই মামলাগুলো আমি হাইকোর্টের রায়ের বরাত দিয়ে নিস্পত্তি করেছি।
তিনি বলেন, মামলার দিন তারিখের তথ্য জানার জন্য বিচার প্রার্থীদের নানা হয়রানির শিকার হতে হতো। আমি দায়িত্ব নেয়ার পর আদালতের সম্মুখে আগামী এক মাসের কোন মামলার কোন তারিখে শুনানি হবে তা প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেছি। এতে বিচার প্রার্থীরা অনেক উপকৃত হয়েছেন। কোন অজুহাতে কেউ যাতে বিচার প্রার্থীদের ঘুরাতে না পারে তার জন্য শুনানি ও রায় প্রদানের কাজ সহজ করেছি। আমার চেষ্টা থাকবে যাতে কোন বিচার প্রার্থী আমার আদালতে এসে হয়রানির শিকার না হন।