আ’লীগের জাতীয় কাউন্সিল ঘিরে তোড়জোড়

a.lig-logo

জাতীয় কাউন্সিলের দিনক্ষণ নির্ধারণ করতে বৈঠকে বসছে আওয়ামী লীগ। আগামী ২৮ অক্টোবর শুক্রবার বিকেল ৪টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে এই বৈঠক ডাকা হয়েছে।

আগামী ২১-২২ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের তিন বছর মেয়াদি বর্তমান কার্যনির্বাহী সংসদের মেয়াদ শেষ হবে। তবে উপজেলা এবং জেলা পর্যায়ে সম্মেলন কার্যক্রম ছাড়া জাতীয় কাউন্সিল আয়োজনে এখন পর্যন্ত উল্লেখ করার মতো তেমন কোনো প্রস্তুতি শুরু হয়নি। এ অবস্থায় দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কার্যনির্বাহী সংসদের নেতারা বৈঠকে বসছেন।

সংশ্নিষ্ট নেতারা জানিয়েছেন, এ বৈঠকের মাধ্যমে ২২তম জাতীয় কাউন্সিল উপলক্ষে কমপক্ষে ১০টি উপকমিটি গঠনের কার্যক্রম শুরু হবে। এর মধ্যে প্রথা অনুযায়ী, জাতীয় কাউন্সিল প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক হবেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। সদস্য সচিব হবেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এ ছাড়া ঘোষণাপত্র, দপ্তর, প্রচার-প্রকাশনা, স্বেচ্ছাসেবক ও শৃঙ্খলা, মঞ্চ ও সাজসজ্জা, গঠনতন্ত্র, সংস্কৃতি, খাদ্য এবং স্বাস্থ্যবিষয়ক উপকমিটি গঠনের প্রস্তুতি রয়েছে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় এই বৈঠকে আগামী ৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবস, ১০ নভেম্বর শহীদ নূর হোসেন দিবস, ২৭ নভেম্বর শহীদ ডা. শামসুল আলম খান মিলন দিবস, ৫ ডিসেম্বর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী, ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস এবং ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। এ ছাড়া দেশের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হবে বলে বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে জানানো হয়েছে।

এদিকে দলের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বমন্দা পরিস্থিতিতে বিভিন্ন সময়ে অর্থনৈতিক সাশ্রয়ের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন। এ কারণে অর্থ সাশ্রয়ের দিকে খেয়াল রেখে জাতীয় কাউন্সিলে বর্ণাঢ্য আয়োজন না করার তাগিদ দিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। অর্থাৎ কম খরচে জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। তেমন একটি সাজসজ্জা, জাঁকজমক লাইটিং কিংবা অন্য কোনো ধরনের বর্ণাঢ্য আয়োজনের ব্যবস্থা থাকবে না। তবে রেকর্ড সংখ্যক কাউন্সিলর-ডেলিগেটের কাউন্সিলে উপস্থিত রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই কাউন্সিল আয়োজন করা হবে।

এদিকে দলের বেশ কয়েকজন নীতিনির্ধারক নেতা সমকালকে বলেছেন, জাতীয় কাউন্সিলের আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ সাংগঠনিক জেলাসহ উপজেলা, থানা, পৌরসভা, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায়ের সম্মেলন সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত রয়েছে। এরই মধ্যে দেশের প্রায় সব সাংগঠনিক উপজেলা ও থানায় সম্মেলন কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। জেলা সম্মেলনের কার্যক্রমও প্রায় গুছিয়ে আনা হয়েছে। বেশ কয়েকটি জেলায় তৃণমূল নেতাদের উপস্থিতিতে বর্ধিত সভার পাশাপাশি প্রতিনিধি সম্মেলন হয়েছে।
তবে তিন বছরের মেয়াদ থাকায় ২৯টি জেলায় সম্মেলনের প্রয়োজন হবে না। এই জেলাগুলো হচ্ছে- ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর, রংপুর মহানগর, কুড়িগ্রাম, জয়পুরহাট, বগুড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, রাজশাহী মহানগর, কুষ্টিয়া, যশোর, নড়াইল, বাগেরহাট, খুলনা, খুলনা মহানগর, সাতক্ষীরা, পটুয়াখালী, বরিশাল মহানগর, ঝালকাঠি, সিলেট, সিলেট মহানগর, হবিগঞ্জ, কুমিল্লা উত্তর, ফেনী, চট্টগ্রাম উত্তর, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান।

৩৩টি জেলার মেয়াদ ফুরিয়ে গেছে। জাতীয় কাউন্সিলের আগে এসব জেলায় সম্মেলনের প্রস্তুতি রয়েছে। জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে- দিনাজপুর, গাইবান্ধা, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, মাগুরা, বরগুনা, বরিশাল, পিরোজপুর, জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ মহানগর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ, ঢাকা মহানগর উত্তর, গাজীপুর মহানগর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা মহানগর, কুমিল্লা দক্ষিণ, চাঁদপুর, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম মহানগর, চট্টগ্রাম দক্ষিণ ও কক্সবাজার।

দলের বর্তমান কার্যনির্বাহী সংসদের মেয়াদকালে এ পর্যন্ত ১২টি জেলায় সম্মেলন হয়েছে। এই জেলাগুলো হচ্ছে- পঞ্চগড়, নওগাঁ, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, মেহেরপুর, ভোলা, গাজীপুর, নরসিংদী, রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও রাঙামাটি। চলতি মাসেই কয়েকটি জেলায় সম্মেলন হবে। এর মধ্যে আগামী ২৩ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ, ২৪ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ মহানগর ও ২৯ অক্টোবর ঢাকা জেলা। ৬ নভেম্বর টাঙ্গাইল জেলার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পুরোনো বাণিজ্য মেলা মাঠে অনুষ্ঠেয় ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তিনি থাকছেন না।