বিএনপির গণসমাবেশ: বরিশালে দু’দিনের ধর্মঘট ঘোষণা বাস মালিকদের

ফাইল ফটো

বাস মালিকেরা আগামী ৪ ও ৫ নভেম্বর বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় ধর্মঘট আহ্বান করেছেন। মহাসড়কে তিন চাকার যানবহনসহ অনুমোদহীন নসিমন-করিমন ও অন্যান্য যানবহন চলাচল বন্ধের দাবিতে তারা ধর্মঘট ডেকেছেন। আগামী ৫ নভেম্বর বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ। এতে ব্যাপক সমাগম ঠেকাতে চট্রগ্রাম-ময়মনসিংহ-খুলনার মতো বরিশালেও সব ধরনের যানবহন বন্ধ করে দেওয়া হবে এমন আশঙ্কা করছিলেন বিএনপি নেতারা। আজ বুধবার বাস ধর্মঘট ঘোষণার মধ্য দিয়ে তাদের আশঙ্কার সত্যতা মিলল। জানা গেছে, ওই দুদিন ট্রাক, লঞ্চ এমনকি খেয়াঘাটও বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে। এমন প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।

জেলা বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি গোলাম মাসরেক বাবলু ও বরিশাল-পটুয়াখালী বাস মালিক সমিতির সভাপতি কাওছার হোসেন শিপন সমকালকে বলেন, তাদের ধর্মঘটের সঙ্গে রাজনৈতিক কোনো বিষয় জড়িত নয়। দাবি মেনে নেওয়ার জন্য তারা ৩ নভেম্বর পর্যন্ত প্রশাসনকে আল্টিমেটাম দিয়েছেন। এ সময়ের মধ্যে দাবি না মানা হলে ৪ ও ৫ নভেম্বর বিভাগের ছয় জেলায় একযোগে বাস চলাচল বন্ধ রাখা হবে।

গোলাম মাসরেক বাবলু বলেন, ‘ফরিদপুর ও মাদারীপুর জেলার বাস মালিকদের সঙ্গেও আলোচনা চলছে। তাদের এ ধর্মঘটের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সম্ভবনা আছে।’

বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার বরাবর দেওয়া জেলা বাস মালিক গ্রুপের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২০ সালের ২৯ মে সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সভায় ২২টি মহাসড়কে তিন চাকার যানবহন ও ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হচ্ছে না। তিন চাকার যানবহন ও ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল দিন দিন বাড়ছে। পদ্মা সেতু চালুর পর যানবহন বৃদ্ধি পাওয়ায় মহাসড়ক আরও ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় ৩ নভেম্বরের মধ্যে তিন চাকার যানবাহন ও ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল বন্ধ করা না হলে ৪ ও ৫ নভেম্বর বিভাগের ছয় জেলায় বাস ধর্মঘট পালন করা হবে।

ধর্মঘটের জন্য ৪ ও ৫ নভেম্বর কেন বেছে নেওয়া হলো এমন প্রশ্নের জবাবে বাস মালিক নেতা গোলাম মাসরেক বাবলু বলেন, ‘অন্যান্য জেলার সঙ্গে আলোচনা করে ধর্মঘটের তারিখ চূড়ান্ত করতে কিছুটা সময় লেগেছে।’

বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার আমিন উল আহসান বলেন, ‘ধর্মঘটের বিষয়ে বাস মালিকদের একটি চিঠি পেয়েছি। তাদের দাবিগুলো তাৎক্ষণিক সমাধানযোগ্য নয়। দাবিগুলো যাতে দ্রুত বাস্তবায়ন হয় তার ব্যবস্থা নেব।’

এদিকে বাস ধর্মঘট আহ্বানের পর খুলনার মতো লঞ্চ-ট্রাক এমনকি খেয়া নৌকাও বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে বলে বরিশাল নগরে গুঞ্জন চলছে। তবে এই যানবহন সংশ্লিষ্ট সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, ধর্মঘটে যাওয়াও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

লঞ্চ মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম বলেন, ‘লঞ্চ চলাচল বন্ধ হবে এমন কোনো সিদ্ধান্ত আমাদের নেই। স্থানীয়ভাবে সিদ্ধান্ত হলেও সবার আগে আমি জানতাম।’

লঞ্চ লেবার অ্যাশোসিয়েনের জেলা সভাপতি হাশেম মাস্টার বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে আমাদের কোনো দাবি-দাওয়া নেই। তবে যদি খুলনার মতো ওপর থেকে বন্ধের কোনো নির্দেশনা আসে তাহলে লঞ্চ বন্ধ রাখব।’

বরিশাল জেলা ট্রাক মালিক সমিতির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বাস ধর্মঘট আহ্বানের পর ট্রাক মালিকেরা কী করবেন, এ নিতে তারা ভাবছেন। বিষয়টি নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতার সঙ্গে আলোচনার পর তারা সিদ্ধান্ত নেবেন।’

বাস ধর্মঘট আহ্বান এবং সম্ভাব্য অন্যান্য ধর্মঘট প্রসঙ্গে বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক সমকালকে বলেন, ‘চট্রগ্রাম, ময়মনসিংহ ও খুলনার অভিজ্ঞতা অনুযায়ী বরিশাল বিভাগের বিএনপির নেতাকর্মীরা মানসিকভাবে আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। কোনো ধর্মঘটই বরিশাল নগরমুখী জনতার স্রোত ঠেকাতে পারবে না। ৫ নভেম্বর জনতাই বরিশাল নগর অচল করে দেবে।’

মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মীর জাহিদুল কবির বলেন, ‘গণসমাবেশ করার জন্য বেলর্স পার্ক (বঙ্গবন্ধু উদ্যান) ভেন্যু চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রশাসন থেকে কিছু জানানো হয়নি।’