গণসমাবেশ সফলে বরিশাল বিএনপির নানা কৌশল

bnp logo

বরিশাল বিভাগীয় গণসমাবেশ সফল করতে নানা কৌশলে হাঁটছে বিএনপি। এ জন্য এই বিভাগের চারটি জেলায় প্রস্তুতি ও মতবিনিময় সভা করছেন দলের নেতাকর্মীরা। তাঁরা যে কোনো উপায়ে গণসমাবেশ সফলে বদ্ধপরিকর। আর এ গণসমাবেশে বড় জমায়েত ঠেকাতে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা ও রংপুরের ধারাবাহিকতায় ৪ ও ৫ নভেম্বর বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় বাস ধর্মঘট ডেকেছে বাস মালিক গ্রুপ।

আগামী ৫ নভেম্বর বরিশালে অনুষ্ঠিত হবে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ। নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে (বেলস পার্ক) গণসমাবেশ করার জন্য গত রোববার জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করা হয়েছে। বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুক গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, আমরা মহানগর পুলিশ কমিশনারের কাছেও বৃহস্পতিবার আবেদন করেছি। এখন পর্যন্ত লিখিত বা মৌখিক কোনো অনুমতি পাইনি। তবে আশা করি আমরা বেলস পার্কে গণসমাবেশ করার অনুমতি পাব।

বরিশাল বিভাগজুড়ে ৪৮ ঘণ্টার বাস ধর্মঘটে বিএনপি ‘কোন কৌশলে’ এগোবে তা জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বরিশালে গণসমাবেশ আয়োজক কমিটির প্রধান উপদেষ্টা বেগম সেলিমা রহমান সমকালকে বলেন, ‘নেতাকর্মীরা সর্বশক্তি ও কৌশল নিয়ে গণসমাবেশ সফল করবে। আমরা জানি, আওয়ামী লীগ সরকার আমাদের বড় জমায়েত ঠেকাতে সব ধরনের অপকৌশল বেছে নেবে। আমরাও প্রস্তুত। আমরা সরকারের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছি, সব বাধা অতিক্রম করব। একবার যদি জনস্রোত সৃষ্টি হয় তা কেউ ঠেকাতে পারে না।’

তিনি আরও বলেন, সরকার আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করতে হামলা করছে, নির্যাতন চালাচ্ছে, গুলি করছে, হত্যা করছে। কিন্তু কোনোভাবেই আমাদের ঠেকাতে পারছে না। জনগণ মাঠে নেমে গেছে। বিএনপির গণসমাবেশগুলোতে মানুষের ঢল ঠেকাতে না পেরে সরকার অসহায় হয়ে পড়েছে। গণবিচ্ছিন্ন অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকার তাই আরও বেশি হিংস্র হয়ে উঠেছে।

এদিকে, গতকাল সন্ধ্যায় বরিশাল বিভাগীয় গণসমাবেশের শৃঙ্খলা কমিটির এক সভা বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদের কলিবাড়ি সড়কের বাসভবনে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় সেলিমা রহমান বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের কোনো উস্কানিতে পা দেওয়া যাবে না। ৫ নভেম্বরের গণসমাবেশ বানচাল করতে সরকারি দল প্রশাসনের মাধ্যমে হয়রানি করবে, নানা রকম ফাঁদ পাতবে। কোনো ফাঁদেই পা দিয়ে নিজেদের ক্ষতি করা যাবে না। শান্তিপূর্ণভাবে আমরা গণসমাবেশ সফল করব।

 

এ ছাড়া গতকাল নগরের ৮টি ওয়ার্ডে কর্মিসভা করেছেন মহানগর বিএনপির নেতারা। এসব কর্মিসভায় বক্তারা মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড থেকে যেন কমপক্ষে ৫০ হাজার নেতাকর্মী-সমর্থক গণসমাবেশে অংশ নেয়- সেজন্য প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি নিতে ওয়ার্ড নেতাদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

এদিকে, পিরোজপুর শহরের বাইপাস সড়কের একটি কমিউনিটি সেন্টারে বৃহস্পতিবার বিকেলে অনুষ্ঠিত হয় জেলা বিএনপির প্রস্তুতি সভা। পিরোজপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলমগীর হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রস্তুতি সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান। প্রস্তুতি সভায় জেলার মাঠ নেতারা বলেন, সড়কপথে ধর্মঘট ডাকায় গণসমাবেশে অংশ নিতে পিরোজপুরের তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা কাউখালী ও স্বরূপকাঠি হয়ে বরিশাল যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এই দুই উপজেলার একাধিক নেতা সভায় বলেন, স্বরূপকাঠি ও কাউখালীর দুই শতাধিক ট্রলার ভাড়া করা হয়েছে গণসমাবেশে যাওয়ার জন্য।

বরিশালের পাশের জেলা ঝালকাঠি। এই জেলার সদর ও নলছিটি উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন বরিশাল নগরীর সীমান্তবর্তী। এই ১০ ইউনিয়ন থেকে কমপক্ষে ১০ হাজার কর্মী-সমর্থক হেঁটে গণসমাবেশে যাবেন বলে দাবি করেছেন ঝালকাঠি বিএনপির সদস্য সচিব মো. শাহদত হোসেন। তিনি বলেন, ঝালকাঠি তৃণমূলের নেতাকর্মীরা গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে উজ্জীবিত। প্রয়োজনে আমরা রাতে সমাবেশস্থলে যাব।

ভোলার সঙ্গে বরিশালের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ নেই। তাই এ জেলার কর্মী-সমর্থকরা ছোট নৌযানে সমাবেশে আসবেন বলে জানিয়েছেন ভোলা জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম নবী আলমগীর। তিনি বলেন, যদি লঞ্চ বন্ধ করে দেওয়া হয় তাহলে আমরা ছোট ট্রলারে করে গণসমাবেশে যাব। আমাদের আটকে রাখা যাবে না।

বরগুনা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব তারিকুজ্জামান টিটু বলেন, বরগুনার মানুষ সমাবেশে যেতে চান। আমরা জানি হয়রানির মাত্রা আরও বাড়বে। প্রয়োজনে আমরা হেঁটে হলেও যাব।

পটুয়াখালী বিএনপির আহ্বায়ক আবদুর রশিদ চুন্নু মিয়া বলেন, দেশকে রক্ষার জন্য আমাদের জীবন বাজি রেখে গণসমাবেশ সফল করতেই হবে।

বিএনপির গণসমাবেশের আগে বাস ধর্মঘট ডাকা প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল বিভাগ) অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন সমকালকে বলেন, কোনো রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশ বাধাগ্রস্ত করার অভ্যাস আওয়ামী লীগের নেই। বাস মালিকরা তাদের নিজস্ব দাবি আদায়ে ধর্মঘট ডেকেছেন বলে শুনেছি। এই ধর্মঘটের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি আরও বলেন, অতীতে আন্দোলনের নামে বিএনপি আগুন সন্ত্রাস করেছে, শত শত বাস জ্বালিয়ে দিয়েছে। বাসচালকদের জীবিত পুড়িয়ে মেরেছে। সেসব কারণে হয়তো জীবন ও সম্পদ রক্ষায় বাস মালিকরা ধর্মঘট ডাকতে পারেন।