হরিণাকুন্ডুর প্রত্যন্ত গ্রামে গাছে গাছে ঝুলবে পাখির জন্য নিরাপদ মাটির হাড়ি

প্রভাবে প্রকৃতি ও কৃষি বিপর্যস্ত, ঠিক তখনই হরিণাকুন্ডুর প্রত্যন্ত গ্রামে পাখির অভয়াশ্রম সৃষ্টির মাধ্যমে তাদের নিরাপদ আশ্রয় গড়ে উঠছে। সরকারি কয়েকটি বিভাগের কর্মকর্তারা এতে সহযোগিতা করছেন, উৎসাহ দিচ্ছেন মহতি এ কাজে। হরিণাকুন্ডুর কাপাসহাটিয়া ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামে শুরু হয়েছে এ কর্মযজ্ঞ।হরিণাকুন্ডুর শাখারিদহ বাজারে অবস্থিত হিড বাংলাদেশ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবি প্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখা গেল চারিদিকে যখন প্রাখি শিকারসহ নানাবিধ অরাজক কর্মকান্ড চলছে, রাসায়নিক সার ও কীটনাশকসহ বিভিন্ন বিষ যোগ হচ্ছে মাটিতে আর তার পরা ২৪-২৫জন স্কুলছাত্র দাড়িয়ে আছে বিশেষভাবে তৈরি মাটির ভাড় বা পাত্র হাতে নিয়ে।

তারা অপেক্ষায় আছে নির্দেশণা পেলেই ছুটে যাবে নির্ধারিত গ্রামে। স্কুলছাত্র লিংকন মিয়া, ইমরান হোসেন, আসিফ হোসেন, মিহাব আলি, স¤্রাট ও লিমন হোসেন জানালো, মাটির তৈরি পাত্রগুলো তারা ঝুলিয়ে দেবে এলাকার গাছে গাছে। তারা জানালো, শাখারিদহ, বাসুদেবপুর, তালবাড়িয়া, চাঁদপুর এবয় কণ্যাদহ গ্রামে প্রাথমিকভাবে কাজ শুরু করেছে। ওইসব গ্রামের কোন মানুষ বা বহিরাগত যেন কোনপ্রকারে পাশি শিকার করতে না পারে যেজন্য তারা সজাগ থাকবে। পাশাপাশি গ্রামের সব মানুষ বিশেষ করে কোমলমতি শিশুরা যেন পাখি শিকারের মত কোন কাজ না করে, সেজন্য তারা মায়েদের সাথে বসবে নিয়মিত। বণ্যপ্রাণি শিকার বন্ধ করাও তাদের কমূসূচির অংশ। ওইসব গ্রামের নেতৃস্থানীয়রাও যাতে তাদের এ কাজে সহযোগিতা করেন, সেজন্য তাদের পরামর্শ নিয়েই চলবে সার্বিক কর্মকান্ড- জানালো শিক্ষার্থীরা।

এলাকার বয়স্ক কৃষক আব্দুর রশিদ ও ব্যবসায়ি আব্দুর রহিম জানালেন, পাখির নিরাপদ আশ্রয় সৃষ্টির এ মহতি উদ্যোগের কথা এলাকার মানুষের মুখেমুখে, সবাই এতে খুশি এজন্য যে, একসময় পাখির কলকাকলিত মুখরিত গ্রামবাংলা এখন প্রায় পাখিহীন। ঘুঘু, টিয়ে, হরিয়ল, ফিঙে, কাকতুয়া, কানাকুয়া ইত্যাদি পাখির সৌন্দর্যে একসময় মন ভারে যেত, এখন তা প্রায় অতীত। যদি সেসব আবার ফিরে আসে, প্রাণ ফিরে পাবে রবি ঠাকুর, কাজি নজরুল আর শেখ মুজিবের বাংলা।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের ঝিনাইদহ জেলা উপপরিচালক আব্দুল লতিফ শেখের সাথে কথা হয় উদ্বোধনীস্থলে। তিনি এসেছিলেন প্রধান অতিথি হিসেবে। জেলা বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সির উপপরিচালক ইসমাইল হোসেনও এসেছিলেন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হয়ে। তারা জানালেন, গাছেগাছে বসা পাখি একদিকে যেমন ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে ফসলরক্ষায় ভ’মিকা রাখবে, পাখির মলমূত্রও জৈবসার যোগ করেবে মাটিতে। ফলে কমবে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার ও খরচ, মাটিতে জৈবপদার্থ কিছুটা হলেও যোগ হওয়ায় বাড়বে উর্বরতা। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো ক্রমশ বিষমুক্ত ফসল পাবার একটা উদ্যোগ সৃষ্টি হলো প্রাকৃতিক কর্মকান্ডের ভেতর দিয়ে।

সেচ্ছাসেবি প্রতিষ্ঠান হিড বাংলাদেশ-র প্রধান নির্বাহী জিল্লুর রহমান জানালেন, তারা এলাকার মাত্র পাঁচটি গ্রামে প্রাথমিকভাবে কাজ শুরু করেছেন যা ক্রমশ সম্প্রসারিত হবে। শতশত শিক্ষার্থী এ কাজে সম্পৃক্ত হবে, তাদের মধ্যে পাখি ও প্রকৃতি বিষয়ে বেশি আগ্রহ সৃষ্টি হবে। এতে তারাও বেশি মানবিক হবে। একসময় পুরো দেশটা পাখিতে আবার ভরে যাবে, বাঁচবে প্রকৃতি ও পারিবেশ। কৃষি সম্প্রসারণ, সমাজসেবা, সমবায়, বন অধিদপ্তর, বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তর বা প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় তিনি কৃষি ও পরিবেশ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ইত্যাদি কর্মসূচি শত প্রতিক’লতা ও আর্থিক সীমাবদ্ধতার ভেতর দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানালেন।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের ঝিনাইদহ জেলা উপপরিচালক আব্দুল লতিফ শেখ হিড বাংলাদেশের স্বোচ্ছাসেবিদের মধ্যে টি-শার্ট ও পাখিদের জন্য বিশেষভাবে বানানো মাটির পাত্র বিতরণ করছেন।