আটা, চিনি ও তেলের সরবরাহে টান

রাজধানীর কোনো কোনো এলাকায় চাহিদা অনুসারে মিলছে না আটা, চিনি ও বোতলজাত সয়াবিন তেল। কোথাও তেল পাওয়া গেলেও আটা নেই। আবার কোথাও আটা পাওয়া গেলে পাওয়া যাচ্ছে না চিনি। সরবরাহ সংকটের পাশাপাশি দামও বেশি পণ্য তিনটির। কিছুদিন আগে চিনি ও সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে। নতুন করে বেড়েছে আটার দাম। গতকাল মঙ্গলবার পাড়া-মহল্লার দোকান এবং কয়েকটি বাজারে এমন চিত্র দেখা গেছে।

পাড়া-মহল্লার দোকানে প্যাকেটজাত আটার সরবরাহ কিছুটা কম দেখা গেছে। এক সপ্তাহ আগে খুচরা ব্যবসায়ীরা ডিলারদের কাছ থেকে যেসব আটা ও ময়দা সংগ্রহ করেছেন, সেগুলোই বিক্রি করছেন দোকানিরা। তাঁরা বলছেন, বেশিরভাগ কোম্পানি সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। কিছু জায়গায় খোলা আটা পাওয়া যাচ্ছে, কিন্তু দাম বেশি। প্রতি কেজি খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে ৬২ থেকে ৬৫ টাকায়। দুই দফায় দাম বাড়ানোর পরও বেশিরভাগ জায়গায় পাওয়া যাচ্ছে না প্যাকেটজাত চিনি। কিছু জায়গায় খোলা চিনি পাওয়া যাচ্ছে। বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়।

গত ১ নভেম্বর সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়াতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছেন ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা। দাম বাড়ানো হবে কিনা- সে বিষয়ে আজ সিদ্ধান্ত হতে পারে।

ইতোমধ্যেই বোতলজাত তেলের সরবরাহ কিছুটা কমেছে বলে জানান খুচরা ব্যবসায়ীরা। তাঁদের কয়েকজন বলেন, চাহিদাপত্র নেওয়ার পরও কয়েকটি কোম্পানির ডিলাররা পণ্য দিচ্ছে না।

নাখালপাড়া এলাকার চাঁদপুর ট্রেডার্সের একজন বিক্রয়কর্মী সমকালকে বলেন, ১৫-১৬ দিন যাবৎ প্যাকেটজাত চিনি নেই। খোলা চিনি ১২০ টাকার কমে বিক্রি করা যায় না। পাইকারি পর্যায়ে খোলা আটার বস্তা বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার ১০০ টাকায়। অর্থাৎ কেজিপ্রতি কেনা পড়ে ৬২ টাকার বেশি দরে। তাই খুচরায় ৬৫ টাকার কমে বিক্রি করা যায় না। প্যাকেটজাত আটা নেই তিন দিন।

মহাখালী কাঁচাবাজারের ফারাজি স্টোরের স্বত্বাধিকারী বিকাশ বণিক বলেন, কোনো কোম্পানি হয়তো তেল সরবরাহ করছে, কিন্তু চিনি দিচ্ছে না। আবার কেউ চিনি দিচ্ছে তো আটা দিচ্ছে না।

তেজকুনীপাড়া এলাকার মাঈন উদ্দিন ট্রেডার্সের একজন বিক্রয়কর্মী বলেন, চিনির সরবরাহ আগে থেকেই কম। এত দিন আটা, ময়দা ও তেলের সরবরাহ মোটামুটি স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু তিন দিন ধরে কোম্পানির লোকজন আসছে না।

ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকে এলসি খুলতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। ফলে আমদানি কমে গেছে। অন্যদিকে এখনও শিল্পে গ্যাস-বিদ্যুতের সরবরাহ কম। তাই উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। যার প্রভাব পড়েছে সরবরাহে।

জানতে চাইলে মেঘনা গ্রুপের সিনিয়র সহকারী ব্যবস্থাপক তাসলিম শাহরিয়ার বলেন, গম আমদানি না হলে বাজারে আটা সরবরাহ হবে কীভাবে? আগে খাদ্যপণ্য নিয়ে দৈনিক ১৫-২০টি জাহাজ বন্দরে ভিড়ত। এখন তার অর্ধেকও আসে না। এলসি খুলতে সমস্যা হচ্ছে। অন্যদিকে গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট তো আছেই।

বসুন্ধরা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রিজের বিক্রয় বিভাগের প্রধান রেদোয়ানুর রহমান বলেন, গমের সংকট আছে। তাই আটার সরবরাহ কমেছে। তবে সয়াবিন তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে।