যশোরে ২ দিনব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী শুরু

যশোরে দুই দিনব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের ছয়টি গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে যশোর শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনে এই প্রদর্শনী শুরু হয়।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের আয়োজনে দুই দিনব্যাপী এই প্রামাণ্যচিত্রের প্রথম দিনে মুজিবনগর বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের সরকার, বীর চট্টলার প্রতিরোধ যুদ্ধ, রাতে বিলোনিয়ার যুদ্ধের প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী হয়।

প্রদর্শনীতে কীভাবে ১৯৭১ সালে যুদ্ধে জনমানুষের অংশগ্রহণ হয়, কীভাবে মুজিবনগর সরকার গঠিত এবং যুদ্ধ পরিচালনা হয় সেই ইতিহাস উঠে এসেছে। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সেই ভয়াল দৃশ্য ফুটিয়ে তোলার সঙ্গে রণকৌশল, গেরিলা ও সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেওয়াদের সাক্ষাৎকার ও চিত্র উঠে এসেছে। যারা ১৯৭১ সালে বুকে মাইন নিয়ে, গ্রেনেড নিয়ে যুদ্ধ করেছিলেন তাদের স্মৃতিও তুলে ধরা হয় প্রামাণ্যচিত্রে।

চলচ্চিত্র পরিচালক তানভীর মোকাম্মেলের তত্ত্বাবধানে নির্মিত এই প্রামাণ্যচিত্রগুলো যশোরে প্রথমবারের মতো প্রদর্শন করা হচ্ছে। প্রতিটি প্রামাণ্যচিত্রের দৈর্ঘ্য ৬০ মিনিট। এই প্রামাণ্যচিত্রে শহরের বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজ অংশগ্রহণ করেন। প্রতিটি প্রামাণ্যচিত্রগুলোই মুক্তিযুদ্ধ সময়কালের যুদ্ধচিত্রে আপ্লুত হয় সবশ্রেণির দর্শক।

এর আগে দুই দিনব্যাপী এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে ও লেখিকা শারমিন আহমদ। এ সময় তিনি বলেন, বিপুল ত্যাগের বিনিময়ে এ দেশ স্বাধীন হয়েছিলো। আজকে কিছু সংখ্যক লোক ত্যাগ করছে; আবার অনেকেই ভোগ করছে। এমন বৈষম্যমূলক অবস্থা কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর্দশে ছিলো না। ক্ষমতার বিরুদ্ধে মানুষের সংগ্রাম হলো, বিস্মৃতির বিরুদ্ধে স্মৃতির সংগ্রাম।

জনগণ সঠিক ইতিহাস ভোলেনি। শাসকশ্রেণি এগুলো নিয়ে খেলা করে। ভুলিয়ে দিতে চায়। তাই মুক্তিযুদ্ধের এই ছয়টি প্রামাণ্যচিত্র আমাদের দলিল। তাই মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের অঙ্গীকার নিয়ে আমরা যে যুদ্ধ করেছিলাম। সেই অঙ্গীকার নিয়েই আমরা এগিয়ে যেতে হবে। আরও বেশি বেশি নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধকরণের লক্ষ্যে এসব মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র দেখার অনুরোধ করেন তিনি।

চলচ্চিত্র পরিচালক তানভীর মোকাম্মেল বলেন, জনগণের শিল্পী হিসেবে দায় হচ্ছে, সঠিক ইতিহাস মানুষের কাছে তুলে ধরা। দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করেছি সঠিক ইতিহাস ধারণ করে প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করার। যার মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন মু্ক্তিযোদ্ধা কামাল শাহ, আকাশের মুক্তিযুদ্ধ প্রমাণ্যচিত্রের পরিচালক সগির মোস্তফা প্রমুখ।

এ দিকে দুই দিনব্যাপী এই প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনীর শেষ দিনে শনিবার তিনটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী হবে। বিকেলে প্রদর্শিত হবে জনযুদ্ধ ৭১, সন্ধ্যায় আকাশে মুক্তিযুদ্ধ ও রাতে একাত্তরের নৌ- কমান্ডো।