এবার পাকা বাড়ি পাবেন বীরাঙ্গনারা

সরকার এবার বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধাদের পাকা বাড়ি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত সপ্তাহে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সূত্র জানায়, গত বুধবার মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত উন্নয়ন প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনার সূত্রপাত করেন সভার সভাপতি মন্ত্রণালয়ের সচিব খাজা মিয়া। তিনি বলেন, অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সরকার পাকা বাড়ি করে দিচ্ছে।

এটি সবার কাছে প্রশংসনীয় উদ্যোগ বলে বিবেচিত হয়েছে। যদিও প্রকৃত অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধারা বাড়ি পাচ্ছে কিনা সেটি আমাদের আরও যাচাই করে দেখতে হবে। কেননা, অভিযোগ আছে, প্রভাব খাটিয়ে সচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের কেউ কেউ বাড়ি বরাদ্দ নিচ্ছেন। এরপর সচিব সভায় প্রস্তাব করে বলেন, ‘আমি মনে করি এ প্রকল্পের মাধ্যমে বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধাদের যদি আমরা পাকা বাড়ি করে দিতে না পারি, তাহলে সরকারের এই ভালো উদ্যোগ অসম্পন্ন থেকে যাবে।’

সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক সচিবের প্রস্তাব সমর্থন করে বক্তব্য দেন। এরপর প্রস্তাবটি সর্বসম্মভাবে গৃহীত হয়। রোববার সভার কার্যবিবরণী চূড়ান্ত করে তা অনুমোদনও দেওয়া হয়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খাজা মিয়া সোমবার সন্ধ্যায় যুগান্তরকে বলেন, ‘বীরাঙ্গনারা জাতির অনেক বড় গৌরবের প্রতীক। ফলে তাদের যথাযথ সম্মান দিতে না পারলে আমরা বিজয়ী বীরের জাতি হিসাবে প্রকৃত অর্থে সামনে এগুতে পারব না। বরং আমি মনে করি, অনেক ক্ষেত্রে আমরা তাদের সময়মতো সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে পারিনি। এজন্য বিলম্বে হলেও সরকার এখন বীরাঙ্গনাদেরও পাকা বাড়ি করে দেবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তালিকাভুক্ত ৪৭৩ জনকে বীরঙ্গনাকে পাকা বাড়ি করে দেওয়া হবে। তিনকক্ষ বিশিষ্ট বাড়িতে উপরে অবশ্যই ছাদ থাকবে। প্রতিটি বাড়ি নির্মাণে খরচ হবে প্রায় ১৫ লাখ টাকা। যদি কোনো বীরাঙ্গনার জমি না থাকে তাহলে সরকার খাসজমি বরাদ্দ দিয়ে বাড়ি করে দেবে।

খাস জমি পাওয়া না গেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে সুবিধাজনক স্থানে সরকারি অর্থে জমি কিনে সেখানে বাড়ি করে দেওয়া হবে। এ ছাড়া যদি কোনো বীরাঙ্গনা বাড়ি নিতে না চান, তাহলে তিনি দেশের যেকোনো নাগরিককে সেটি দান দলিল করে দিতে পারবেন।’ সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, বীরাঙ্গনাদের তালিকা অনুযায়ী সরাসরি মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে আদেশ জারি করা হবে। উপজেলা পর্যায়ে কোনো যাচাই-বাছাই করার প্রয়োজন নেই। যেহেতু আগে থেকে বীরাঙ্গনাদের তালিকা চূড়ান্ত করা আছে, তাই খুব দ্রুত অবশিষ্ট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আদেশ (জিও) জারি করা হবে।

এরপর প্রকল্প পরিচালক দরপত্র আহ্বানসহ আনুষঙ্গিক কাজ শুরু করবেন। প্রসঙ্গত, সরকার ইতোমধ্যে দেশের অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ৩০ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধার জন্য বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়ার প্রকল্প নিয়েছে। এ প্রকল্প থেকে অনেকে পাকা বাড়ি পেয়েছেন। অবশিষ্ট বাড়ি বরাদ্দ ও নির্মাণাধীন পর্যায়ে আছে।