আপনার উন্নয়ন ১৪ বছরে দুর্ভিক্ষে রূপ নিয়েছে : সাকি

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, আপনার উন্নয়ন ১৪ বছরে এসে দুর্ভিক্ষে রূপ নিয়েছে। আপনিই বলেছেন, আমরা বলিনি।

প্রতিদিন রিজার্ভ কমছে। কেন কমছে? এর কারণ আপনার উন্নয়নের নামে বছরে কোটি কোটি টাকা পাচার হয়েছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক আট হাজার লেনদেন পেয়েছে, যেগুলোকে তারা অস্বাভাবিক বলছে। এসবের সঙ্গে সরকারের যোগাযোগ রয়েছে।

ডলারের কোষাগার ফাঁকা। এমন লুটপাট আগে বাংলাদেশে কখনও ঘটেনি। এ সরকারের আমলে দশ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এই টাকা কার? আপনাদের উন্নয়নে আমাদের আজ এ অবস্থা করেছে।

শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) বিকেলে নারায়ণগঞ্জে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত গণতন্ত্র মঞ্চের সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি। ‘সরকার ও শাসন ব্যবস্থা পরিবর্তনে ঐক্যবদ্ধ হোন: রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে বাধা, হামলা-মামলা, দমন-পীড়ন ও গুলি-হত্যা বন্ধ কর’ শিরোনামে সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

সাকি বলেন, আমাদের প্রথম কাজ এ সরকারকে পদত্যাগ করানো। একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। সুষ্ঠু নির্দলীয় সরকার কাঠামো গঠন করতে হবে।

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনকে তো প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেন। তারা তো তারই গোলামি করবে। আইন করে সংবিধান করে ক্ষমতার ভারসাম্য ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এই তিন দাবি মিলে আমাদের এক দফা।

তিনি আরও বলেন, অনেকে এক দফা নিয়ে ভুল-ভ্রান্তিতে থাকেন। আমরা কেন আন্দোলন করছি, কারণ আমরা ভোট দিতে পারিনি। আমাদের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এই সরকারের শাসনব্যবস্থার অধীনে ভোটাধিকার অর্জন সম্ভব নয়।

সাকি বলেন, ৫২ বছরে কী দিয়েছে তারা? আজ গণজাগরণ সৃষ্টি হচ্ছে। এই গণজাগরণকে আর বিফলে যেতে দেওয়া হবে না। আমরা শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের লক্ষ্যে এই সরকারের পদত্যাগ চাই। জনগণ আন্দোলনের নির্ধারক শক্তি।

তিনি বলেন, অনেকে বলেন, আপনারা এ সরকারকে পদত্যাগ করাতে চান কেন? তারা বলেন এই সরকার তো উন্নয়ন করেছে। উন্নয়ন তো দেখছি। বড় বড় স্থাপনা হচ্ছে। আইয়ুব খানের আমলেও বড় বড় স্থাপনা হয়েছে। এরশাদের আমলেও হয়েছিল। ১৯৭১ সালে নুরুজ্জামান ৭ নম্বর সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। তিনি যখন দেশে ফিরছেন তখন এক কৃষক তাকে বলছিলেন, আমার তো চোখ নেই। আমার চোখ আমি আপনার অন্তরে দিলাম। আমার চোখ দিয়ে বাংলাদেশে গিয়ে দেখবেন কতটা বদলেছে। আজ বাংলাদেশের অবস্থা কেমন, সংবাদমাধ্যমে সেই খবর আসে। আমাদের নারীরা ওএমএসের লাইনে দাঁড়িয়ে, রাস্তা থেকে কুড়িয়ে চাল সংগ্রহ করছেন। এ হলো অবস্থা। গ্রামে তো অবস্থা আরও ভয়াবহ।

সাকি বলেন, ২০১৪ সালে তারা (আওয়ামী লীগ) কাউকে দাঁড়াতে দেয়নি। ২০১৮ সালে সুষ্ঠু ভোট দেওয়ার কথা বলে ডেকে নিলেন। আমরা কী দেখলাম। জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেছেন, পুলিশ রাতে ভোট দিয়েছে, এমন কথা কোথাও শুনিনি। আমরা সরকারকে বলতে চাই, জাপানের রাষ্ট্রদূতের কথা কি আমরা অস্বীকার করতে পারি? আমরা তো ভোটে দাঁড়িয়েছিলাম। আমরা তো দেখেছি। দেশের মান সম্মান নিয়ে আমরা চিন্তিত, আপনারা নন।

সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা র‍্যাবের মতো প্রতিষ্ঠানকে আন্তর্জাতিকভাবে হেয় করেছেন। তাদের মুক্তিযুদ্ধের অধিকার হলো, তারা ক্ষমতায় থাকবে, কিন্তু মানুষ ভোট দিতে পারবে না। প্রতিপক্ষকে হাত-পা বেঁধে নিজেরা অস্ত্র নিয়ে, পুলিশ নিয়ে তারা বলে খেলা হবে। নির্বাচনে আসুন, আমরা আপনাদের হাত-পা বাঁধব না।

 

সাকি বলেন, শেখ হাসিনার কাছে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব নিরাপদ না। তাই আমরা তার পদত্যাগ চাই। তারা ক্ষমতা ছাড়বে না। তারা বলে বিরোধী দল বিদেশিদের কাছে ধরনা দিচ্ছে। আমরা বলি এতদিন বিদেশিদের কাছে ধরনা দিয়ে স্টিম রোলার চালিয়ে আপনারা ক্ষমতায় টিকেছিলেন। আজ ক্ষমতা হারানোর ভয়ে ভীত হয়ে আছেন।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ দেশকে ধর্মের নামে মুক্তিযুদ্ধের নামে বিভাজিত করতে চায়। আমরা এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছি। আওয়ামী লীগ শুধু বিরোধী দলের নয়, নিজ দল ও সমর্থকদের ভোটাধিকারও কেড়ে নিয়েছে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি (জেএসডি) আব্দুর রব, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণ অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর, ভাষানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম।