সাংগঠনিক শক্তি প্রদর্শন অব্যাহত রাখবে আ.লীগ

বিএনপির ধারাবাহিক সমাবেশের পালটা হিসাবে সারা দেশে সাংগঠনিক শক্তি প্রদর্শনের পরিকল্পনা করেছে আওয়ামী লীগ।

তারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যুবলীগের মহাসমাবেশ ও আগারগাঁওয়ে দলের ঢাকা জেলা কমিটির সম্মেলনের মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপিকে বার্তা দিয়েছে। ঢাকার বাইরেও এমন সাংগঠনিক শক্তি প্রদর্শনের পরিকল্পনা আছে আওয়ামী লীগের।

তারই ধারাবাহিকতায় ২৪ নভেম্বর যশোর, ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম এবং ৭ ডিসেম্বর কক্সবাজারে জনসভা করবে ক্ষমতাসীনরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই জেলা সফরের মাধ্যমে সাংগঠনিক শক্তি দেখানোর পাশাপাশি সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরা হবে।

সেই সঙ্গে সংসদ নির্বাচনের প্রচারণা চালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে তাদের। দলীয় সংশ্লিষ্ট সূত্র যুগান্তরকে এসব তথ্য জানিয়েছে।

আওয়ামী লীগ মনে করছে, বিএনপি এবার সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে। সে কারণে আগামী নির্বাচন হবে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের সব ফোরামে এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছেন। তিনি জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে প্রার্থী বাছাই শুরু করেছেন।

তবে সরকারের টানা তিন মেয়াদের শাসনামলের উন্নয়ন কার্যক্রম প্রচার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্তুষ্ট নন। সর্বশেষ অনুষ্ঠিত দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ১৪ বছর ধরে ক্ষমতায় আছে।

এটা নেতিবাচকভাবে প্রচার হচ্ছে। কিন্তু ১৪ বছরে যে কাজগুলো হয়েছে, তার প্রচার হচ্ছে না। এসব কাজ অর্থাৎ সরকারের উন্নয়নের সংবাদ প্রচার করতে হবে।

টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের অর্জন নিয়ে একটি বই করা হচ্ছে। সেটা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। পাশাপাশি বিএনপির অপকর্মও মানুষকে বারবার মনে করিয়ে দিতে হবে।

গত ১৬ নভেম্বর বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা অনলাইন পোর্টালের সম্পাদক ও টেলিভিশনের সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

তার সঙ্গে ছিলেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আবদুর রহমান এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদসহ আওয়ামী লীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা ও মন্ত্রী। ওইদিন তারা বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম প্রচারে গণমাধ্যমে সহযোগিতা কামনা করেন।

২৪ নভেম্বর থেকে জেলা সফর শুরু হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার। এখন পর্যন্ত তিন জেলায় তার সফরসূচি চূড়ান্ত হয়েছে। ২৪ নভেম্বর যশোরের শামসুল হুদা স্টেডিয়ামে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় ভাষণ দেবেন তিনি।

এরপর ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক পলোগ্রাউন্ড এবং ৭ ডিসেম্বর কক্সবাজারের শেখ কামাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় বক্তৃতা করবেন শেখ হাসিনা। অবশ্য এসব সফরে সরকারি কর্মসূচিতেও যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগ পর্যন্ত দেশের অধিকাংশ জেলায় তার সফর অব্যাহত রাখার ইচ্ছা রয়েছে বলে জানা গেছে।

আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের ওই সভায় দলের জাতীয় সম্মেলন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং রাজপথে অবস্থান ধরে রাখতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালনসহ বেশ কিছু সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়।

কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের এ সভায় দল গোছানো এবং নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় নেতাদের জানান, এখন থেকে তিনি বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরে সরকারি কর্মসূচিতে অংশ নেবেন। সরকারি এসব কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি তিনি দলীয় সমাবেশ করবেন বলেও জানান।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি বলেন, এখন থেকে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ঢাকার বাইরে জনসভা এবং গণসমাবেশ করবেন। করোনার কারণে তিনি এতদিন সশরীরে যেতে পারেননি।

রোববার রাজধানীর উত্তরায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত শান্তি সমাবেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, খেলা হবে। খেলা মানে পালটাপালটি নয়। খেলা মানে মারামারি নয়। আগুন নিয়ে এলে, আগুন নিয়ে খেলতে চাইলে, খেলা হবে। আওয়ামী লীগ রাজপথে থাকবে। কেউ খেলতে চাইলে জবাব দেওয়া হবে। তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার আহবান জানান।

পাঁচ বছর আগে ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর যশোর ঈদগাহ মাঠে নির্বাচনি জনসভায় ভাষণ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। এর আগে চট্টগ্রামে ২০১৮ সালের ২১ মার্চ পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আওয়ামী লীগের জনসভায় যোগ দিয়েছিলেন তিনি। আর ২০১৭ সালের ৬ মে কক্সবাজার সফর করেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

২০০৮ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় নিয়ে ক্ষমতায় আসার পর থেকে রাজনৈতিকভাবে সুবিধাজনক অবস্থা কেটেছে আওয়ামী লীগের। কারণ বিএনপিকে মোকাবিলায় তেমন বেগ পেতে হয়নি। সেজন্য ক্ষমতাসীনদের রাজপথে শক্তি প্রদর্শনের প্রয়োজন পড়েনি।

তিন বছর আগে করোনার সংক্রমণ শুরু হলে রাজনীতি ঘরবন্দি হয়ে পড়ে। কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি পালটেছে। করোনা মহামারির কারণে অর্থনীতিতে সংকট বাড়তে থাকে এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সেই সঙ্গে বেড়ে যায় লোডশেডিং।

তার ওপর নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সঙ্গে বেড়েছে জ্বালানি তেলের দাম। গ্যাস সংকটে উৎপাদন কমে গেছে শিল্পকারখানায়। এই সুযোগে মাঠে নেমেছে প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি।