একটি সংগঠন ও আলমের দেশান্তরীত হবার গল্প

প্রায় আট বছর আগে এলজিবিটি কমিউনিটির সাথে নিজেকে সর্ম্পৃক্ত করেন যশোর শহরের বারান্দীপাড়া কদমতলা এলাকার শরিফুল আলম নামে এক যুবক। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের অধিকার আদায় সহ এলজিবিটি সম্প্রদায়কে নানা ভাবে সহায়তা করতেন তিনি। কিন্তু বাংলাদেশের ধর্মীয় অনুভূতি ও রক্ষণশীল সমাজ ব্যবস্থার বিচার বিবেচনায় এলজিবিটি কার্যক্রম সমর্থনযোগ্য নয়। আইনগত ভাবে তা নিষিদ্ধ।

২০১৩ সালে আলমের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় যশোরে এলজিবিটি সম্প্রদায়ের লোকজন একত্রিত হতে শুরু করে। শহরের মার্কাজ মসজিদ এলাকার একটি ভবনে তারা নিয়মিত দেখা সাক্ষাত করতো। গোপনীয়তা বজায় রেখে তিনি এলজিবিটির কার্যক্রম চালালেও বছরখানেকের মধ্যে তা জানাজানি হয়ে যায়। এলজিবিটি সম্প্রদায়ের আশ্রয়দাতা হিসাবে আলমকে চিহ্নিত করেন এলাকাবাসী। অপরদিকে মৌলবাদীদের একটি উগ্র গোষ্ঠি বিষয়টি অবগত হয়ে তাকে খুঁজতে শুরু করে। পরের বছরের শুরুর দিকে আলমের ওপর হামলা চালিয়ে রক্তাক্ত জখম করে উক্ত গোষ্ঠি। তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে কয়েক দফা তার বাড়িতে হামলা চালানো হয়। অব্যাহত হুমকি ও হামলার মুখে আলম নিজেকে এলজিবিটি কমিউনিটি থেকে গুটিয়ে নেয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করলেও পরিত্রাণ মেলেনি। তাকে এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার চূড়ান্ত সময় বেঁধে দেয় হামলাকারীরা।

একটি পর্যায়ে আলম ঢাকায় পালিয়ে গিয়ে আত্মগোপন করেন। কিন্তু সেখানেও তার গতিবিধির ওপর নজর রাখতে শুরু করে উগ্র মৌলবাদীরা। এবং দিনে দিনে পরিস্কার হয়ে ওঠে যে এ দেশের মাটি তার জন্য মোটেও নিরাপদ নয়। বেচেঁ থাকতে হলে তাকে এ দেশ ছেড়ে যত দ্রুত সম্ভব পালাতে হবে। প্রাণনাশের অব্যাহত হুমকির মুখে সুইডেনে আশ্রয় নেন আলম।

আলম দেশ ত্যাগের দু বছরের মধ্যে এই সম্প্রদায়ের দুই ব্যক্তি হত্যাকান্ডের শিকার হন। এদের একজন ইউএসএইড কর্মকর্তা ও সমকামী অধিকারকর্মী জুলহাস মান্নান এবং তার বন্ধু থিয়েটারকর্মী মাহবুব তনয়।

এলজিবিটির সাথে নিজেকে জড়িয়ে কিংবা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে আলমের মত এমন হাজার হাজার মানুষ হয়েছেন দেশান্তরী। প্রাণ হারানোর ভয়ে কোন ভাবেই তাদের আর দেশে ফিরে আসা হয় না।