নেইমারকে নিয়েই নামছে ব্রাজিল

আজই কি পুরো দলটা পাথর হয়ে যাবে…। আগের দিন পেলেকে লাইফ সাপোর্টে নিয়ে যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর মিডিয়া সেন্টারে ব্রাজিলিয়ান সাংবাদিকদের দীর্ঘশ্বাস। তাঁর সঙ্গে কার কবে শেষ দেখা হয়েছিল, সেই স্মৃতিচারণ করছেন সবাই। অবশ্য গভীর রাতে পেলের ইনস্টাগ্রাম থেকে ‘আমি সুস্থ আছি, বিশ্বকাপে ব্রাজিলের খেলাও দেখছি…’ বার্তা আসার পর স্বস্তি ব্রাজিলিয়ান সাংবাদিককুলে। নেইমার সুস্থ হয়ে অনুশীলনে নেমেছেন- এই দৃশ্যও দেশে পাঠিয়ে খুশি তাঁরা। অপেক্ষা আজ দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে শেষ ষোলোর ম্যাচে তাঁদের চেনা ‘ব্রাজিল’কে খুঁজে পাওয়ার। ক্যামেরুনের কাছে যে দলটি গ্রুপ পর্বে হেরেছে, তাকে কোনোভাবেই ‘ব্রাজিল’ বলে মানতে চাইছেন না কেউ। এমনকি কাল ক্যামেরার সামনে আসা থিয়াগো সিলভাও কাটা কাটা কথাই বলে দিলেন, ‘গ্রুপ পর্বে কী হয়েছে, তা ভুলে যান। আমরা ভুলে গেছি। দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে আমাদের নতুন ম্যাচ শুরু হবে। ব্রাজিল দল তাদের সেরাটা দিয়েই কোয়ার্টারে পৌঁছাবে।’

এমনিতে ব্রাজিলের সঙ্গে শক্তিমত্তায় যোজন যোজন দূরে দক্ষিণ কোরিয়া। এ বছরের জুনেই সিউল গিয়ে প্রীতি ম্যাচে কোরিয়াকে ৫-১ গোলে হারিয়েছিল ব্রাজিল। জোড়া গোল ছিল নেইমারের; গোল ছিল রিচার্লিসনেরও। কিন্তু সেসব যে অতীত, তা মনে করিয়ে দেন ব্রাজিল কোচ তিতে। ‘গতকাল কী হয়েছে, সেটা বদলে যায়।

আর আপনি বলছেন কত আগের কথা! এই বিশ্বকাপেই তো ব্রাজিল ক্যামেরুনের কাছে হেরেছে; পর্তুগাল হেরেছে দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে; ফ্রান্স তিউনিসিয়ার কাছে, আর্জেন্টিনা সৌদি আরবের কাছে। আমার মনে হয়, এই ফলগুলো দলগুলোকে আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে। কোরিয়া অনেক শক্তিশালী দল। আমার মনে হয় না, ম্যাচে সহজেই আমাদের কোনো সুযোগ আসবে। কোরিয়া সম্পর্কে অবশ্যই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।’ তিতের কথা শুনে মনে হতে পারে, ক্যামেরুন ম্যাচের ধাক্কাটাই বুঝি বেশি সতর্ক করে দিয়েছে তাঁকে। তবে এটা তিনি স্বীকার করেননি। বরং অধিনায়ক থিয়াগো সিলভা মনে করেন, ক্যামেরুন ম্যাচে বিশ্রাম পেয়ে তাঁদের সুবিধা হয়েছে। আজ কোরিয়ার বিপক্ষে যে দলটি নামবে, তারা ফুরফুরে মেজাজে তাজা হয়েই নামবে।

আজকের ম্যাচে ব্রাজিল স্কোয়াড তাদের সেরাদের দিয়েই সাজানো থাকবে। রিচার্লিসনকে সামনে রেখে ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, নেইমার, রাফিনহা, ক্যাসিমিরো, পাকুয়েতা, থিয়াগো সিলভা, দানিলো- প্রথম ম্যাচের প্রায় সবাই নামছেন আজ। কিন্তু নেইমার কি খেলবেন? যদি খেলতে নামেন, তাহলে কি নকআউট ম্যাচের সম্ভাব্য ১২০ মিনিট খেলার মতো ফিট থাকবেন? তাঁকে কি শুরুর একাদশে রাখা হবে নাকি বদলি হিসেবে ম্যাচের পরে, যাতে করে পেনাল্টি শুট আউট হলে কাজে লাগানো যায়? সাও পাওলো থেকে আসা এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নে উত্তর না দিয়ে শুধু ইঙ্গিত দিলেন। ‘দেখুন, নেইমার ফিট থাকলে, আমাদের মেডিকেল টিম তাকে খেলার অনুমতি দিলে, আমি শুরু থেকেই সেরা স্কোয়াড নামাব।’

তিতে যা বললেন না তা হলো, কোরিয়ানরা যতই ডিফেন্সিভ খেলুক না কেন, পেনাল্টি শুট আউটের দিকে তিনি ম্যাচ নিয়ে যেতে দেবেন না। আর নেইমারকে তিনি শুরুতেই খেলাবেন। ১২ বছর পর বিশ্বকাপের শেষ ষোলোতে খেলার সুযোগ পেয়ে এমনিতেই আত্মহারা কোরিয়া। তার পর আবার রোনালদোকে সেদিন নিষ্ফ্ক্রিয় করে দিয়ে পর্তুগালকে হারানোর আত্মবিশ্বাস।

আজও একই কৌশলে নেইমারকে নিষ্প্রভ করেই ব্রাজিলকে হারাতে চায় কোরিয়ানরা। কিন্তু শেষ কথাটি বোধ হয় থিয়াগো সিলভাই বলে দিয়েছেন, ‘কোরিয়ানরা ভালো, তাদের গতি আছে, বল পাসিং আছে। ডিফেন্স আছে। তবে আমাদেরও তাদের দুর্বলতা জানা আছে। নকআউটে এসে নিশ্চয়ই আমরা আর কোনো ঝুঁকি নিতে চাইব না।’