যশোর রেজিস্ট্রার অফিসের রেকর্ড কিপার ভৈরব চক্রবর্তীর কেরামতি-১

‘কাঁচা খুলতে দেরি হলেও, ভাগ্য খুলতে দেরি হয়নি,’ যশোর রেজিস্ট্রার অফিসের রেকর্ড কিপার ভৈরব চক্রবর্তীর। কয়েক বছরের ব্যবধানে তিনি আজ কোটি কোটি টাকার সম্পাদ গড়ে তুলেছেন। আলাউদ্দিনের চেরাগও হার মেনেছে ভৈরব চক্রবর্তীর কাছে। নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকার সম্পাদ গড়েছেন বলে অভিযোগ। শুধু তাই নয়, পাশ্ববর্তী দেশ ভারতেও বেশ সম্পদ গড়ে তুলেছেন রেজিস্ট্রি অফিসের এই কর্মচারী। তিনি এখন একাই এই অফিসের সব কিছুর নিয়ন্ত্রক বনে গেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ভৈরব চক্রবর্তী কয়েক বছর আগে জেলার মণিরামপুর উপজেলায় নকলনবিশ হিসেবে চাকরি শুরু করেন। প্রথমে তাকে মোহরার পদে পদোন্নতি পান, মোহরার পদে চাকরি করে সহকারী রেকর্ড কিপার সর্বশেষ রেকর্ড কিপার হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন। তার এসব পদোন্নতিও হয়েছে অবিশ্বস্য ভাবে। মণিরামপুর দিয়ে চাকরি শুরু করে চৌগাছা হয়ে বর্তমানে জেলা অফিসে কয়েক মাস আগে যোগদান করেছেন। জেলা রেজিস্ট্রারের রেকর্ড রুমে যোগদানের পর থেকেই নতুন নতুন আইন চালু করেছেন। যশোর রেজিস্ট্রার রেকর্ড রুমের অতীতের সবল রেকর্ড ভঙ্গ করে দিয়েছেন ভৈরব চক্রবর্তী আইনই শেষ আইনি পরিণত হয়েছে। তিনি এ অফিসের যোগদানের পর থেকেই ঘুষের নতুন রেড নির্ধারণ করেছেন।

সূত্র জানায়, যশোর রেজিস্ট্রার অফিসে সপ্তাহে ৮০০ থেকে এক হাজার দলিল সম্পাদনা হয়ে থাকে। ভৈরব চক্রবর্তী নকল প্রতি নিজের জন্য ৬০ টাকা নিজের রেড ধরেছেন। এ হিসাবে প্রতি সপ্তাহে অর্ধ লাখ টাকা আদায় করেন। মাসে অন্তত: দুই লাখ টাকা। মূল দলিলে ৫০ টাকা নির্ধারণ করেছেন। এ হিসেবে মাসে অন্তত: ১৫ হাজার টাকা। কাটা, ছেড়া, সিচ বালাম নকল প্রতি এক হাজার নিয়ে থাকেন। এতে অন্তত: সপ্তাহে ২০ হাজার মাসে ৮০ হাজার টাকা নেন। সমগ্র জেলার বালাম বইয়ে স্বাক্ষর ছাড়া নকল প্রতি ৫ হাজার টাকা নেন। টাকা নেওয়ার কোন নিয়ম না থাকলেও প্রতি বালাম ১০ টাকা ও সূচি প্রতিও ১০ টাকা নেন এই রেকর্ড কিপার।

সুত্র জানায়, ভৈরব চক্রবর্তী সিচ বালাম, কাটা ছেড়া, হাউজিং স্টেট ও নিকাহনামা বা কাবিননামা থেকে অবৈধভাবে অর্থ আয় করে থাকেন। আর এভাবে প্রতি মাসে অন্তত: ৫ লাখ টাকার বেশি অবৈধভাবে আয় করে চলেছেন এই রেকর্ড কিপার।

তার এই অবৈধ অর্থ আদায়ের মূল সহযোগি হিসেবে কাজ করেন নকলনবিশ নূর নবী। নকলনবিশ নূর নবীর কাজ বালাম লেখার। কিন্তু রেকর্ড কিপারের অবৈধ আয়ের সহযোগিতা করার কারণে তিনি অফিসের সকলকে থোড়াই কেয়ার করে চলেন। অফিসে চলেন নিজের ইচ্ছা মত। ভয়ে কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পায় না। যার-তার দিয়ে নকল সরবরাহের নিয়ম না থাকরেও নকলনবিশ নূর নবীকে দিয়ে রেকর্ডকিপার ভৈরব চক্রবর্তী নকল সরবরাহ করান।

সূত্র জানায়, রেজিস্ট্রার অফিসটি সরকার ও সাধারণ মানুষের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কার্যালয়। এই অফিসে সরকারি অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ হয়। কিন্তু সব বাইরের লোক দিয়ে রেকর্ড রুমে অহরহ যাতাযাত করে থাকে। ভেতরে অমেদারদের যেন এক আড়ৎ খানা। এখানে কোন নিয়মই মানা হয় না।

সূত্র জানায়, ভৈরব চক্রবর্তী মণিরামপুর অফিসে থাকাকালীন সময়ে ম্যাপের ওপর টেম্পার করেছিলেন। সেই সময় তাকে মৌখিকভাবে ৩ মাস সাসপেন্ড ছিলেন। চৌগাছায় চাকরি করা কালীন সময়ে ওই অফিসের অবৈধ আয়ের সব টাকা জমা হতো ভৈরব চক্রবর্তীর কাছে। ওই অফিস থেকে বদলি হয়ে যশোর আসার সময় ঘুষের অন্তত: ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। যেহেতু ঘুষের টাকা এ কারণে কেউ তার বিরুদ্ধে টু-শব্দ করেননি।

এবিষয়ে জানতে চাইলে ভৈরব চক্রবর্তী রিপোর্ট না লেখার জন্য অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে দুজনের কথা বলে মিটমাট করে নিই।