ভৈরব-নূর নবীর অপকর্মের শিকার শহিদ

যশোর রেজিস্ট্রি অফিসের রেকর্ড কিপার ভৈরব চক্রবর্তী ও নকল নবিশ নূর নবীর অপকর্মে হাজতবাসের শিকার হয়েছেন মোহরার শহিদুল ইসলাম শহিদ। এ ঘটনায় রেজিস্ট্রি অফিসের কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা অবিলম্বে মহাধুরন্ধর ভৈরব চক্রবর্তী ও নূর নবীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত রোববার ১৯৯৪ সালের একটি মামলায় বালাম বই তলব করে আদালত। আদালতে বালাম বই নিয়ে যাওয়ার নিয়ম রেকর্ড কিপারের। কিন্তু রেকর্ড কিপার মহাদুর্নীতিবাজ ভৈরব চক্রবর্তী ভয়ে আদালতে না গিয়ে মোহরার শহিদুল ইসলাম শহিদকে দিয়ে বালাম বইটি আদালতে পাঠায়। আদালতের বিচারক একটি সেনসেটিভ বিষয়ে একজন মোহরারকে দিয়ে বই পাঠানো অবমাননার শামিল বলে মনে করে। বিচারক শহিদকে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে ২ ঘন্টা আদালতের হাজত খানায় আটকিয়ে রাখে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। বিষয়টি জানতে পেরে যশোর সদরের সাব- রেজিস্ট্রার ইমরুল হাসান ও রেকর্ড কিপার ভৈরব চক্রবর্তী আদালতে হাজির হয়ে মুচলেকার মাধ্যমে শহিদুল ইসলাম শহিদকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসে।

সূত্র জানায়, ১৯৯৪ সালের ওই বালাম বইয়ের ৩টি পাতা ছিড়ে ধ্বংস করা হয়েছে। বইয়ের তিনটি পাতা নেই। রেকর্ড কিপার ভৈরব চক্রবর্তী ও নকল নবিশ নূর নবী দীর্ঘদিন ধরে বালাম বইয়ের পাতা ছিড়ে লাখ লাখ টাকা অর্থ বাণিজ্য চালিয়ে আসছে।

শুধু তাই নয়, বালাম বই থেকে পাতা সরানো থেকে বালাম উধাও করে থাকে এই চক্রটি। যশোর ১৯৭৮ সালের ২২৭১ নং দলিলের ৭১ নম্বর ভলমের ৯৭ থেকে ১০০ পাতা পর্যন্ত উধাও করে দিয়েছে চক্রটি। এই চার পাতার দলিলে কি ছিলো তা এখন কেউই কিছু জানে না।

রেজিষ্ট্রি অফিসে কোন কাজ করতে গেলে পদে পদে ঘুষ দিতে হয়। রেজিষ্ট্রি করা ছাড়াও নকল কপি তুলতে ঘুষ, ভিজিট কমিশনে গেলে ঘুষ, দলিল পাওয়ার অফ অটর্নিতে ঘুষ, রদ ও রহিদে ঘুষ এমকি বায়না চুক্তিতে ঘুষ দিতে হয়। এক কথায় ঘুষ ছাড়া কোন কাজই হয় না এই অফিসে। আর এ টাকার ভাগ পান অফিসের সকলে। আর ঘুষ বাণিজ্যের এ প্রক্রিয়াগুলো হয়ে থাকে নকলনবিশ নূর নবীর মাধ্যমে।
সূত্র জানায়, ভৈরব চক্রবর্তী ও নূর নবী সরকারি নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে জমির শ্রেণি পরিবর্তন দেখিয়ে, সাব-কবলা দলিলের পরিবর্তে হেবাবিল এওয়াজ, অসিয়ত নামা, ঘোষণাপত্র, আমমোক্তার নামা দলিল রেজিষ্ট্রি করে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, রেজিস্ট্রি অফিসের রেজিস্ট্রি সংক্রান্ত কাজের অনিয়ম ও দূর্ণীতির মূল হোতা ভৈরব চক্রবর্তী ও তার প্রধান সহযোগী নূর নবী। এরা দলিল লেখকদের যোগসাজসে ঘুষ বাণিজ্য পরিচালনা করে থাকেন। এদের মাধ্যমে আসা টাকার ভাগ চলে যায় বিভিন্ন পর্যায়ে। আপনি যেই হোন না কেন, ঘুষের টাকা পরিশোধ না করলে আপনার কাজ হবেনা কোনো ভাবেই।

সূত্র জানায়, ভৈরব আর নূর নবীর অপকর্মের শিকার হয়ে মোহরার শহিদুল ইসলাম শহিদ খামাখা হাজত বাস করলেন। ঘুষ-দুর্নীতির মহানায়করা আড়ালে থেকে নিজেদের রক্ষা করে চলেছেন। এসব দুর্নীতিবাজদের শাস্তি না হওয়ায় রেজিস্ট্রি অফিসে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিসহ লাখ লাখ টাকা দিতে বাধ্য হয়।