জি এম কাদেরের কাছে ক্ষমা চাইলেন রাঙ্গা

জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা। বৃহস্পতিবার সংসদ ভবনে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের সভাপতিত্বে জাপার সংসদীয় দলের সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ছিলেন না দলের সকল পদ হারানো রাঙ্গা। এরপর তিনি উপনেতা জি এম কাদেরের কক্ষে গিয়ে ক্ষমা চান।

জাপায় নেতৃত্ব নিয়ে রওশন এরশাদ এবং জি এম কাদেরের বিরোধ বহু পুরোনো হলেও গত ৯ জানুয়ারি দেবর-ভাবি যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ‘পল্লিবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টিকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর।’

জাপা সূত্রের খবর, দু’পক্ষকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারি মধ্যস্থতায় সমঝোতা হয়েছে। দু’পক্ষের মিলমিশ হলেও রওশনের পক্ষ নিয়ে জি এম কাদেরকে কুকথা বলা রাঙ্গা দলে ফিরতে পারেননি।

সংসদীয় দলের গতকালের সভায় জাপার ২৬ এমপির ১৮ জন অংশ নেন। হুইলচেয়ারে বসা রওশনের পাশে বসেন জি এম কাদের। সভা সূত্র জানায়, কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ এবং সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা ঐক্যের কথা বলেন। তাঁদের থামিয়ে দিয়ে রওশন বলেন, জাপায় বিরোধ নেই, সবাই ঐক্যবদ্ধ।

জি এম কাদের বলেন, জাপা আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেবে। বিএনপির এমপিদের পদত্যাগের শূন্য হওয়া ছয়টি সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে ভালো ফল করতে হবে।

জাপা সূত্রের খবর, রওশনপন্থিরা দলের পদে ফিরবেন। তবে জি এম কাদেরপন্থিদের ঘোর আপত্তি রাঙ্গা ও সাবেক এমপি জিয়াউল হক মৃধাকে নিয়ে। জিয়াউল হকের মামলায় আদালতের নিষেধাজ্ঞায় দলীয় চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না জি এম কাদের। হাইকোর্ট, আপিল বিভাগ ঘুরে গতকাল জেলা জজ আদালত নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখেছেন। ফলে রওশনের সঙ্গে সমঝোতা হলেও জি এম কাদের কতদিন নিষেধাজ্ঞায় থাকবেন- তা অনিশ্চিত।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও ভোট থেকে সরে গেছেন জিয়াউল হক। স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া আওয়ামী লীগের তিন নেতাও সরে গেছেন। বিএনপির দলছুট উকিল আবদুস সাত্তারকে জেতাতেই এ ‘আয়োজন’ বলে অভিযোগ। জিয়াউল হকের ভাষ্য, জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশনের নির্দেশে ভোট থেকে সরে গেছেন।

মসিউর রহমান রাঙ্গাও মামলা করেছেন জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে। হঠাৎ ক্ষমা প্রার্থনার বিষয়ে তিনি সমকালকে বলেছেন, ‘জি এম কাদের আমার আত্মীয় ও মুরব্বি। আর আমিও তো তাঁর সম্পর্কে ভালো কিছু বলিনি। তাঁর সঙ্গে সংসদে তো দেখা হয়। আজ (বৃহস্পতিবার) রুমে গিয়ে বলেছি, যদি আমার কথায় কষ্ট পেয়ে থাকেন, তাহলে আমি দুঃখিত।’ রাঙ্গা বলেছেন, দলীয় পদ থেকে বাদ পড়লেও জাপাতেই আছেন, থাকবেন।

জি এম কাদের বিএনপির সুরে কথা বলছেন, এমন কারণ দেখিয়ে তাঁকে নেতৃত্ব থেকে সরাতে রওশন গত ৩১ আগস্ট সম্মেলন ডাকলে জাপা ভাঙনের মুখে পড়ে। পাল্টা হিসেবে রওশনকে বিরোধীদলীয় নেতার পদ ছাড়া করার চেষ্টা করেন জি এম কাদের। ১ সেপ্টেম্বর দলের ২৬ এমপির ২৪ জনের সমর্থন নিয়ে স্পিকারকে চিঠি দেন। কিন্তু সপ্তাহখানেক পরই রওশনের পক্ষ নিয়ে সুর বদল করেন স্পিকারকে চিঠি পৌঁছে দেওয়া রাঙ্গা।

জাপা সূত্রের খবর, গত আগস্টে থেকে যা হয়েছে সবকিছু ছিল সরকারের নিয়ন্ত্রণে। বিবাদের জড়ানো দু’পক্ষই সরকারের পক্ষে। সরকার রওশনকে একতরফা সমর্থন দেয়নি আবার বছরখানেক ধরে সরকারের সমালোচনায় মুখর জি এম কাদেরকে চাপে রাখলেও ‘বন্ধুত্ব’ ভাঙেনি। সরকারের সমর্থনে রওশন জাপা বিভক্ত করলে, জি এম কাদেরের বিএনপির দিকে চলে যাওয়ার ঝুঁকি ছিল। সে কারণেই দু’পক্ষকেই নিয়ন্ত্রণে রাখে সরকার।