যশোরে বিষাক্ত মদপানে ৪ জনের মৃত্যু

las

নেশাজাতীয় বিষাক্ত মদ পান করে যশোর সদর উপজেলা আবাদ কচুয়া এলাকায় ৪জনের প্রানের বাতি নিভে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় অসুস্থ্য অবস্থায় সদর হাসপাতাল ও বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আরও কয়েকজন। গত ২৫ জানুয়ারী বুধবার রাতে তারা ওই নেশাজাতীয় দ্রব্য পান করলেও বিষয়টি শুক্রবার ২৭ জানুয়ারী রাতে জানাজানি হয়।

নিহতরা হলেন, যশোর সদর উপজেলার আবাদ কচুয়া গ্রামের মৃত আবদুল হামিদের ছেলে ইসলাম (৪৫), শাহজাহান আলীর ছেলে জাকির হোসেন (২৯)। আবু বক্কর মোল্লার ছেলে আবুল কাশেম (৬৫), আব্দুল হামিদের ছেলে ইসলাম(৪৫)। এছাড়া হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেরন সিতারামপুর গ্রামের মনিরুদ্দীনের ছেলে বাবলু (২৮) এবং একই গ্রামের আনোয়ার মোড়লের ছেলে রিপন হোসেন মোড়ল (৩৬)।

এদিকে,নেশা জাতীয় বিষাক্ত দ্রব্য সেবন করে মৃত্যুর খবর পেয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর জেলা কার্যালয় ক সার্কেলের সদস্যরা নিহতদের বাড়ি ঘরে খোঁজ খবর নিতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (অতিঃ দায়িত্ব) থাকা হুমায়ূন কবীর খন্দকার। শনিবার ২৮ জানুয়ারী দুপুরে এ প্রতিবেদকের সাথে তার মুঠোফোনে আলাপকালে তিনি এই কথা জানান।

যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার (২৫ জানুয়ারি) রাতে যশোর সদর উপজেলার ১৩ নং আবাদ কচুয়া গ্রামের একটি মেহগনি ও লিচু বাগানে ওই পাঁচজন বিষাক্ত নেশাজাতীয় দ্রব্য পদ পান করেন। রাতেই তারা সেবনের পরপর পর্যায়ক্রমে অসুস্থ্য হয়ে পড়লে নিজ নিজ বাড়িতে গ্রাম্য চিকিৎসকের চিকিৎসা নেন তারা। কিন্তু অবস্থার অবনতি হলে ইসলামকে বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) ভোরে তথ্য গোপন করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই দিন দুপুরের দিকে ইসলাম মারা যায়। এরপর পরিবারের সদস্যরা দ্রুত ছাড়পত্র ছাড়াই মৃতদেহ হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নিয়ে চলে যায়।

অপরদিকে, আক্রান্ত বাকী চারজন বাড়িতে আরও অসুস্থ্য হয়ে পড়লে শুক্রবার ২৭ জানুয়ারী সকালে তারা একে একে যশোর হাসপাতালে ভর্তি হন। এর মধ্যে জাকির হোসেন দুপুর পৌনে একটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। এরপরই নিহত ও আক্রান্তদের বিষাক্ত নেশাজাতীয় দ্রব্য পানের বিষয়টি জানাজানি হয়। ঘটনা জানাজানি হলে হাসপাতালে ভর্তি বাবলু ও রিপন হোসেন হাসপাতাল ছেড়ে বেসরকারি ক্লিনিকে সরে পড়েন। অপর অসুস্থ্য আবুল কাশেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় শুক্রবার ২৭ জানুয়ারী রাতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।

যশোর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আব্দুর রশিদ সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জানান, স্বজনরা তথ্য গোপন করে রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি করেন। তবে রোগীদের মুখে গন্ধ থেকে বোঝা যায় তারা সকলে অতিরিক্ত ও বিষাক্ত নেশাজাতীয় দ্রব্য পানের ফলে তারা অসুস্থ্য হয়ে পড়েন।

যশোর কোতোয়ালি মডেল ওসি তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে জবাবে জানান, নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবনে মৃত্যু ও অসুস্থ্য হওয়ার খবর তারা পেয়েছেন। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বা অন্যকেউ তাদের কাছে কোনো অভিযোগ করেনি। খবর পাওয়ার পর বিষয়টি তারা খোঁজ খবর নিতে শুরু করেছেন।

এদিকে, শনিবার দুপুরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর জেলা কার্যালয়ে দায়িত্ব প্রাপ্ত উপ-পরিচালক হুমায়ুন কবীর খন্দকারের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, তারা মৃত্যুর খবর পেয়ে মাদকদ্রব্য বিভাগে কর্মরত কর্মকর্তা ও সদস্যদের এলাকায় খোঁজখবর নিতে পাঠিয়েছেন।

সূত্রগুলো জানিয়েছেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর জেলা কার্যালয়ে ক সার্কেলের অধীনে সদর উপজেলার আশপাশ এলাকা। অথচ এই সার্কেলে পরিদর্শক লায়েকউজ্জামান, উপ-পরিদর্শক এসএম শাহীন পারভেজসহ উপ সহকারী পরিদর্শক ও সদস্য থাকা সত্বেও যাদের মদ সেবনের অনুমতি (লাইসেন্স নাই) তারা কিভাবে মদ সংগ্রহ করে সেবন করে। নিহত ও আক্রান্ত ব্যক্তিদের মদ সেবনের কোন লাইসেন্স নেই।

সূত্রগুলো আরো জানিয়েছেন, যশোর শহরের বাবু বাজার পতিতালয় সংলগ্ন এলাকায় ছোট মহাসিন, আনারুল, শাহীন ও রাসেল সম্পূর্ণ অবৈধভাবে চোলাই মদ বিক্রি করছে। অথচ এরা সব সময় থেকে যাচ্ছে ধরা ছোয়ার বাইরে।

সূত্রগুলো বলেছেন, ছোট মহাসিন, আনারুল, শাহীন ও রাসেল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর জেলা কার্যালয় ক সার্কেলের কতিপয় কর্মকর্তার সাথে মাসিক চুক্তিতে অবাধে অবৈধভাবে চোলাইমদ বেচাকেনা করছে।

অপর একটি সূত্র বলেছে,বাবু বাজার পতিতালয় থেকে সদর পুলিশ ফাঁড়ী ও কোতয়ালি মডেল থানা মাত্র দুইশ’ থেকে ৫শ’ গজ দূরে। পুলিশ দেখেও না দেখার ভান করে।

উল্লেখ্য, বছর কয়েকপূর্বে যশোর শহরের বড় বাজার এলাকায় গড়ে ওঠা মদের দোকান থেকে মদ সেবন করে ১৫ জনের প্রানহানীর ঘটনা ঘটে। সেই সময় আক্রান্ত হয় প্রায় ১০জন। ১৫ জনের মৃত্যুর ঘটনার পর থেকে চোলাইমদ বেচাকেনার উপর পুলিশের নিষেধাজ্ঞা জারী হয়। এরপর আস্তে আস্তে চোলাইমদ বেচা কারবারীরা চোলাইমদ বিভিন্নভাবে সংগ্রহ করে যশোর শহরের দুই স্থানে অবাধে বিক্রি করছে। এ ব্যাপারে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মহোদয় অবগত নন বলে জানান।