সমর্থকদের কেন্দ্রে যেতে বারণ বিএনপির

bnp logo

বগুড়ায় আজ দুটি আসনে উপনির্বাচনে ভোট না দিতে বিএনপির নেতাকর্মীদের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দলের পক্ষ থেকে। বলা হয়েছে, নির্দেশ অমান্য করে ভোটকেন্দ্রে গেলে এলাকার নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গতকাল মঙ্গলবার দলের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়। এদিকে ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে উপনির্বাচনে ভোট না দিতে বিএনপি নেতাকর্মীদের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দলের পক্ষ থেকে।

 

বগুড়া ব্যুরো জানায়, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাফতুন আহম্মেদ খান রুবেল বলেছেন, দলের কোনো নেতাকর্মী কারও পক্ষে ভোট করছেন কিনা, সে বিষয় আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। ভোটারদের কেউ প্রলোভনে পড়ে ভোটকেন্দ্রে যান কিনা- সে বিষয়েও নজরদারি করা হবে।

বগুড়াকে বিএনপি তাদের দুর্গ বলে দাবি করে। অতীতের নির্বাচন নিয়ে পর্যালোচনা করে দেখা যায়, অন্য দলের চেয়ে বিএনপির ভোট বগুড়া-৬ (সদর), বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম), বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) ও বগুড়া-৩ (আদমদীঘি-দুপচাঁচিয়া) আসনে অনেক বেশি।

সদর ও কাহালু-নন্দীগ্রাম আসনে বিএনপি বিজয়ী হয়ে আসছে দলের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে। এই দুই আসনে যাঁকেই বিএনপি সমর্থন দেয়, তিনিই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বিপুল ভোটে। এবার বিএনপির ছেড়ে দেওয়া আসন দুটিতে বিভিন্ন দলের মোট ১৯ প্রার্থী আছেন।

কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্যদের সমর্থন চেয়েছিলেন। তবে তাঁরা কাউকে সমর্থন দেননি বলে জানা গেছে। আবার স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কেউ কেউ জামায়াতের সমর্থন পাবেন বলে মনে করেছিলেন। জামায়াতও প্রকাশ্যে কোনো প্রার্থীকে সমর্থন দেয়নি।

বগুড়া-৪ আসনে সাবেক বিএনপি নেতা কামরুল হাসান জুয়েল (কুড়াল) এবং বগুড়া-৬ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল মান্নানকে (ট্রাক) জামায়াত সমর্থন দিয়েছে বলে শোনা গেলেও জামায়াতের পক্ষ থেকে তা অস্বীকার করা হচ্ছে। বগুড়া শহর জামায়াতের আমির মো. আবিদুর রহমান সোহেল বলেন, জামায়াত কেয়ারটেকার সরকার ছাড়া নির্বাচন করবে না। অন্য কাউকে উপনির্বাচনে সমর্থন দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।

বগুড়া-৬ সদর আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে সাবেক বিএনপি নেতা সরকার বাদল বলেছেন, তাঁকে বিএনপি সমর্থন দিয়েছে গোপনে। কিন্তু জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনা বলেন, অনেকেই সুবিধা নেওয়ার জন্য বিএনপির নাম ভাঙানোর চেষ্টা করছেন। দুই আসনে বিএনপির কেউ ভোটকেন্দ্রে গেলে এলাকার নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাঁদের এই সিদ্ধান্ত নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ কিনা, জানতে চাইলে হেনা বলেন, আমরা ভোটে নেই। তাই আইন-কানুন মানার প্রশ্নও নেই।

রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, কোনো ভোটারকে আটকে রাখার সুযোগ নেই। ভোট হবে বাধাহীন। কোনো দল বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে এ ধরনের কার্যকলাপের অভিযোগ পাওয়া গেলে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বগুড়া-৪ আসনে পদত্যাগ করা বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য মোশারফ হোসেন বলেন, এটি একটি তামাশার নির্বাচন। এই নির্বাচনে বিএনপি নেই। বিএনপির অন্য কাউকে সমর্থন দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। দু-একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী সমর্থনের জন্য নানা মাধ্যমে প্রস্তাব দিলে তা প্রত্যাখ্যান করেছি।

একই রকম কথা বলেন বগুড়া-৬ আসনের পদত্যাগ করা গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ। তিনি বলেন, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে আমরা কোনো কাজ করি না। চাইলেই কেউ সমর্থন পাবে না।

বগুড়ার দুই আসনে ইভিএমে ভোট হবে। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ সংশ্নিষ্টরা।

দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও পীরগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, ঠাকুরগাঁও-৩ (পীরগঞ্জ-রানীশংকৈল) আসনে উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ আজ বুধবার। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী সব প্রার্থীই। তবে দলীয় সিদ্ধান্তে আসনটি ছেড়ে দেওয়া বিএনপি নেতা জাহিদুর রহমান জাহিদ নেতাকর্মীদের ভোটকেন্দ্রে যেতে নিষেধ করেছেন।

গতকাল মঙ্গলবার পীরগঞ্জ পীরডাঙ্গী ঈদগাহ মাঠে জানাজা শেষে উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, কেন্দ্রে গোলযোগ হলে সব দোষ আমাদের ওপর আসবে। মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করা হবে। বিএনপি সব সময় প্রহসনের নির্বাচনের বিপক্ষে। এ নির্বাচনে ভোট দিতে যাওয়া-না যাওয়া একই। অবশ্য আগেও জাহিদ দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা কিংবা কোনো অনুষ্ঠানে কথা বলার সুযোগ পেলে একই পরামর্শ দিয়েছেন।

জাহিদের বক্তব্য নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজওয়ানুল হক বিপ্লব এ বক্তব্যকে অগণতান্ত্রিক অ্যাখ্যা দিয়েছেন। উপজেলা জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দবিরুল ইসলাম বলেন, বিএনপি নেতার কথার জবাব জনগণ ব্যালটের মাধ্যমেই দেবে। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা কমিটি সদস্য তাজুল ইসলাম বলেন, জাহিদুর রহমান বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করছেন। তাঁকে আইনের আওতায় আনা উচিত।

এ বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা জি এম সাহাতাব উদ্দীন জানান, কারও বক্তব্য নিয়ে তাঁদের মাথাব্যথা নেই। নির্বাচন কমিশন কেন্দ্রে এসে নির্বিঘ্নে ভোটদানের পরিবেশ তৈরি করেছে। সবাইকে আসার আহ্বান জানিয়েছে। তবে কেন্দ্রে আসতে কেউ বাধা দিলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।