সব শ্রেণির সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে চার বছর আগে। গাড়ি চালকদের লাইসেন্সের জন্যও অন্তর্ভুক্ত করা হয় এই টেস্ট। এরই মধ্যে বাতিল করে দেওয়া হয়েছে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) নিয়ন্ত্রণাধীন পুরো প্রকল্প। পাশাপাশি সরকারের সব কারিগরি মতামত নিয়ে আগে নীতিমালা প্রণয়ন করার নির্দেশনা প্রস্তাব দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সময় বিদ্যমান ব্যবস্থার সঙ্গে ‘ডোপ টেস্ট’ অন্তর্ভুক্ত করতে এক প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। উপসচিব দীপংকর বিশ্বাস স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, “স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কর্তৃক গঠিত মেডিকেল বোর্ড অথবা ক্ষেত্রবিশেষে, তৎকর্তৃক মনোনীত কোনো মেডিকেল অফিসার কর্তৃক স্বাস্থ্যবিষয়ক যেসব পরীক্ষা করা হয় তার সঙ্গে ‘ডোপ টেস্ট’ অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।” এরপর ডোপ টেস্ট বাস্তবায়নে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ৮৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নেয়। এ প্রকল্পের আওতায় আটটি বিভাগীয় শহরে এবং ১২টি জেলায় মাদকাসক্ত শনাক্তকরণ পরীক্ষা (ডোপ টেস্ট) কেন্দ্র তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর সময়কাল ধরা হয় ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু এর আগেই গত ১১ ডিসেম্বর পরিকল্পনা কমিশন এক জুম মিটিংয়ের মাধ্যমে এই প্রকল্প বাতিল করে দেয়। পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) সত্যজিত কর্মকারের সভাপতিত্বে ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ডিএনসি প্রতিনিধি ছাড়াও ১২টি বিভাগের কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়, মাদকের ভয়াল থাবা রোধে প্রাথমিক ধাপ হিসেবে মাদকগ্রহণের প্রমাণের জন্য ডোপ টেস্ট আবশ্যক। মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ অনুযায়ী মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ডোপ টেস্টের এখতিয়ার রয়েছে। বর্তমানে স্বল্প পরিসরে ডোপ টেস্ট হচ্ছে। এর বিস্তৃতি জরুরি। সরকারি চাকরি প্রার্থী ছাড়াও বেসরকারি চাকরিজীবী এবং সরকারি চাকরিতে কর্মরত ড্রাইভারসহ বিদেশে যাওয়া জনশক্তির নিয়মিত ডোপ টেস্টের বিষয়টি বিবেচনায় ডিএনসি পাঁচ বছর মেয়াদি প্রকল্পটি হাতে নিয়েছে। ইতোমধ্যে ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট ও বরিশালে বিভাগীয় রাসায়নিক পরীক্ষাগার নির্মাণ করে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়েছে।
কার্যবিবরণীর সিদ্ধান্তে বলা হয়, মাদকাসক্ত শনাক্তকরণ পরীক্ষার ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ যেসব সংস্থা এই কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত তাদের গ্রহণযোগ্য ও কারিগরি বিষয়সমূহ বিবেচনায় নিয়ে মাদকাসক্ত শনাক্তকরণ বা ডোপ টেস্টের বিষয়ে একটি চূড়ান্ত ও কার্যকর নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। নীতিমালার আওতায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ তাদের পরিচালনা ব্যয় থেকে ডোপ টেস্ট প্রকল্পের কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে পরিচালনা করবে এবং এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশের সর্বত্র ডোপ টেস্টের ব্যবস্থা না থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন গাড়ি চালক ও সরকারি চাকরি প্রার্থীরা। মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রকল্প বাতিল হওয়ায় এই ভোগান্তি আরও বাড়ার আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
এদিকে বিআরটিএ গত বছরের ১২ জানুয়ারি পেশাদার মোটরযান লাইসেন্সের জন্য ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করে একটি পরিপত্র জারি করে। চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার স্বাক্ষরিত ওই পরিপত্রে বলা হয়, ‘চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়নকালে প্রার্থীদের আবেদনপত্রের সঙ্গে সরকারি হাসপাতাল কর্তৃক সম্পাদিত ডোপ টেস্ট রিপোর্ট/সনদ দাখিল করতে হবে। রিপোর্টে কেউ মাদকাসক্ত হলে তাকে লাইসেন্স দেওয়া হবে না। ডোপ টেস্ট সারা দেশের সব পর্যায়ে সরকারি হাসপাতালে এবং ঢাকা মহানগরীর ক্ষেত্র ছয়টি প্রতিষ্ঠানে করা যাবে।’ পরিপত্র অনুযায়ী মহানগরীর যেসব হাসপাতালে ডোপ টেস্ট করা যায় সেগুলো হলো-ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টার, জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় অর্থোপেডিট হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান এবং কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল। এ ছাড়াও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অধীনে বা অনুমোদিত যেকোনো ল্যাব বা প্রতিষ্ঠানেও ডোপ টেস্ট করা যাবে বলে পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়। মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) আবদুল ওয়াহাব ভূঞা বলেন, আমাদের প্রকল্প বাতিল হলেও ডোপ টেস্ট প্রক্রিয়া চলমান থাকবে। আমরা আমাদের কিছু ল্যাব প্রস্তুত করেছিলাম, সেগুলো ধীরে ধীরে আরও আধুনিক করা হবে।