লাইনচ্যুত ওয়াগনের তেল ছড়িয়ে পড়েছে খালে

চট্টগ্রামে লাইনচ্যুত রেলওয়ের তিনটি ওয়াগন ২০ ঘণ্টা চেষ্টার পর উদ্ধার করতে পেরেছে রেলওয়ে। তবে ওয়াগনে থাকা জ্বালানি তেল খালে ছড়িয়ে পড়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জোয়ার-ভাটার কারণে খাল হয়ে তেল নদীতে ছড়াবেই। বেশি এলাকাজুড়ে এমন তেল ছড়িয়ে পড়লে মৎস্যসম্পদসহ জীববৈচিত্রের ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের। তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, ছড়িয়ে পড়া তেলের পরিমাণ অল্প, তাই ক্ষতির কোনো আশঙ্কা নেই।

ছড়িয়ে পড়া তেল সংগ্রহে বৃহস্পতিবার কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি রেলওয়েসহ কোনো সরকারি সংস্থাকে। বিভিন্ন লোকজনকে খাল থেকে তেল সংগ্রহ করতে দেখা গেছে। ছড়িয়ে পড়া তেল তুলতে আধুনিক কোনো প্রযুক্তি বা যন্ত্রপাতি নেই বলে জানিয়েছে রেলওয়ে।

বুধবার রাতে নগরের গুপ্তখাল এলাকায় অবস্থিত বিভিন্ন তেল কোম্পানি থেকে তেলভর্তি ট্রেনটি হালিশহরে রেলওয়ের চট্টগ্রাম গুডস পোর্ট ইয়ার্ডে (সিজিপিওয়াই) যাচ্ছিল। ইয়ার্ড এলাকায় লাইনচ্যুতির ঘটনা ঘটে। এতে তেলবাহী তিনটি ওয়াগন লাইনচ্যুত হয়। ৩৪ হাজার লিটার তেল ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ওয়াগনগুলোতে ডিজেল ছিল ৩০ হাজার লিটার করে। এরমধ্যে দুইটি ওয়াগনের অধিকাংশ তেল নিচে পড়ে গেছে। অন্যটির কিছু তেল পড়লেও রেলওয়ে কর্মীরা ঢাকনা আটকাতে সক্ষম হওয়ায় পুরোপুরি পড়তে পারেনি। তবে তিনটি ওয়াগন থেকে কী পরিমাণ তেল খালে ছড়িয়েছে তার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দিতে পারেনি রেলওয়ে কর্মকর্তারা। রেলওয়ের ব্যবহারের জন্য ডিজেলের এই চালানটি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল।

লাইনচ্যুত ওয়াগন উদ্ধারে কুমিল্লার লাকসাম থেকে উদ্ধারকারী ট্রেন নিয়ে আসা হয়। বুধবার রাতেই শুরু হয় উদ্ধার তৎপরতা। বৃহস্পতিবার বিকেল সোয়া ৪টার মধ্যে একে একে তিনটি ওয়াগন উদ্ধার করা হয়। এ প্রসঙ্গে সিজিপিওয়াই স্টেশনের মাস্টার আবদুল খালেক বলেন, ‘তিনটি ওয়াগনের একটি রাতে, আরেকটি সকালে উত্তোলন করে রেললাইনে বসানো হয়েছে। অন্যটি বিকেলে উদ্ধার করা হয়েছে।’

রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘তেল ছড়িয়ে পড়া রোধে কোনো প্রযুক্তি বা যন্ত্রপাতি না থাকায় কিছু তেল খালে ছড়িয়ে পড়েছে। লাইনচ্যুতির খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তেল যাতে বেশি জায়গায় ছড়াতে না পারে সে জন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। সে অনুযায়ী তেল ছড়িয়ে পড়া রোধে তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন।’
রেলওয়ের পূর্ব বিভাগীয় ব্যবস্থাপক আবিদুর রহমান বলেন, ‘তিনটি ওয়াগন লাইনচ্যুত হলেও তেল পড়েছে দুটি থেকে। তবে সব তেল পড়েনি। ওয়াগন সরিয়ে নেওয়ার সময় দেখা গেছে, অল্প কিছু তেল পড়েছে। যেগুলো নালা হয়ে খালের পানিতে মিশেছে।’

লাইনচ্যুত ওয়াগন থেকে পড়ে যাওয়া তেল মহেশখাল ও নদীতে ছড়িয়ে পড়ছে কি না তা দেখতে বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাস্থলে যান পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। তাঁরা শাখা খাল, মূল মহেশখাল ও কর্ণফুলী নদীর সংযোগস্থল থেকে একাধিক নমুনা সংগ্রহ করেছেন। পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, শাখা খালে ইছাক ব্রাদার্স ডিপোর দেওয়া স্লুইচগেটের মুখ বন্ধ থাকায় তেল বেশি ছড়াতে পারেনি।

পরিবেশ অধিপ্তরের পরিদর্শক মো. মনির জানান, মহেশখালের মুখে থাকা স্লুইচগেটটি বুধবার থেকে বন্ধ ছিল। গেটের ভেতর খালের পানির নমুনা ও বাইরে নদীর পানির নমুনা সংগ্রহ করেছেন তারা। খালের পানিতে তেলের উপস্থিতি আছে। নদীর পানিতে তেল ছড়িয়েছে কি না তা পরীক্ষার পর বলা যাবে। তবে খালি চোখে নদীর পানিতে খুব অল্প পরিমাণ তেল দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা পরিবেশ অধিদপ্তরের রসায়নবিদ জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘লাইনচ্যুত ওয়াগনগুলো থেকে পড়া তেলের কিছু অংশ মাটিতে মিশে গেছে। কিছু অংশ খালে ছড়িয়েছে। রেললাইনের পাশের খালে (শাখা খাল) যেরকম তেল ভাসতে দেখা দেখা গেছে তা মূল খালে দেখা যায়নি। মূলত স্লুইচ গেট দিয়ে পানি প্রবাহ বন্ধ থাকার খাল ও নদীতে বেশি তেল ছড়ায়নি।’

পরিবেশবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইদ্রিস আলী বলেন, ‘জোয়ারে কর্ণফুলী নদী থেকে মহেশখালে পানি ঢোকে। ভাটায় নদীতে নেমে আসে। পানির উপরিভাগে ছড়িয়ে পড়া তেল তো সম্পূর্ণ শুষে নেওয়া যাবে না। জোয়ার-ভাটায় তা নদীতে ছড়াবেই।’

এদিকে, ওয়াগন লাইনচ্যুতির ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তাকে (ডিটিও) প্রধান করে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে।