রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডের কারণ জানতে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি

কক্সবাজারের উখিয়া বালুখালীতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডের কারণ জানতে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. আবু সুফিয়ানকে প্রধান করে কমিটিটি গঠন করা হয়।

কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. আবু সুফিয়ান জানান, তাকে প্রধান করে গঠিত কমিটিতে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের কর্মকর্তা, ফায়ার সার্ভিস, এপিবিএন, পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধিরা সদস্য রয়েছেন। সোমবার সকাল থেকে গঠিত তদন্ত কমিটি অনুসন্ধানের কাজ শুরু করেছে। তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।

রোববারের আগুনে বালুখালী ১১ নাম্বার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দুটি ব্লক অধিকাংশ ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। অনেকে ধ্বংসস্তুপে খুঁজছেন হারিয়ে যাওয়া সহায় সম্বল। আবার অনেকে নিঃস্ব হয়ে ত্রিপলে আশ্রয় নিয়েছেন। বাড়তি কাপড়ও নেই তাদের কাছে।

ধ্বংসস্তূপের ত্রিপলে নিচে বসে মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘আগুনে পুড়ে সব নি:স্ব হয়ে গেছে। আমার চোখের সামনে সব কিছু শেষ হয়ে যাচ্ছিল, কিন্তু করার কিছু ছিল না। সন্তানদের কিছু কাপড় রক্ষা করছি, সেটি জোর করে টেনে হেঁছড়ে নিয়ে গেছে এক যুবক। আমরা সকাল থেকে কিছু খায়নি। এখানে খাবার ও পানি অভাব রয়েছে। বিশেষ করে শিশু ও নারীরা খুব বিপদে আছে।’

উখিয়া বালুখালী ক্যাম্পের নেতা সুলতান আহমদ বলেন,রোববার দুপুরে হঠাৎ ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। পরে চিৎকার শুনে লোকজন এদিক-ওদিক ছোটে। কোন মতে প্রাণে বাঁচতে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ি। কারণ আমার ঘরের পাশেই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আমদের ঘরবাড়ি সব সহায় সম্বল শেষ হয়ে গেছে।

পুড়ে যাওয়া ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে উখিয়া বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ইনচার্জ (সিনিয়র সহকারী সচিব) সরওয়ার কামাল জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ২ হাজারের বেশি ঘর পুড়ে গেছে। যে কয়েকজন নিখোঁজ ছিল তাদের খোঁজে পাওয়া গেছে। গৃহহারাদের প্রাথমিকভাবে প্রয়োজনীয় পানি ও রান্না করা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। সরওয়ার কামাল বলেন,এই মূহূর্তে ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের মানবিক সহতায় খুবই দরকার। এ কারণে আমরা এখন সেদিকে বেশি নজর দিচ্ছি। পাশাপাশি আমরা বাঁশ, ত্রিপল দিচ্ছি যাতে দ্রুত নতুন ঘরে ঠাঁই হয় তাদের।

জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, আশ্রয়শিবিরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে সাত সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) আবু সুফিয়ান। আজ থেকে কমিটি তদন্ত শুরু করবে এবং তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে।

এ প্রসঙ্গে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন,অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নাশকতা কি-না, তা উড়িয়ে দিচ্ছি না। সন্দেহভাজন একজনকে এরই মধ্যে আটক করা হয়েছে। এটি পরিকল্পিত ঘটনা কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাছাড়া গঠিত তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করছে।

এর আগে , ২০২১ সালে ২২ মার্চ একই ক্যাম্পসহ পাশ্ববর্তী তিনটি ক্যাম্পে বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল। সে সময় আগুনে দশ হাজারেরও বেশি বসতঘর পুড়ে যায়। অগ্নিকাণ্ডে ৪০ হাজার রোহিঙ্গা সদস্য গৃহহারা হয়েছিল। এছাড়া দগ্ধ হয়ে দুই শিশুসহ ১৫ জন রোহিঙ্গা মারা যায়। ওই ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দাখিল করেছিল। এতে ভবিষ্যতে ক্ষয়ক্ষতি ও জানমাল রক্ষায় ১৩ দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছিল। কিন্তু সেগুলো বাস্তবায়িত হয়নি বলে জানিয়েছেন রোহিঙ্গা নেতারা।