সাকিব সাকিবই

shakib

সাজঘরের বার্তা– খুবই আনন্দ করছেন সাকিব! কথার ফুলঝুরি ফোটাচ্ছিলেন সতীর্থদের ঘিরে। হইহুল্লোড় আর হাসি-আনন্দের কেন্দ্রবিন্দুতে তিনি। এ মুহূর্তে সংবাদ সম্মেলনে যাওয়ার মুডে নেই সাকিব। সত্যিই তো, রেকর্ড গড়া দিনে যা যা করার কথা, তাই তাই করছিলেন সব্যসাচী এ ক্রিকেটার। আনন্দ আড্ডা থেকে অযথা তুলে আনার কোনো মানে হয় না। তাঁকে তাঁর মতোই থাকতে দেওয়া হলো এই বিশেষ দিনে। বিশেষ দিন এ কারণে– প্রথম বাংলাদেশি বোলার হিসেবে একদিনের ক্রিকেটে ৩০০ উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়েছেন।

ইংল্যান্ডের কাছে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা থেকে মুক্তি দিয়েছেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। ৭৫ রান আর ৪ উইকেট সাকিবকে বসিয়েছে রেকর্ডের আসনে, যে রেকর্ড দলকে পৌঁছে দিয়েছে জয়ের বন্দরে। অধিনায়ক তামিম ইকবাল তাই সংবাদ সম্মেলনে উচ্ছ্বসিত প্রশংসায় ভাসালেন জাতীয় দলের এ সতীর্থকে, ‘সাকিবের মতো একজন ক্রিকেটার থাকা যে কোনো দলের জন্য আশীর্বাদ।’

সাকিবের আবেগ চাপা। কোনো কিছুতেই আনন্দের আতিশয্যে ভেসে যেতে দেখা যায় না তাঁকে। আর রেকর্ড নিয়ে কবেই বা মাতামাতি করেছেন। এই সিরিজ শুরুর আগে তাঁকে যখন হোয়াটসঅ্যাপে জানানো হলো ‘৬ উইকেট লাগে।’ পাল্টা প্রশ্নে জানতে চেয়েছিলেন, কেন? এরপর খোলাসা করে বলা হলো, একদিনের ক্রিকেটে ৩০০ উইকেটের মাইলফলক পেতে হলে তাঁকে তিন ম্যাচ থেকে ৬টি উইকেট নিতে হবে। প্রত্যুত্তর ছিল এক শব্দে– ওকে। লো স্কোরিং প্রথম ম্যাচে রান করতে পারেননি। বোলিং দিয়ে তা পুষিয়ে দেবেন আশা করা হচ্ছিল। বোলিং ভালোও করলেও একটি মাত্র উইকেট নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হলো। পরের ম্যাচেও ১ উইকেট।

ওই দুটি ম্যাচই জিতেছিল ইংল্যান্ড। মিরপুরে সিরিজ হেরে যাওয়ায় দলের কাছে বেশি কিছু প্রত্যাশা ছিল না। সাকিব যে রেকর্ড গড়তে পারছেন না, সে রকম একটা ধারণা খচখচানি বাড়িয়েছিল সমর্থকদের মনে। কিন্তু সব ধারণা ভুল প্রমাণ করে ৪ উইকেট শিকার করে শেষ ম্যাচে রেকর্ড গড়েন। একদিনের ক্রিকেটে ৩০০ উইকেট পাওয়া বিশ্বের ১৪তম বোলার তিনি। ব্যক্তিগত এই অর্জনের চেয়ে সাকিবকে বেশি স্পর্শ করল দলের জয়। কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে ভরা সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, সাকিবের কাছে দল সবার আগে। গতকাল ম্যাচসেরা হয়ে পুরস্কারের মঞ্চে দাঁড়িয়ে বাঁহাতি এ অলরাউন্ডার দলের জয় নিয়েই বলেছেন, ‘দেশের মাটিতে পাঁচ-সাত বছর ধরে ভালো করছি আমরা। অনেক কিছু করে দেখাতে পেরেছি। এই সিরিজে আমরা হোয়াইটওয়াশের দিকে এগোচ্ছিলাম। সৌভাগ্যক্রমে আমরা লড়াই করে ফিরে এসেছি এবং ম্যাচ জিতেছি। আমাদের মনে হয়েছিল ২০ থেকে ৩০ রান কম হয়ে গেছে। বোলাররা ভালো করায় সেটা কাভার হয়ে গেছে।’

সিরিজ শেষ হওয়ায় অধিনায়ক তামিম সংবাদ সম্মেলনে এলেন। দেশি-বিদেশি মিডিয়ার প্রশ্নের উত্তরে সাকিবকে প্রশংসায়ও ভাসালেন, ‘আমার মনে হয় আজ তার পারফরম্যান্স অসাধারণ। পুরো ক্যারিয়ারে অসাধারণ করেছে। আমি সবসময় বলি, যে কোনো দল সাকিবের মতো ক্রিকেটার পেলে ধন্য হবে।’ তামিমের কথার সূত্র ধরেই বলা যায়, সাকিব সাকিবই।