বিদেশি কর্মী নিয়োগে নতুন আবেদন নেবে না মালয়েশিয়া

Foreign workers harvesting oil palm fruits at a plantation in Dengkil. Photo for the story Palm oil plantation are lack of workers. (9/5/2022). —AZHAR MAHFOF/The Star

নতুন করে বিদেশি কর্মী নিয়োগের কোটা অনুমোদনের আবেদন গ্রহণ করবে না মালয়েশিয়া। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তা স্থগিত থাকবে বলে শনিবার বিবৃতিতে জানিয়েছেন দেশটির মানবসম্পদমন্ত্রী ভি শিবকুমার। বাংলাদেশসহ ১৫টি সোর্স কান্ট্রির জন্য এ নিয়ম প্রযোজ্য হবে।

বাংলাদেশের কুয়ালালামপুর হাই কমিশনের লেবার মিনিস্টার নাজমুস সাদাত সেলিম সমকালকে বলেছেন, ‘এই নিয়মের ফলে নতুন করে কর্মী নিয়োগের চাহিদাপত্র দিতে পারবেন না মালয়েশিয়ার নিয়োগকারীরা। গত ১৪ মার্চ পর্যন্ত দেওয়া চাহিদাপত্রের বিপরীতে কর্মী নিয়োগ অব্যহত থাকবে। তাদের নিয়োগ সম্পন্নের পর মালয়েশিয়া সরকার যাচাই করে দেখবে, আরও বিদেশি কর্মীর প্রয়োজন আছে কি না। যদি প্রয়োজন থাকে, তাহলে আবার আবেদন গ্রহণ করা হবে।’ লেবার মিনিস্টার জানান, এ নিয়মের ফলে মালয়েশিয়া যেতে ইচ্ছুক বাংলাদেশের কর্মীদের ক্ষতি হবে না।

নিয়োগকারীদের আবেদনে, বিভিন্নখাতে বিদেশি কর্মী নিয়োগে গত ১৪ মার্চ পর্যন্ত ৯ লাখ ৯৫ হাজার ৩৯৬ জনের কর্মসংস্থানের অনুমতি দিয়েছে মালয়েশিয়া সরকার। আগে কর্মী নিয়োগের চাহিদাপত্র দেওয়ার পর তা অনুমোদনে এক মাস পর্যন্ত সময় লেগে যেতো। গত জানুয়ারিতে দেশটি ফরেন ওয়ার্কার অ্যামপ্লয়মেন্ট রিল্যাপেশন প্ল্যান (পিকেপিপিএ) ঘোষণা করে। বিদেশি কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করতে তিন দিনের মধ্যে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে পিকেপিপিএ পদ্ধতিতে।

বাংলাদেশ হাই কমিশন সূত্র জানিয়েছে, এতে অনুমোদন প্রক্রিয়া দ্রুততর হলেও এত বিপুল সংখ্যক কর্মী নিয়োগ করা যাচ্ছে না। আগের কঠোর যাচাইবাছাই কমে যাওয়ায়, অনেক প্রতিষ্ঠান টাকার বিনিময়ে চাহিদাপত্র দিচ্ছে। কিন্তু কর্মী মালয়েশিয়ায় এসে প্রতিশ্রুত চাকরি পাচ্ছে না।

দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ২০১৮ সালে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ বন্ধ করে মালয়েশিয়া। দীর্ঘ আলোচনা পর ২০২১ সালে দুই দেশের চুক্তি হয়। গত আগস্ট থেকে ফের কর্মী যাচ্ছে। গত ৫ মার্চ পর্যন্ত মালয়েশিয়ার নিয়োগদাকারীরা বাংলাদেশ থেকে ৩ লাখ ১৪ হাজার ৪৭৩ জন কর্মী নিতে দেশটির সরকারের কাছ থেকে অনুমোদন পেয়েছেন। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে মাত্র ১ লাখ ২১ জন কর্মী যেতে পেরেছেন মালয়েশিয়ায়। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) ছাড়পত্র পেয়েছেন আরও ১ লাখ ৯ হাজার ৫০০ জন কর্মী। সারাদেশে লাখ লাখ কর্মী মালয়েশিয়া যেতে ইচ্ছুক হলে বাকি ১ লাখ ৪ হাজার ৯৫২টি কোট এখনও অব্যবহৃত রয়েছে।

২০১৮ সাল পর্যন্ত ১০ রিক্রুটিং এজেন্সি বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠিয়েছে। যারা সিন্ডিকেট নামে পরিচিত পায়। ২০২২ সালে কর্মী পাঠানোর কাজ পায় ২৫ এজেন্সির ‘সিন্ডিকেট’। পরে দুই দফায় আরও ৭৫ এজেন্সিকে অনুমোদন দেওয়ায়। রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো বলছেন, সিন্ডিকেট না গত সাত মাসে অন্তত সাড়ে তিন লাখ কর্মী মালয়েশিয়ায় যেতে পারতেন।

মালয় মানবসম্পদমন্ত্রী বিবৃতিতে বলেছেন, অনুমোদিত কোটার তুলনায় বিদেশি কর্মীর মালয়েশিয়ায় আসার সংখ্যা এখনও কম। ১৪ মার্চ পর্যন্ত দেওয়া অনুমোদনের বিপরীতে নিয়োগ সম্পন্নের নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেছেন, এর মাধ্যমে বিদেশি কর্মীর চাহিদা পূরণ সম্ভব হবে।

গত ১ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশ হাইকমিশন ২ লাখ ১৯৯ জন কর্মী নিয়োগের চাহিদাপত্র সত্যায়ন করেছেন। ই-ভিসা দেওয়া হয় ১ লাখ ২২ হাজার। নাজমুস সাদাত সেলিম সমকালকে বলেছেন, মাসে ৫০ হাজারের বেশি চাহিদাপত্র এলে তা যাচাই করা কঠিন। এতে অনেক টাকা খরচ করে আসা কর্মীরা প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই আগের অনুমোদিত চাহিদাপত্রের কর্মী নিয়োগ নিষ্পত্তি করাই ভালো।

মালয়েশিয়া যেতে ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকা খরচ নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। কিন্ত এজেন্সিগুলো কর্মী প্রতি চার লাখ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছে। মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল গত মাসে বাংলাদেশ সফরে এসে, অভিবাসন ব্যয় কমানো এবং কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় গতি বাড়াতে আলোচনা করেন।