সশস্ত্র বাহিনীকে সক্ষম করে গড়ে তোলা হচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী

শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার সশস্ত্র বাহিনীকে এমনভাবে গড়ে তুলছে যাতে বাংলাদেশ কোনভাবে আক্রান্ত হলে তারা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা কারো সঙ্গে যুদ্ধ করবো না। তবে, যদি কখনো তেমন পরিবেশ-পরিস্থিতি হয় তাহলে যেন আমরা দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে পারি সেইভাবে আমাদেরও দক্ষতা অর্জন করতে হবে এবং সেইভাবেই আমরা আমাদের বাহিনীগুলোকে তৈরী করে দিচ্ছি।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ অপরাহ্নে বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর নবনির্মিত ‘বানৌজা শেখ হাসিনা’ সাবমেরিন ঘাঁটির কমিশনিং অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কক্সবাজারের পেকুয়ায় নবনির্মিত ঘাঁটির সঙ্গে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।

জাতির পিতার দিয়ে যাওয়া পররাষ্ট্রনীতি ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়,’ এর উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমর সেই নীতিতেই বিশ্বাস করি, আমরা কারো সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাই না। তবে, আমাদের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রতীক, তারা সকল ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করুক সেটাই আমরা চাই।

তিনি বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনেও আমাদের সশস্ত্র বাহিনী বিশাল ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। সেখানে কর্তব্য পালনে তারা যেন কোনভাবেই পিছিয়ে না থাকে সেভাবেই আমরা এই বাহিনীগুলোকে প্রস্তুত করছি।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি আশা করি দেশপ্রেমের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে নৌ-বাহিনীর প্রতিটি সদস্য পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যে স্বপ্ন-সেই ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত, উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার কাজে তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে। এই সমুদ্র সীমায় আমাদের যে বিশাল সম্পদ রয়েছে সেই সমুদ্র সম্পদ যাতে আমাদের অর্থনীতিতে কাজে লাগে সেজন্য ‘ব্লু ইকোনমি’ নীতি বাস্তবায়ন করছে সরকার। তাছাড়া, এক্ষেত্রে আমাদের পর্যটন শিল্প গড়ে তোলা থেকে শুরু করে অনেক সুযোগ রয়েছে কাজ করার।

সরকার প্রধান দৃঢ় আস্থা প্রকাশ করে বলেন, বানৌজা শেখ হাসিনা ঘাঁটি সংযোজনের মাধ্যমে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা সুরক্ষিত রাখতে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সক্ষমতা আরো জোরালো হবে।

অনুষ্ঠানে বানৌজা শেখ হাসিনা ঘাঁটি থেকে নৌবাহিনীর একটি সুসজ্জিত একটি চৌকষ দল প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়।

নৌ-বাহিনী প্রধান এডমিরাল মোহাম্মদ শাহীন ইকবাল অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে নৌবাহিনী প্রধান বানৌজা শেখ হাসিনা ঘাঁটির প্রধান কমোডর এম. আতিকুর রহমানের নিকট কমিশনিং ফরমান হস্তান্তর করেন। এরপরই ঘাঁটিতে প্রথমবারের মত পতাকা উত্তলন করা হয়।

অনুষ্ঠানে সাবমেরিন ঘাঁটির ওপর একটি সংক্ষিপ্ত অডিও ভিজ্যুয়াল প্রেজেন্টেশনও প্রদর্শিত হয়।

আওয়ামী লীগ সরকার শুধু সামরিক ক্ষেত্রে সক্ষমতা বৃদ্ধিই নয় সামরিক বাহিনীর সদস্যদের জীবনের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করার ক্ষেত্রেও বহুমুখী পদক্ষেপ প্রহণ করেছে উল্লেখ করে তাদের জন্য বহুতল ভবন, বিনোদনের সুব্যবস্থা, সন্তানদের সুশিক্ষার জন্য বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনে তার সরকারের পদক্ষেপসমূহ তুলে ধরেন প্রধনমন্ত্রী।

তিনি বলেন, আমরা চাই আমাদের দেশ এগিয়ে যাবে এবং বাংলাদেশ আরো বেশি উন্নত-সমৃদ্ধ হবে। সকল বাধা বিপত্তি পেরিয়ে আমরা আমাদের উন্নতি ও সমৃদ্ধির সোপান ধরে এগিয়ে যাচ্ছি এবং বাংলাদেশ আজকে সারাবিশ্বের কাছে ‘উন্নয়নের রোলমডেল’। আমরা আজকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। ইনশাল্লাহ বাংলাদেশকে আমরা উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলে ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলবো। তাই, আমাদের নৌ-বাহিনীও স্মার্ট বাহিনী হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমরা সেভাবেই আমাদের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন করে গড়ে তুলছি।

’৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর কোন সরকারই বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার অধিকার রক্ষায় ভূমিকা রাখেনি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে দেশের সমুদ্র সীমার অধিকার আদায় ও সুরক্ষিত করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, সামুদ্রিক এলাকায় বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বঙ্গবন্ধু টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস অ্যান্ড মেরিটাইম জোনস অ্যাক্ট, ১৯৭৪ প্রণয়ন করেছিলেন। যদিও জাতিসংঘ এই আইন প্রণয়ন করে ১৯৮২ সালে। জাতির পিতা ঐতিহাসিক ৬ দফাতেও পূর্ব বাংলায় নৌবাহিনীর সদর প্রতিষ্ঠার দাবি তুলেছিলেন।