যশোরে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে টাকা আত্মসাতসহ ধর্ষনের অভিযোগে মামলা

সদর উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামের এক স্বামী পরিত্যক্তা গৃহবধূ (৪০)কে ভূল বুঝিয়ে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর পূর্বক ধর্ষন ও ভারতের পতিতাবৃত্তির জন্য পাচার করাসহ পতিতা পল্লীতে আবদ্ধ করে রাখার অভিযোগে কোতয়ালি থানায় চারজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

রোববার দিবাগত গভীর রাতে মামলা করেন,যশোর সদর উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামের এতিম বিধবা নারী। মামলায় আসামী করেন, যশোরের অভয়নগর উপজেলার দেবভিটা গ্রামের রাজ্জাক খাঁর ছেলে মফিজুর খাঁ,সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া থানার মির্জানগর গ্রামের মমিন খাঁর ছেলে সোহাগ খাঁ, সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া থানার দিয়াড়া গ্রামের রাজ আলী গাজীর ছেলে সফিজুল গাজী ও সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া থানার দিয়াড়া গ্রামের ম ৃত সাখাত গাজীর ছেলে আনছার আলী।

মামলায় বাদি উল্লেখ করেন, বাদি যশোরের অভনগর উপজেলার মশরহাটি পরশ রাইস মিলে কাজ করার সুবাদে মফিজুর খাঁর সাথে বাদি সুসর্ম্পক গড়ে ওঠে। সেই সুবাদে মফিজুর খাঁ বাদির বাড়িতে মাঝে মাঝে আসা যাওয়া করতে থাকে। ঘনিষ্ট সম্পর্কের এক পর্যায় মফিজুর খাঁ বাদিকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ফুসলিয়ে অবৈধ মেলামেশা করতে থাকে। বিষয়টি বাদির পরিবারে জানাজানি হবার পর বাদির পরিবারের লোকজন মফিজুর খাঁর উপর চাপ সৃষ্টি করলে মফিজুর খাঁ বাঁচার তাগিদে সোহাগ খাঁ, সফিজুল গাজী ও আনছার আলীকে সঙ্গে নিয়ে বাদিকে নিয়ে ধোপাদী টু সুন্দলী রোডে অবস্থিত মাওলানা হোসাইন কাজীর কাজী অফিসে যেয়ে সোহাগ খাঁ,সফিজুল গাজী ও আনছার আলীকে স্বাক্ষী মেনে গত জুন মাসের ১১/১২ তারিখে মফিজুল খাঁ বাদিকে বিয়ে করে। বিয়ের পর মফিজুর খাঁ তার প্রথম স্ত্রীর দুই বছরের সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে বাদির পিতার বাড়িতে আশ্রয় গ্রহন করে বাদির সাথে ঘর সংসার করতে থাকে।

এমতাবস্থায় বাদির সরলতার সুযোগ নিয়ে মফিজুর খাঁ বাদির কাজ করে জমানো নগদ ২লাখ টাকাসহ বাদির পিতার গাছ বিক্রয় করা ৫০ হাজার টাকা হানিয়ে নিয়ে পরবর্তীতে কৌশল অবলম্বন করে মফিজুর খাঁ বাদিকে বলে যে,সে একটি মাছের ঘের লিজ নিয়েছে। তার টাকা লাগবে বলে বাদির নিকট টাকা চায়। বাদি স্বামীকে ভাল রাখার জন্য ঘের চাষ বাবদ মফিজুর খাঁকে নগদ ১লাখ ৩০ হাজার টাকা প্রদান করেন। টাকা প্রদানের কয়েক মাস গত হলে মফিজুর খাঁ বাদিকে বলে যে তার ১ম স্ত্রী তার নামে মামলা করেছে। মামলা মিটাতে ও তার ১ম স্ত্রীকে ছেড়ে দিতে বাদির নিকট ১লাখ টাকা দাবি করলে বাদি তার স্বামীকে বিশ^াস করে মামলা মিটাতে শেষ বারের মতো মফিজুর খাঁ কে নগদ ১লাখ টাকা প্রদান করলে বাদি তার স্বামীকে নিজের কাছে রাখতে ব্যর্থ হন। মফিজুর খাঁ বিভিন্ন অজুহাতে বাদির নিকট হতে সর্বমোট ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। এরপর গত বছরের ৫ অক্টোবর মফিজুর খাঁ বাদিকে বলে যে, সে খবর পেয়েছে তার পিতা অসুস্থ্য, এই অজুহাতে মফিজুর খাঁ তার দুই বছরের সন্তান মেহেরাবকে সঙ্গে নিয়ে ওই দিনই বাদির পিতার ভিটা ছেড়ে তার নিজ বাড়িতে চলে যায়। বাদির সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। কিছুদিন অতিবাহিত হলে মফিজুর খাঁ ফিরিয়ে না আসায় বাদি তার সন্ধানে মফিজুর খাঁ এর বাড়িতে উপস্থিত হলে মফিজুর খাঁ বাদিকে না চেনার ভান করে বাদিকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং মফিজুর খাঁর পরিবারের লোকজন বাদিকে মারপিট করে তাড়িয়ে দেয়। বাদি পরবর্তীতে মফিজুর খাঁর সাথে তার বিয়ের প্রমাণপত্র যোগাড় করতে কাজীর নিকট গেলে কাজী প্রদানে অস্বীকার করেন। পরে বাদি মফিজুর খাঁর বিরুদ্ধে ধর্ষন মামলা করতে উদ্যত হলে খবর পেয়ে গত ৩ মার্চ বেলা ১ টার সময় মফিজুর খাঁসহ তার উল্লেখিত সহযোগীরা বাদির বাড়িতে আসে। মফিজুর খাঁর সহযোগীরা বাদিকে বলে যে, মফিজুর খাঁর সাথে বাদির ২লাখ টাকা দেন মোহর ধার্য্যে রেজিষ্ট্রি বিয়ে দেবে এবং বেনাপোল বর্ডারে তাদের খুবই পরিচিত এক কাজী আছে সেখানে বিয়ে হবে। বাদি সরল বিশ^াসে আসামীদের কথায় রাজী হয়ে স্বাক্ষীদের খবর দিলে স্বাক্ষীদের মোকাবেলায় আসামীদের সাথে বাসে করে বেনাপোলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে। কিন্তু বাস হতে বেনাপোলে নেমে আসামীরা বাদিকে সীমান্তে একটি অজ্ঞাতস্থানে নিয়ে যায়। সেখানে বাদিকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে মফিজুর খাঁ সহযোগী তিনজন বাদিকে ধর্ষন করে।

সেখানে সকল আসামী মিলে বাদিকে অজ্ঞাতনামা দালালদের কাছে বাদিকে হস্তান্তর করে। দালালরা বাদিকে চোরা পথে ভারতীয় সীমান্ত পার করে পশ্চিমবঙ্গের সোনগাছি পতিতা পল্লীতে নিয়ে জোর করে দেহ ব্যবসায় লিপ্ত করে। দুই দিন সেখানে বাদির উপর পাশবিক নির্যাতন চলে। বাদির কান্নাকাটি দেখে একজন দালালের মায়া হলে তার সহায়তায় বাদি চোরাইপথে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে দেশে ফিরে আসেন। পরদিন অর্থাৎ গত ৭ মার্চ বাদি স্থানীয় থানায় মামলা করতে গেলে থানা কর্তৃপক্ষ মামলা গ্রহন না করে বিজ্ঞ আদালতে মামলা দায়ের করার পরামর্শ প্রদান করেন। সে কারনে মামলা করতে বাদির বিলম্ব হলো।