বাসাবাড়ির গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব তিতাসের

দেশে চলমান গ্যাস সংকটের মধ্যেই আবাসিক খাতে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে সবচেয়ে বড় বিতরণ কোম্পানি তিতাস। এতে এক চুলার বিল হবে ১ হাজার ৩৭৯ টাকা এবং দুই চুলার (ডাবল বার্নার) ১ হাজার ৫৯১ টাকা। বর্তমানে বিল যথাক্রমে ৯৯০ টাকা এবং ১ হাজার ৮০ টাকা ৷

তিতাস গত ২ মে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠিয়েছে। গত বছর মে মাসে আবাসিকে সর্বশেষ গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়। তখন বিইআরসি সিঙ্গেল বার্নারে মাসে ৫৫ ঘনমিটার এবং ডাবল বার্নারে ৬০ ইউনিট গ্যাস ব্যবহৃত হয় এমনটি ধরে মাসিক বিল হিসাব করে। আদেশের আগে যা ছিল যথাক্রমে ৭৩.৪১ ও ৭৭.৩৮ ঘনমিটার।
তিতাস প্রস্তাবনায় উল্লেখ করে, ‘কম-বেশি ২৫ লাখ গ্রাহকের বিপরীতে কোনো সমীক্ষা/তথ্য বিশ্লেষণ ব্যতিরেকে বিইআরসি এক চুলার ক্ষেত্রে ৫৫ ঘনমিটার ও দুই চুলার ক্ষেত্রে ৬০ ঘনমিটার গ্যাস ব্যবহার নির্ধারণ করায় সিস্টেম লস বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে একটি লাভজনক সরকারি প্রতিষ্ঠান আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।’

মিটারবিহীন আবাসিক গ্রাহকদের এক চুলার ও দুই চুলার বিপরীতে মাসিক গ্যাস ব্যবহার যথাক্রমে ৭৬.৬৫ ও ৮৮.৪৪ ঘনমিটার পুনর্নির্ধারণের আবেদন করে তিতাস। এ আবেদন অনুসারে প্রতি ঘনমিটার ১৮ টাকা করে এক চুলার বিল হবে ১ হাজার ৩৭৯ টাকা এবং দুই চুলার ১ হাজার ৫৯১ টাকা। প্রস্তাবনার পক্ষে তিতাস যুক্তি দিয়েছে, মিটারবিহীন আবাসিক গ্যাস ব্যবহারকারীরা বিইআরসি নির্ধারিত সীমার চেয়ে অতিরিক্ত গ্যাস ব্যবহার করেন।

আবেদনে বলা হয়, ‘মিটারবিহীন আবাসিক গ্রাহক কর্তৃক গৃহস্থালি রান্নাবান্নার কাজ ব্যতীত পানি বিশুদ্ধকরণের উদ্দেশ্যে পানি ফুটানো এবং বিভিন্ন শিল্পাঞ্চল অধ্যুষিত এলাকায় কলকারখানার শ্রমিকরা ও বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় সাবলেট ভাড়াটিয়ারা একাধিক পরিবারের রান্নার জন্য পালাক্রমে গ্যাস ব্যবহারের কারণে গড় গ্যাস ব্যবহারের তুলনায় ওইসব এলাকায় বেশি গ্যাস ব্যবহৃত হয়। তিতাস গ্যাস ঢাকার বিভিন্ন বাণিজ্যিক এলাকায় যেমন মতিঝিল, কারওয়ান বাজার, মিরপুর এবং শিল্পাঞ্চল এলাকা যেমন তেজগাঁও, সাভার, টঙ্গী, গাজীপুর, আশুলিয়া, সোনারগাঁও প্রভৃতি এলাকায় গ্যাস সরবরাহ করে থাকে।’

তিতাস দাবি করেছে, মিটারযুক্ত আবাসিক গ্রাহকরা মাসে গড়ে ৯৭ ঘনমিটার গ্যাস ব্যবহার করেন। ভর্তুকি প্রত্যাহার এবং রাজস্ব ঘাটতি কমানোর লক্ষ্যে জানুয়ারিতে চার শ্রেণির ব্যবহারকারীদের জন্য গ্যাসের দাম ১৭৯% পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে সরকার। সে সময় আবাসিক, সিএনজি, সার এবং চা বাগানের ব্যবহারকারীদের জন্য গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়নি।
বর্তমানে ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগে তিতাস গ্যাসের মোট ২৮ লাখ ৫৭ হাজার আবাসিক গ্রাহক রয়েছেন। তাদের মধ্যে ২৫ লাখ ২৫ হাজার মিটারবিহীন ও ৩ লাখ ৩২ হাজার প্রিপেইড মিটারের গ্রাহক ।

ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেছেন, বিইআরসি গত আদেশে মিটারবিহীন গ্রাহকদের জন্য গড় গ্যাসের পরিমাণ ঠিক করেছে, বাস্তবে অনেক গ্রাহক সে পরিমাণে গ্যাস ব্যবহার করেন না। কমিশনের হিসাবেই দেখা যায়, মিটারবিহীন দুই চুলার গ্রাহকের মাসে ৫০ ঘনমিটার এবং এক চুলার গ্রাহকরা মাসে ৪৫ ঘনমিটার গ্যাস ব্যবহার করেন। এই সীমা পরিবর্তনের যে দাবি তিতাস করেছে তা অযৌক্তিক। নিজেদের দুর্নীতি ও গ্যাস চুরি হালাল করতে তিতাস গ্যাসের দাম বাড়াতে চায়।