জ্বালানি সংকটে ভরসা ব্যয়বহুল এলএনজিতে

সক্ষমতা থাকলেও জ্বালানি সংকটে চাহিদা অনুসারে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। কলকারখানাও চলছে ধুঁকে ধুঁকে। দেশীয় গ্যাস বাদে জ্বালানির বড় অংশই এখন আমদানিনির্ভর। সরবরাহকৃত গ্যাসের এক-তৃতীয়াংশ এবং কয়লা, জ্বালানি তেল ও এলপিজির প্রায় পুরোটাই আমদানি করা হয়। বিশ্ববাজারে দাম বাড়লে আমদানিও বাধাগ্রস্ত হয়। এখন ডলার সংকটে চাহিদা অনুসারে কয়লা ও জ্বালানি তেল আমদানি করা যাচ্ছে না।

অদূর ভবিষ্যতে দেশীয় উৎসে জ্বালানি চাহিদা মেটানোর মতো কোনো সুখবর নেই। স্থলভাগে নতুন করে বড় গ্যাসের মজুত আবিষ্কারের সম্ভাবনা কম বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সম্ভাবনার সমুদ্রে এখনও সেভাবে অনুসন্ধান শুরু হয়নি। তাই আগামী ৮-১০ বছরের মধ্যে সাগর থেকে গ্যাস পাওয়ার আশা নেই। ভূ-পরিবেশগত কারণে দেশে নতুন কয়লা খনি খননের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না সরকার। পরিবেশগত কারণে কয়লা আমদানিও খুব বেশি বাড়বে না। ফলে আগামী দিনগুলোতে জ্বালানি সংকটে সরকার ব্যয়বহুল তরল প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) ওপরেই ভরসা করছে।

ঘাটতি মেটাতে এলএনজি আমদানি আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কাতারের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি দ্বিতীয় চুক্তি সই হয়েছে। আজ সোমবার ওমানের সঙ্গেও দ্বিতীয় দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি হচ্ছে। নতুন তিনটি এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করা হচ্ছে। স্থলভাগে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাপেক্সকে দক্ষ কোম্পানি হিসেবে গড়ে তোলা হয়নি। সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে কার্যকর উদ্যোগ নেই। এভাবে দেশের গ্যাস খাতকে অবহেলা করে এলএনজি আমদানিকে ত্বরান্বিত করা হয়েছে। এতে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা হুমকিতে পড়েছে। কারণ অর্থ ও ডলার সংকটে এখনই তেল, কয়লা ও গ্যাস আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। আমদানি যত বাড়বে, ঝুঁকিও তত বাড়বে। বর্তমানে গ্যাসের দৈনিক চাহিদা ৩৮০ কোটি ঘনফুট। দেশীয় ও আমদানি মিলে সরবরাহ

গড়ে ৩০০ কোটি ঘনফুট। ২০৩০ সালে চাহিদা বেড়ে হতে পারে ৫৬০ কোটি ঘনফুট। বিদ্যুৎকেন্দ্রর কয়লার চাহিদা চলতি বছরে শেষে গিয়ে দাঁড়াবে বছরে প্রায় দেড় কোটি টন। ২০৩০ সালের দিকে তা বেড়ে হবে প্রায় ২ কোটি টন। বড়পুকুরিয়া খনির কয়লা উৎপাদন ক্ষমতা বছরে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টন। বছরে দেশে জ্বালানি তেলের চাহিদা সব মিলিয়ে ৯০ লাখ টন।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্রনাথ সরকার এ বিষয়ে সমকালকে বলেছেন, স্থলভাগে নতুন করে কোনো গ্যাসক্ষেত্র পাওয়া গেলে পাইপলাইন স্থাপনসহ তা সরবরাহ করতে অন্তত তিন বছর লাগবে। সমুদ্রে গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার হলে তা সরবরাহে ৮ থেকে ১০ বছর লাগতে পারে। এ জন্যই এলএনজি আমদানি দরকার।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম. তামিম সমকালকে বলেন, দেশীয় উৎস থেকে উৎপাদন না বাড়লে আমদানির ওপরেই নির্ভর করতে হবে। সমুদ্রের গ্যাস নিয়ে আপাতত আশা নেই। এটা দীর্ঘ সময়ের বিষয়। দেশীয় কয়লার দিকেই নজর দিতে হবে। না হলে এলএনজি আর আন্তঃসীমান্ত বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান দিতে পারে। তিনি বলেন, তেল, গ্যাস ও কয়লা আমদানিতেই এখনকার চাহিদা মেটাতে বছরে ব্যয় হবে ১০-১২ বিলিয়ন ডলার। ২০৩০ সালের দিকে এই পরিমাণ গিয়ে দাঁড়াবে ২০-২৫ বিলিয়ন ডলারে।

ইনডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের শিক্ষক জাহেদ উর রহমান রোববার এক ওয়েবিনারে বলেন, গ্যাস আমদানি বাড়লে কিছু লোকের সুবিধা হয়। ওই ওয়েবিনারে টেকসই উন্নয়ন বিষয়ক গবেষক ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, গ্যাস আমদানি পরিস্থিতির সৃষ্টির জন্য দায়ী হলো বাপেক্সকে অকার্যকর করে রাখা ও সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানে গড়িমসি। তিনি বলেন, এলএনজি আমদানিতে খোলাবাজারে ভরসা করায় বিপদ তৈরি হয়েছে।