চিনির দাম ফের বাড়ানোর পাঁয়তারা ব্যবসায়ীদের

সরকার চিনির দর বেঁধে দিলেও খুচরা ব্যবসায়ী থেকে আমদানিকারক– কেউই তা মানেননি। সরকারি নির্দেশনাকে ‘বুড়ো আঙুল’ দেখিয়ে কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেশি নিয়ে আসছেন। এরপরও গত তিন মাস ধরে বাজারে প্যাকেটজাত চিনির আকাল। এখন খোলাবাজারেও সরবরাহে টান পড়েছে। শনি ও গতকাল রোববার রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হল, হাতিরপুল কাঁচাবাজার এবং কারওয়ান বাজারে খোঁজ নিয়ে এমন চিত্র মিলেছে। ভোক্তাদের অভিযোগ, সরকার নির্ধারিত দর এতদিন ব্যবসায়ীরা মানেননি, এখন নতুন করে দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করছেন। এ জন্য বাজারে চিনির কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হচ্ছে। বর্তমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে দাম বাড়ানো সরকারের উচিত হবে না।

কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটে চিনি কেনার সময় বেসরকারি চাকরিজীবী মাহমুদুল হাসান সমকালকে জানান, তিন দোকান ঘুরে এক দোকানে চিনি পেয়েছেন তিনি। সরকার ১২০ টাকা কেজি নির্ধারণ করলেও কিনতে হয়েছে ১০ টাকা বেশি দিয়ে। দোকানিরা বলছেন, ক’দিন পরে এই দামেও পাওয়া যাবে না। আসলে ব্যবসায়ীরা আবারও দাম বাড়ানোর জন্য কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছেন।

বিশ্ববাজারে বৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে আমদানিকারকরা দাবি জানালে, সরকার মাসখানেক আগে খোলা ১২০ ও প্যাকেটজাত চিনির কেজি ১২৫ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। অবশ্য আগে থেকেই ব্যবসায়ীরা খোলা চিনি ১৪০ টাকা কেজি বিক্রি করে আসছিলেন। দর নির্ধারণের পর ভোক্তারা আশাবাদী হলেও তাতে পড়ে গুড়ে বালি। দাম তো কমেনি বরং বাজারে সরবরাহ কমেছে পণ্যটির। লালচে বা দেশি চিনির দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে এখন দাঁড়িয়েছে ১৫৫ থেকে ১৬০।

গত ১১ জুন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা-সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের সভায় ভোগ্যপণ্যের বর্তমান সরবরাহের ওপর একটি প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, চিনির বার্ষিক চাহিদা প্রায় ২০ লাখ টন হলেও ডলার সংকটে আমদানি কিছুটা কম হওয়ায় চলতি অর্থবছরে সরবরাহ ঘাটতি ৭২ হাজার টনে দাঁড়িয়েছে।

খুচরা ব্যবসায়ীদের দাবি, তিন মাস ধরে কোম্পানিগুলো প্যাকেটজাত চিনি দেওয়া প্রায় বন্ধ রেখেছে। মাঝেমধ্যে দু-একটা কোম্পানি কিছু প্যাকেটজাত চিনি দেয়। কিন্তু সঙ্গে চা পাতা কিংবা গুঁড়ো দুধ নিতে বাধ্য করে। ডিলারদের কাছ থেকেই নিতে সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি পড়ছে। এ জন্য অনেকে বিক্রি বন্ধ রেখেছেন।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হল কাঁচাবাজারের আলম স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. রাসেল সমকালকে বলেন, ‘চিনি বিক্রি কঠিন হয়ে গেছে। প্যাকেট চিনি নেই, খোলা চিনি পাইকারিতেই কিনতে ১২৮ টাকার বেশি পড়ে, আনুষঙ্গিক খরচ ধরলে ১৩০ টাকা পার হয়। ১৪০ টাকা কেজি চাইলে ক্রেতারা নানা প্রশ্ন করেন।’ কারওয়ান বাজারের ফরিদগঞ্জ স্টোরের কর্ণধার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এক বস্তা চিনি নিতে গেলে সঙ্গে চা পাতা বা গুঁড়ো দুধ কেনা লাগে। চিনি বিক্রি শেষ হলেও চা-দুধ রয়ে যায়। এ জন্য এখন চিনিই বিক্রি করছি না।’

বাংলাদেশ পাইকারি চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মফিজুল হক বলেন, ‘৩১ মে চিনি আমদানিতে শুল্ক ছাড়ের মেয়াদ শেষ হয়েছে। আমদানি খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যবসায়ীরা হয়তো দাম বাড়াতে চাইছেন। এ জন্য বাজারে চিনি কম ছাড়ছেন।’ তবে আমদানিকারক ও পরিশোধকারীদের দাবি, ডলার সংকটে ঋণপত্র (এলসি) খোলা যাচ্ছে না, ডলারের দরও বেশি। পাওয়া যাচ্ছে না শুল্ক ছাড়ের সুবিধা। এ জন্য সরকারের কাছে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সরকার সিদ্ধান্ত দেওয়ার আগ পর্যন্ত সরবরাহে ব্যাঘাত থাকবেই।

এমন প্রেক্ষাপটে গত ৬ জুন আমদানিকারকরা খোলা ২০ এবং প্যাকেটজাত চিনি কেজিতে ২৫ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব রেখে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনে চিঠি দেন। এটি কার্যকর হলে খোলা ১৪০ ও প্যাকেটজাত চিনির কেজি পড়বে ১৫০ টাকা। সরকার এখনও কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি।