গরু-খাসির মাংস খাওয়ায় সাবধান!

হৃদরোগ, হাই প্রেশার, কোলেস্টেরল ইত্যাদির প্রকোপ বাড়ানোর ব্যাপারে যতই রেডমিটের খারাপ দিক থাক, খাসি-গরুর মাংস পুরোপুরি ছেঁটে ফেলা ভোজনরসিকের পক্ষে অসাধ্য কাজ। চিকিৎসাবিজ্ঞান আশ্বাস দিচ্ছে, তার দরকারও নেই। এসবের মধ্যে এমনসব গুণও আছে, যে রয়েসয়ে খেলে উপকারের পাল্লাই ভারী হয়। যেমন, ভালো জাতের প্রোটিন, আয়রন, ভিটামিন বি ১২। কাজেই যে দেশে অপুষ্টি ও রক্তাল্পতা এত রমরমা, সেখানে একে পুরোপুরি বর্জন করার কথা না ভাবাই ভালো।

তবে হ্যাঁ, সেই অজুহাতে নিয়মিত খেতে শুরু করলে কিন্তু মুশকিল। কেউই তো আর চর্বি ছেঁটে ফেলে, বিনা তেলে স্টু বানিয়ে খান না, খান ভেজেভুজে, তেলে-ঝালে গড়গড়ে করে, তাকে আরও অস্বাস্থ্যকর বানিয়ে। দু-এক টুকরোতেও সন্তুষ্ট থাকেন না প্রায় সময়, খান কবজি ডুবিয়ে। কাজেই একেবারে ছাড় দিয়ে দিলে বিপদ।

ভাবছেন, যা এত কাল করে এসেছেন মানে, মাংসের যে অংশে চর্বি কম আছে (লিন কাট) সেই মাংস কিনবেন ও যতটুকু চর্বি চোখে দেখা যাচ্ছে তা বাদ দিয়ে দেবেন। এমনকী, কষানোর পর ভেসে ওঠা তেলও বাদ দেবেন। তাই তো? না, তা-ও আপনাকে নিয়মিত এবং প্রচুর পরিমাণে খাওয়ার ছাড়পত্র দেওয়া যাবে না। কারণ এর মূলে আছে একটি দুঃসংবাদ।

* কী দুঃসংবাদ?

গরু বা খাসির মাংসের সব বিপদের মূলে শুধু স্যাচুরেটেড ফ্যাট আর কোলেস্টেরল নয়। নিয়মিত ও প্রচুর পরিমাণে এ জাতীয় মাংস খেলে পাকস্থলিতে কিছু ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া দ্রুতগতিতে বাড়তে শুরু করে। এদের উপস্থিতিতে মাংসের কারনিটিন নামের উপাদান ভেঙে গিয়ে ট্রাইমিথাইল্যামিন যৌগে পরিণত হয়। যা আবার রক্তে শোষিত হয়ে ও লিভারের বিপাক ক্রিয়ায় ভেঙে পরিণত হয় ট্রাইমিথাইল্যামিন-এন-অক্সাইডে। হার্টের সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম রক্তনালিতে চর্বি জমিয়ে ইসকিমিক হৃদরোগের সূত্রপাত ঘটাতে যা অদ্বিতীয়। তবে হ্যাঁ, যদি ন’মাসে-ছ’মাসে খান, চর্বি ছেঁটে খান ও দু-এক টুকরোয় সন্তুষ্ট থাকেন, খেতে পারেন। আর সঙ্গে যদি দু-একটা নিয়ম মানতে পারেন, তা হলে তো হয়েই গেল।

 

* রেডমিট খাওয়ার নিয়ম

রোগের বাড়াবাড়ি না থাকলে ও ডাক্তার বারণ না করলে সপ্তাহে এক দিন দু-চার টুকরো খেতে পারেন। খাসির চর্বির পাকোড়া অত্যন্ত সুস্বাদু। একবার খেলে বারবার খেতে ইচ্ছা করে। তবে হৃদরোগ, হাই প্রেশার, হাই কোলেস্টেরল ইত্যাদি থাকলে একটাও খাবেন না। এসব না থাকলে ও বয়স কম হলে ন’মাসে-ছ’মাসে এক-আধটা খেতে পারেন। তবে এটা কিন্তু ডাক্তারি ছাড়পত্র নয়, মনে রাখবেন। খাসি-গরু যে মাংসই খান না কেন, শরীরের যে অংশে চর্বি কম আছে, সেই অংশ থেকে মাংস কিনুন, যাকে বলে ‘লিন কাট’। লিন কাট থেকে দৃশ্যমান সব চর্বি ছেঁটে ফেলুন ও মাংস কষানোর পর ভেসে ওঠা তেল ফেলে দিন। রান্নার পর মাংস ফ্রিজে রেখে দিলে গ্রেভিতে মিশে থাকা চর্বি শক্ত হয়ে যায়। তখন সেটা ফেলে বাকিটা গরম করে খান। রান্নায় কম তেল দিন। খুব কষিয়ে বা ভেজে রান্না করার বদলে বেক, গ্রিল, রোস্ট, স্টার ফ্রাই, সতে বা স্টু খেলে বেশি উপকার। কম নুনে রান্না করতে পারলে ভালো। পেটে, কিডনি ইত্যাদি জায়গায় কোলেস্টেরল বেশি থাকে। কাজেই নিয়মিত খাবেন না। তবে পেটেতে আয়রন ও ভিটামিন বেশি থাকে বলে মাসে এক-আধবার দু-চার টুকরো খেতে পারেন।

* আর মুরগি?

সে তো সব সময় খেতে পারেন। কারণ এমনিতেই তাতে স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও কোলেস্টেরল তুলনায় কম। তার ওপর লিন কাট কিনলে, তারও আবার চামড়া ও চর্বি, যতটুকু চোখে দেখা যায়, বাদ দিয়ে দিলে ফ্যাটের পরিমাণ যা দাঁড়ায়, তা স্বাস্থ্যের হিসাবে মোটামুটি ঠিকঠাক। বড় মুরগি হলে কষানোর পর ভেসে ওঠা তেল ফেলে দিলে তো কথাই নেই। সবচেয়ে বড় কথা, পাকস্থলীর ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ারাও এত নির্মম নয় এর প্রতি। কাজেই সপ্তাহে দু-তিন দিন খেলে ক্ষতি তো নেই-ই, বরং ভালো। কম তেলে, কম আঁচে, রান্না করলে আরও ভালো।

লেখক : মেডিকেল এডুকেটর ও জিপি এক্সামিনার, ওয়াল্টার্স রোড মেডিকেল সেন্টার, ব্লাকটাউন, অস্ট্রেলিয়া।