যশোর সদর উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী নাজমুল নিজেই ঠিকাদার

jessore map

যশোর সদর উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ের সামনের চত্বর আরসিসি ঢালাই
করণের ঠিকাদারী দায়িত্ব নিয়েছেন সয়ং উপজেলা এলজিইডি
প্রকৌশলী নাজমুল হুদা নিজেই। লটারির মাধ্যমে ২১ লাখ ৬২ হাজার
টাকার এই নির্মাণ কাজের দায়িত্ব পেয়েছিলেন ফেরদৌস হোসেন
সোমরাজ নামে একজন ঠিকাদার।

কিন্তু তাকে কাজ করতে নিষেধ করে উপজেলা প্রকৌশলী নাজমুল হুদা নিজেই ঢালাই করণের ৮০ভাগ কাজ
ইতিমধ্যে সম্পন্ন করেছেন। এব্যাপারে ভূক্তভোগী ঠিকাদার ফেরদৌস
হোসেন সোমরাজ প্রতিকার পেতে যশোর জেলা প্রশাসকের কাছে
উপজেলা প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

যশোর শহরের পুরাতন কসবা কাজীপাড়ার বাসিন্দা মেসার্স এসএইচ
এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ফেরদাউস হোসেন সোমরাজ জানান,
সদর উপজেলা প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে উপজেলা পরিষদের বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল
সংলগ্ন চত্বর আরসিসি ঢালাই করণ কাজের ই-টেন্ডার আহবান করা হলে
তিনি যথাযথ প্রক্রিয়ায় টেন্ডার দাখিল করেন। গত ৩১ মে ২১ লাখ ৬২
হাজার টাকার এই নির্মাণ কাজের টেন্ডার ওপেন করা হয়। পরে লটারির
মাধ্যমে সর্বনি¤œ দরদাতা হিসেবে কাজটি পান তিনি। এরপর সদর
উপজেলা প্রকৌশলী নাজমুল হুদা তাকে জামানত হিসেবে ১ লাখ ৮
হাজার ১২১ টাকা জমা দিতে বলেন। ফেরদৌস হোসেন সোমরাজ সেই
অনুযায়ি ১ লাখ ৮ হাজার ১২১ টাকা জামানত জমা দেন। কিন্তু এর
কয়েকদিন পর কাজের দায়িত্ব বুঝে নিতে গেলে বাঁধা সৃস্টি করেন সদর
উপজেলা প্রকৌশলী নাজমুল হুদা।এসময় সরাসরি সদর উপজেলা
প্রকৌশলী তাকে কাজ করতে নিষেধ করে বলেন, কাজটি ছেড়ে দেন। এ
কাজটি আমরা করবো। কিন্তু উপজেলা প্রকৌশলীর কথায় ঠিকাদার রাজি
না হওয়ায় তাকে বিভিন্নভাবে ঘোরানো হয়। সম্প্রতি ফেরদাউস
হোসেন সোমরাজ উপজেলা পরিষদে এসে দেখতে পান, তিনি যে
কাজটি লটারির মাধ্যমে পেয়েছেন তার ৮০ ভাগ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন
হয়ে গেছে । অথচ তিনি কাজের দায়িত্ব বুঝে পাননি এবং নির্মাণ
কাজও করেননি। উপজেলা প্রকৌশলী নাজমুল হুদা বিশেষ সুবিধা পাওয়ার
জন্যে হয়তো অন্য কাউকে দিয়ে এ কাজটি করছেন। এ বিষয়ে প্রতিকার
পেতে গত ১৭ সেপ্টেম্বর উপজেলা প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক

বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন ফেরদাউস হোসেন সোমরাজ। তার
অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসকের দপ্তর থেকে উপজেলা পরিষদের
চত্বর নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়। এবিষয়ে সদর উপজেলা প্রকৌশলী
নাজমুল হুদার কাছে সংবাদ কর্মীরা ফোন করে ঠিকাদার ফেরদৌস
হোসেন সোমরাজের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চায়। সদর উপজেলা
প্রকৌশলী নাজমুল হুদা জবাবে বলেন, ‘আমি কিছুই জানিনা বলে
ফোন কেটে দেন।

সুত্রমতে, গত ৪ বছরে যশোর সদর উপজেলা প্রকৌশলী
নাজমুল হুদা এভাবে প্রভাব খাটিয়ে নিজে লাভবান হওয়ার জন্য কোটি
কোটি টাকার ঠিকাদারি কাজ বাগিয়ে নিয়েছেন। আইডি নম্বার
পরিবর্তন করেও এক রাস্তার নামের কাজ জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে অন্য
রাস্তায় করে নিজে লাভবান হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে । গত ৪ বছরে
যশোর সদর উপজেলায় যতোগুলো সরকারি প্রাইমারি স্কুলের নতুন ভবন
নির্মাণের কাজ হয়েছে সেগুলোর মেয়াদ উত্তীর্ন হলেও অদ্যাবদি পর্যন্ত
ওইসব ভবন উন্নয়ন কাজের কোন অগ্রগতি নেই। এছাড়া সদর
উপজেলায় যেসব হেরিংবন ও ফ্লাট সলিং এর রাস্তার কাজ হয়েছে তা ১
নম্বর ইটের বদলে ২ নম্বর ইট দিয়ে করা হয়েছে এমন বহু অভিযোগ
রয়েছে। সম্প্রতি সদর উপজেলার হামদিপুর মধ্যপ্ধসঢ়;ড়া থেকে কচুঁয়া গুচ্ছ
গ্রাম পর্যন্ত দেড় কোটি টাকার সাড়ে ৪ কিলোমিটার হেরিংবন রাস্তা
উন্নয়নে ১ নম্বর ইটের স্থলে ২ নম্বর ইট ব্যবহার করা হয়েছে বলে
এলাকাবাসি অভিযোগ করেছেন। সরেজমিন অনুসন্ধানে যেয়ে এ
অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।

এভাবে সদর উপজেলায় অনেক রাস্তা ২
নম্বর ইট ও মাটি মিশ্রিত বালি দিয়ে উন্নয়ন করা হয়েছে। বিনিময়ে
সদর উপজেলা প্রকৌশলী নাজমুল হুদা পকেটস্থ করেছেন লাখ লাখ টাকা।
কর্তৃপক্ষ রাস্তাগুলো পরিদর্শন করে ইট উঠিয়ে ল্যাব টেস্ট করলে এ
অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যাবে। এব্যপারে যশোর এলজিইডির
নির্বাহী প্রকৌশলী শরিফুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে
তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে আশস্ত করেন। এদিকে অপর একটি সূত্র
বলেছে, প্রকৌশলী নাজমুল হুদার দুনীতির নেপথ্যে রয়েছে উপজেলা
পরিষদের এক শীর্ষ জনপ্রতিনিধি। তার ইঙ্গিতে নাজমুল হুদা এ সব
দুর্নীতি করছে। আর সব দুর্নীতির টাকা দুজনে ভাগ করে নেয়।