‘স্মোগ’ কাটবে কবে বাংলাদেশ দলের

উবারচালক বেশ ক্ষোভের সঙ্গেই বলতে থাকলেন– ‘চার বছরও হয়নি, এরই মধ্যে কোটি কোটি টাকা দিয়ে বসানো কনট প্লেসের ‘স্মোগ টাওয়ার’ বিকল হয়ে গেছে। সামনের দিনগুলোতে আরও ভয়াবহ বায়ুদূষণে পড়বে দিল্লি।’

ট্যাক্সি থেকে নামার সময়ও পরামর্শ তাঁর, মাস্কটি মুখে রাখবেন। এমনিতে স্থানীয়দের মধ্যে মুখবন্ধনী পরার তেমন চল দেখা যায়নি। নতুন আসা অতিথিরা দিল্লির স্মোগ (স্মোক আর ফগ) দেখে নিশ্চিত ঘাবড়ে যাবেন। যেমনটা এই শহরে পা রেখেই ঘাবড়ে গেছে বাংলাদেশ দল। আগের দিন অনুশীলন সেশন বাতিল করলেও গতকাল সন্ধ্যায় অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে এসেছিলেন সাকিবরা। সবার মুখে মাস্ক পরা থাকায় টিম বাস থেকে নামা অনেককেই শুরুতে চেনা যায়নি। বোঝাও যায়নি এই বহরে লিটন ও মুস্তাফিজ আসেননি। হোটেলেই রয়ে গেছেন তারা।

সেটা দিল্লির স্মোগ আতঙ্কে কিনা, নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে এটা স্পষ্ট, দিল্লির মতো বাংলাদেশ দলেও এখন ‘স্মোগ (ধোঁয়াশা)’ চলছে! ব্যাটাররা রান পাচ্ছেন না, বোলাররা উইকেট পাচ্ছেন না। মিরাজের ভাষায়– ভাগ্যটাই ভালো যাচ্ছে না। তার ওপর আবার টিম লিডার হয়ে আসা খালেদ মাহমুদ সুজন বলেছেন, তাঁকে বাইরে রেখেই সব হচ্ছে।

সামনে থেকে মুখগুলো হাসিখুশি দেখালেও ভেতরে ভেতরে যে অন্তর্কলহ চলছে না, তার কোনো গ্যারান্টি দিতে পারছেন না কেউ। এরই মধ্যে আজ বাদে কাল শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হতে হবে। এই বিশ্বকাপেই দিল্লির এই মাঠে তিনশর ওপর রান করে গেছেন লঙ্কানরা। যদিও ভারতের কাছে ৫৫ রানে অলআউট হওয়ার আঘাত এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি তারা। দিল্লিতে এসে তারাও হোটেলবন্দি রেখেছেন নিজেদের এবং তারাও অনুশীলন বাতিল করেছেন দিল্লির এই বায়ুদূষণ দেখে। এদিন অবশ্য মাস্কটি খুলে ঘণ্টাখানেক নেট ব্যাটিং করলেন সাকিব আল হাসান। কুড়ি মিনিট করে পেলেন নাজমুল হোসেন শান্ত, তাওহিদ হৃদয়রা।

শুরুতে থ্রোয়ার দিয়ে ব্যাটিং প্র্যাকটিস করলেও পরে স্পিনারদের খেলেছেন সাকিব। ভীষণ রকমের সিরিয়াস তিনি সেই কলকাতা থেকেই। একটি জয়ের জন্য চাতক হয়ে আছেন তিনি। কিন্তু কোচিং স্টাফদের মধ্যে কেমন যেন একটা গা-ছাড়া ভাব ধরা পড়েছে। এদিন মাঠে এসে একবারের জন্যও মুখের মাস্কটি খোলেননি চন্ডিকা হাথুরুসিংহে, রঙ্গনা হেরাথরা। নেটে একেকজন ব্যাটার যাওয়ার আগে শুধু নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি।

সাকিবরা যখন স্টেডিয়ামের পাশে আউটারে নেট প্র্যাকটিস করছিলেন, তখন সেখানে পুরো কোচিং স্টাফ থাকলেও দেখা যায়নি টিম লিডার খালেদ মাহমুদ সুজনকে। আগের দিন মিডিয়ার সামনে অমন বিস্ফোরক হওয়ার পর ঢাকা থেকে কী বার্তা পেয়েছেন তিনি, জানা যায়নি। তবে বিশ্বকাপের আগে এভাবে তাঁর মুখ খোলাটা নিশ্চয় ভালোভাবে নেয়নি বিসিবি। নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন অবশ্য নেট সেশনের কাছেই ছিলেন। তিনিও স্মোগ আতঙ্কে ভুগছেন। সারাক্ষণ মুখেই ছিল তাঁর মাস্ক। উবারের সেই ট্যাক্সিওয়ালাই বলছিলেন– ডিসেম্বর নাগাদ এমনিতেই কেটে যাবে স্মোগ।

আশপাশের রাজ্যের কৃষকরা এই অক্টোবর-নভেম্বর পর্যন্তই নতুন ফসল লাগানোর জন্য পুরোনো ফসলের ক্ষেতে নাড়া পুড়িয়ে থাকেন। সেই ধোঁয়াই চলে আসে দিল্লির আকাশে। দিল্লির স্মোগ কেটে যাওয়ার পূর্বাভাস থাকলেও বাংলাদেশ দলের ‘স্মোগ’ কেটে যাওয়ার বোধ হয় কোনো সময়সীমা নেই! মিরাজের মতোই তাকিয়ে থাকতে হবে একটি ভালো দিনে ভাগ্যের আশায়।