নিকৃষ্ট-লোভী-বেইমান ছাড়া কেউ সরকারের সঙ্গী হয়নি: রিজভী

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘সরকার বিএনপিকে ভাঙার চেষ্টা করছে এবং বিএনপি জোট থেকে কিছু দলকে লোভ দেখিয়ে প্রহসনের নির্বাচনে নেয়ার চেষ্টা করেছে। কিছু নিকৃষ্ট-লোভী-বেইমান ছাড়া কেউ সরকারের এই হীন কর্মের সঙ্গী হয়নি।


শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ভার্চুয়ালি এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, বিশ্বের সব গণতান্ত্রিক শক্তি এবং দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণের প্রত্যাশিত একটি অবাধ নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবর্তে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো আরেকটি ভোট ডাকাতির উৎসবের পথ বেছে নিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আজ ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন, তাদের নির্বাচনের ট্রেন চলতে শুরু করেছে। কিন্তু তাদের ট্রেনের সব যাত্রী তো নৌকা আর আওয়ামী লীগের গণবিচ্ছিন্ন লোকজন। নগদ টাকায় ক্রয় করা কতিপয় উচ্ছিষ্টভোগী বেইমান গণশত্রুকে ছলে-বলে-কৌশলে ভাগিয়ে নিয়ে সাথে ট্রেনে তুলেছে। ৫৭ সেকেন্ডে ৪৩ ভোটের খোয়াবে যারা এলাকায় যাবে তারা ভোটবঞ্চিত মানুষের গণধোলাইয়ের শিকার হতে পারে। ইতোমধ্যে জাতিসঙ্ঘসহ ইউরোপ-আমেরিকা নিশ্চিত হয়েছে যে আরেকটি তামাশার পাতানো নির্বাচনরঙ্গ মঞ্চস্থ করতে চলেছে নিশিরাতের অবৈধ সরকার। কারণে জাতিসংঘ ঘোষণা দিয়েছে যে এই ভুয়া নির্বাচনে তারা কোনো পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। অন্যসব গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রও আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। ’

তিনি বলেন, ‘দেশবিদেশের সবাই আসন্ন অভিনব ভোট ডাকাতির ফরমুলা আগেভাগেই জেনে গেছে। ফ্যাসিবাদের সহযোগী নির্বাচন কমিশন রকিব ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৪ জনকে বিজয়ী করে রেকর্ড গড়েছে। হুদা কমিশন ২০১৮ সালে রাতের আঁধারে ব্যালটে সিল দিয়ে ভোট ডাকাতির অভূতপূর্ব রেকর্ড তৈরি করেছে বিশ্বে। আর এবার ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে মাঠে কাজী হাবিবুল আউয়াল। তবে ওবায়দুল কাদের সাহেবরা যেসব কুইন্সপার্টি, তৃণভোজী পার্টি, ডামি পার্টি, খুদ-কুঁড়ো পার্টি এবং বিভিন্ন দল থেকে অচ্ছুত লোকজনকে হায়ার করে নিয়ে এসে ডাকাতির নির্বাচনী ট্রেনে চড়েছেন সেই ট্রেন গন্তব্যে পৌঁছাতে দেবে না মুক্তিকামী জনতা। সুমতি হলে তার আগেই ফ্যাসিবাদ মডেলের নির্বাচনী ট্রেন থামিয়ে জনগণের দাবি মেনে নিন। অন্যথায় অ্যাকসিডেন্ট অথবা পতন অনিবার্য। ’

তিনি বলেন, ‘ভারতের সরকার বাংলাদেশের জনগণকে তার প্রতিপক্ষ করেছে কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ ভারতের জনগণকে বন্ধুসুলভ বলে মনে করে। ’

রিজভী বলেন, ‘সরকার ভুঁইফোড় দলগুলোকে জোড়াতালি দিয়ে নির্বাচনে আনার চেষ্টায় প্রমাণ হয়েছে তারা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে ব্যর্থ হয়েছে। এই একতরফা নির্বাচন তাদের বাঁচাতে পারবে না, তাদের নির্বাসনে পাঠাবে। যারা লোভে পড়ে সরকারের পাতানো নির্বাচনে অংশ নেবেন তারা রাজনীতির আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হবেন। সাধারণ মানুষ ইতোমধ্যে তাদের বেইমান হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। ’

‘দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল বিএনপি এবং গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ ছাড়া দেশে-বিদেশে কোথাও জাতীয় নির্বাচন গ্রহণযোগ্য এবং অংশগ্রহণমূলক হিসেবে বিবেচিত হবে না,’ বলেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, ‘বিএনপিকে জাতীয় নির্বাচনকে দূরে রাখতে বিএনপির নেতাকর্মীদের পেছনে সুকৌশলে পুলিশের ইউনিফর্ম পরিয়ে চিহ্নিত মাফিয়া চক্রকে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফ্যাসিবাদী সরকার গত একযুগে সারাদেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দেড় লাখেরও বেশি মামলা দিয়েছে। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এসব ভুয়া মামলায় ৫০ লাখের বেশি মানুষকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এ ধরনের অনাচার বিশ্বের ইতিহাসে নজিরবিহীন। ’৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনী এবং তাদের সহযোগী সঙ্গী রাজাকার বাহিনীর চরিত্রে গড়ে ওঠা আওয়ামী হানাদার বাহিনীর নির্যাতন-নিপীড়নে সারা দেশে বিএনপির দুই কোটির বেশি নেতাকর্মী দিনের পর দিন ঘরছাড়া। ’

রিজভী বলেন, এখন শুধু গায়েবি মামলাই নয়, গায়েবি বিচারও চলছে। বিএনপি নেতাকর্মী যারা কয়েক বছর আগে ইন্তেকাল করেছেন তাদেরকেও কারাদণ্ড দেওয়া হচ্ছে। এর মানে, গায়েবি মামলার যেমন কোনো তদন্ত হচ্ছে না অপরদিকে আদালতে মামলার কোনো শুনানিও হচ্ছে না।