মৃত স্বামীর শুক্রাণু ব্যবহার করে মা হলেন এক নারী

মৃত স্বামীর সংরক্ষিত শুক্রাণু ব্যবহার করে ‘ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন’ (আইভিএফ) পদ্ধতিতে ৪৮ বছর বয়সে সন্তানের মা হয়েছেন ভারতীয় এক নারী। সন্তান সুস্থ থাকলেও ওই নারী এখনও হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে ভর্তি রয়েছেন।

ওই নারীর নাম সঙ্গীতা কেশরী। পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটির বাসিন্দা তিনি।

গত ১১ ডিসেম্বর মা হয়েছেন তিনি। তবে মা হওয়ার এই লড়াইয়ে তিনি পরিবারকে পাশে না পেলে পাশে দাঁড়িয়েছে প্রতিবেশীরা।

জানা গেছে, সঙ্গীতার বিয়ে হয়েছিল বীরভূম জেলার মুরারইয়ের একটি প্রত্যন্ত গ্রামে। প্রায় দুই বছর আগে করোনায় তিনি স্বামীকে হারিয়েছেন। জীবিকা বলতে মুদিখানার একটি ছোট্ট দোকান।

স্বামী জীবিত থাকাকালীন আইভিএফ প্রক্রিয়া চলছিল সঙ্গীতার। শুক্রাণু সংরক্ষণ করে রেখেছিলেন চিকিৎসকরা। কিন্তু, স্বামীর মৃত্যুর পর মা হওয়ার ইচ্ছা দমে যায়নি তার। বিষয়টা পরিবারকে জানালেও তারা মেনে নেয়নি। তবে তাতে দমে না গিয়ে স্বামীর সংরক্ষিত শুক্রানুর দ্বারা চেষ্টা চালিয়ে যায় সঙ্গীতা। একপ্রকার ঝুঁকি নিয়েই চিকিৎসার কাজ চালিয়ে যান।

অবশেষে সফলও হয়েছেন। সংরক্ষণ করে রাখা শুক্রাণু দিয়েই ১১ ডিসেম্বর মা হয়েছেন সঙ্গীতা। সুস্থ সন্তানের জন্ম দিয়েছেন তিনি। সন্তান সুস্থ থাকলেও সঙ্গীতা এখন বীরভুম জেলা রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে ভর্তি।

ওই হাসপাতালে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সাধারণত ৪৮ বছর বয়সে নারীদের মেনোপজ শুরু হয়ে যায়। স্বাভাবিকভাবে মা হওয়া যায় না। পাশাপাশি সঙ্গীতার রক্তচাপও বেশি ছিল। ডায়াবেটিকও আছে। সব মিলিয়ে সঙ্গীতার গর্ভবতী হওয়া যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। আইভিএফ পদ্ধতিতে যমজ সন্তান এসেছিল। একটি ছ’সপ্তাহে মারা যায়। যে বেঁচে ছিল, তার সংক্রমণ হতে পারতো। বয়সের কারণেও স্বাভাবিক প্রসব মুশকিল ছিল। তবে সব মুশকিলকে কাটিয়ে ১১ তারিখ অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আড়াই কেজি ওজনের ছেলেসন্তানের জন্ম দেন সঙ্গীতা।

চিকিৎসকরা আরও জানান, বর্তমানে হাসপাতালেই আছেন সঙ্গীতা। তার চিকিৎসার জন্য মেডিকেল বোর্ড তৈরি হয়েছে। সেখানে রয়েছেন দু’জন অ্যানেসথেটিস্ট, একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ এবং একজন মেডিসিন বিভাগের বিশেষজ্ঞ।
ধীরে ধীরে সঙ্গীতার শারীরিক পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে বলে জানান চিকিৎসকেরা।

সঙ্গীতার আইনজীবী অনিন্দ্য কান্তি জানিয়েছেন, স্বামী বেঁচে থাকার সময় থেকে সঙ্গীতার সন্তান ধারণ নিয়ে সমস্যা ছিল। মা না হওয়ার কারণে পরিবারের কাছে লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন আইভিএফ পদ্ধতিতে সন্তান লাভের চেষ্টা চালাচ্ছিলেন দম্পতি। তখনই কলকাতার একটি ল্যাবরেটরিতে স্বামীর শুক্রাণু সংরক্ষণ করা হয়। এরমধ্যে কোভিডে সঙ্গীতার স্বামী মারা যান। কিন্তু দ্বিধায় ভোগেনি তার মক্কেল। আইভিএফ পদ্ধতিতে চিকিৎসা চালিয়ে যান। তখনই ঠিক করেন গর্ভধারিণী হওয়ার জন্য স্বামীর শুক্রাণুকেই ব্যবহার করবেন। যেমনটা চেয়েছিলেন তার প্রয়াত স্বামী।