চট্টগ্রাম বন্দরে রফতানিমুখী কনটেইনার পরীক্ষার জন্য প্রথমবারের মতো বসানো হলো দুই সেট স্ক্যানার মেশিন। এতদিন আমদানি করা পণ্যভর্তি কনটেইনার জাহাজ থেকে নামানোর পর তা স্ক্যান করা হতো। এরপর নানা প্রক্রিয়া শেষে সেসব পণ্যভর্তি কনটেইনার ছাড় পেতো। তবে চট্টগ্রাম বন্দরে রফতানি পণ্য স্ক্যান করার সুযোগ ছিল না। স্ক্যান ছাড়াই রফতানি পণ্যভর্তি কনটেইনার জাহাজে তোলা হতো।
তবে শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) থেকে শুরু হয়েছে রফতানিপণ্য ভর্তি কনটেইনার স্ক্যানিং। এর মধ্যে দিয়ে এখন থেকে রফতানি পণ্যও স্ক্যানিং শেষে জাহাজে উঠবে কনটেইনার। এসব স্ক্যানারের সাহায্যে প্রতি ঘণ্টায় ১৫০টি রফতানিমুখী কনটেইনার স্ক্যানিং করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্মকর্তারা।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্মকর্তারা বলছেন, রফতানিমুখী কনটেইনার পরীক্ষার জন্য স্ক্যানার বসানোর মাধ্যমে ইন্টারন্যাশনাল শিপ অ্যান্ড পোর্ট ফ্যাসিলিটি সিকিউরিটি (আইএসপিএস) কোডের শর্ত পালনে আরও এক ধাপ এগিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর। রফতানি পণ্য স্ক্যানিংয়ের মাধ্যমে ঠেকানো যাবে অসাধু ব্যবসায়ীদের মিথ্যা ঘোষণা, ওভার বা আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে রাজস্ব ফাঁকি, মানিলন্ডারিং ও রফতানি প্রণোদনা আত্মসাতের মতো কার্যক্রম।
শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) এক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে রফতানিমুখী পণ্যবাহী কনটেইনার স্ক্যানারের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য আনা-নেওয়ার জন্য গেট আছে ১২টি। এরমধ্যে তিনটি রফতানিমুখী পণ্যের জন্য, বাকি ৯টি গেট আমদানি পণ্য আনা-নেওয়ার জন্য ব্যবহার হয়ে থাকে। তবে ক্ষেত্র বিশেষে আমদানি গেট দিয়ে রফতানিপণ্য এবং রফতানি গেট দিয়ে আমদানিপণ্য আনা-নেওয়া করা হয়। চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি করা পণ্য ভর্তি কনটেইনার স্ক্যানিং করার জন্য সাতটি গেটে বসানো হয়েছে স্ক্যানার মেশিন। এখনও বন্দরের তিনটি গেটে স্ক্যানার মেশিন বসানো হয়নি। একইভাবে তিনটি রফতানিমুখী গেটের মধ্যে ৪ নম্বর গেট ও সিপিএআর গেটে স্ক্যানার দুটি বসানো হয়। রফতানিমুখী গেটের মধ্যে স্ক্যানার নেই সিসিটি-২ নম্বর গেটে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, রফতানিযোগ্য পণ্যের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি উন্নতি করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ২০১৯ সালে এই স্ক্যানার স্থাপন কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে ২০২১ সালে একনেক সভায় সিদ্ধান্ত মোতাবেক চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব অর্থায়নে দুটি স্ক্যানার ক্রয় প্রকল্পের ডিপিপি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে ২০২২ সালে অনুমোদিত হয়। প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ৮৯ কোটি ৩ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। পরবর্তীতে স্ক্যানার দুটি ৮৫ কোটি ৮৯ লাখ ৩৫ হাজার ২০০ টাকায় কেনার চুক্তি হয়। প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০২২ সালের মার্চ থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।
বন্দর কর্মকর্তারা জানান, রফতানিমুখী গেটে দুটি স্ক্যানার বসানোর ফলে ব্যক্তি কর্তৃক প্রচলিত কার্গো পরীক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, বাণিজ্যিক ব্যয় হ্রাসকরণ এবং মাল্টি এজেন্সি অর্থাৎ চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস কর্তৃক মনিটরিং করা যাবে।
এ প্রসঙ্গে প্রকল্প কর্মকর্তা ও চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালক (নিরাপত্তা) লে. কর্নেল মোস্তফা আরিফ উর রহমান খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম বন্দরে রফতানিমুখী কনটেইনার পরীক্ষার জন্য দুটি অত্যাধুনিক স্ক্যানার বসানো হয়েছে। একটি স্ক্যানারে ঘণ্টায় ১৫০টি কনটেইনার স্ক্যান করা সম্ভব হবে। বন্দরের তিনটি রফতানিমুখী গেটের মধ্যে জিসিবি-৪ এবং সিপিএআর গেটে এ দুই সেট স্ক্যানার বসানো হয়েছে। এখনও সিসিটি-২ নম্বর গেটে স্ক্যানার নেই। অদূর ভবিষ্যতে এ গেটেও স্ক্যানার বসানো হবে।’
তিনি বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ পণ্যের চালান এই স্ক্যানারের মাধ্যমে চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। বৈধ পণ্য ঘোষণা দিয়ে অবৈধ পণ্য রফতানি হচ্ছে কিনা, নরমাল পণ্যের ঘোষণা দিয়ে রাসায়নিক পণ্য রফতানি হচ্ছে কিনা, এক কোটি টাকার পণ্য ঘোষণা দিয়ে দুই কোটি টাকার পণ্য রফতানি হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যাবে এসব স্ক্যানারের মাধ্যমে।’
শনিবার স্ক্যানার দুটির কার্যক্রম উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরকে আন্তর্জাতিক মহলে নিরাপদ বন্দর হিসেবে আখ্যায়িত করার নিমিত্তে আধুনিক নিরাপত্তা সরঞ্জামাদি স্থাপন করাসহ যুগোপযোগী বন্দর হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের নিরাপত্তা বহরে যুক্ত হওয়া রফতানিমুখী কনটেইনার স্ক্যানার যা রফতানি পণ্যের জাহাজীকরণ প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করবে।