শার্শার গোগা সীমান্ত থেকে ৪ দিন পর ৫ কেজি স্বর্ণ সহ মশিয়ারের মরা দেহ উদ্ধার

শার্শার গোগা সীমান্তের নাটকিয় স্বর্ণ পাচারকারী মশিয়ারের মরাদেহ ইছামতি নদী থেকে উদ্ধার হয়েছে ৫কোটি ১০লক্ষ তেইশ হাজার দুই শত আশি টাকা মুল্যের ৫ কেজি দুই শত ৭১ গ্রাম (৪০ পিছ) স্বর্ন সহ। গোগা বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যরা যেখানে মশিয়ার ডুবে গিয়েছিল বলে গুঞ্জন ছড়িয়েছিল সেখান থেকে দুই কিলোমিটার দুরে কাটাখাল এর মুখ বলে স্থান থেকে উদ্ধার করে। এসময় শার্শা থানার পুলিশও উপস্থিত ছিল।

বুধবার সকাল ১০ টার সময় স্থানীয়দের সংবাদ এর ভিত্তিতে শার্শার অগ্রভুলোট বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যরা মশিয়ারের মরা দেহ উদ্ধার করে। এসময় তার কাছে থাকা ৫.২৭১ কেজি স্বর্ণ উদ্ধার হয়।

স্থানীয়রা জানায় ভারত সংলগ্ন ইছামতি নদীর বাংলাদেশের অংশে চরের দিকে সামান্য পানির মধ্যে মশিয়ারের লাশ ভাসতে দেখে। এসময় তারা অগ্রভুলোট বিজিবি ক্যাম্পে বিষয়টি অবগত করে। বিজিবি সদস্যরা ও স্থানীয় ইউপি মেম্বার এর সহযোগিতায় মশিয়ার এর লাশ উদ্ধার করে। তখন তার কোমরে ও রানে দুটি জায়গায় কসটেপ জড়ানো দুটি টোপলা উদ্ধার করে। ওই কসটেপ এর টোপলা খোলার পর সেখান থেকে ৪০ পিছ স্বর্ণের বার উদ্ধার হয়। স্থানীয় সুত্র দাবি করে বলে মরা নদীতে কোন স্রোত নেই। পানির তীব্রতাও কম। তার এই মরা দেহ তার সাথে থাকা ৫ কেজি স্বর্ণ নিয়ে কিভাবে দুই কিলোমিটার দুরে গেল। এতে সন্দেহের দানা বাঁধছে। এছাড়া মশিয়ারকে উদ্ধার এর সময় তার গায়ের কিছু অংশ ছোলা ছিল। এটা কি ভাবে হয়েছে তাও ক্ষতিয়ে দেখার বিষয়।

মশিয়ার এর স্ত্রী শাহনাজ বেগম বলেন, গত ১০ মার্চ বেলা ৩ টার সময় তার স্বামীকে তাদের হরিষচন্দ্রপুর গ্রামের রহিম বক্স তার ছেলে হাবিবার রহমান ও একই গ্রামের জামাল ডেকে নিয়ে কসটেপ দিয়ে পেচিয়ে কি যেন বেধে দেয়। তার স্বামী ওই সময় ভাত খাচ্ছিল। আমি তাদের বললাম ভাত খেয়ে যাক তখন ওরা বলে এসে খাবে বেশী সময় লাগবে না। এর পর আমাকে হাবিবুর চলে যেতে বলে। আমি চলে আসি। বিকাল ৫ টার দিকে রাস্তায় লোকজন চিৎকার করে মশিয়ার পানিতে ডুবে গেছে। এলাকার লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে খুজে তাকে উদ্ধার করতে পারে নাই।

স্থানীয় আয়ুব হোসেন বলেন, ১১ও ১২ মার্চ দুই দিন ইছামতি নদীতে ভারতের বিএসএফ ও বাংলাদেশের বিজিবি ও ডুবুরী সদস্যরা খুজে ও মশিয়ারকে উদ্ধার করতে পারে নাই। কি ভাবে ২ কিলোমিটার গিয়ে মশিয়ার ভেসে উঠল এটা তারা মিলাতে পারছে না। এটা সে পানিতে ডুবে মারা গেছে না তার কাছে আরো অধিক স্বর্ণ ছিল সেটা নিয়ে তাকে পাচার চক্র ইছামতি নদীর কাটাখাল এলাকায় নিয়ে মেরে ফেলেছে।

স্থানীয় গোগা ইউপি চেয়ারম্যান কথিত অগ্রভুলোট ভারত বাংলাদেশ এর ঘাট মালিক বলে পরিচিত তবিবার রহমান বলেন, কি ভাবে মশিয়ার এখানে আসল কে তাকে স্বর্ণ পাচার করতে দিয়েছে এটা তার জানা নাই। তার নামে যে স্বর্ণ পাচার এর মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন হচ্ছে সে এটাকে মিথ্যা বানোয়াট বলে মন্তব্য করেন। তার নামে এ ধরনের মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন হলে সে দেখে নেওয়ার ও হুমকি দেন।

স্থানীয় ইসমাইল হোসেন বলেন, হরিষচন্দ্রপুর এর হাবিবার ও তার পিতা রহিম বক্সকে আটক করলে কে কে এর সাথে জড়িত সব বেরিয়ে আসবে। যারা এর সাথে বা স্বর্ণ পাচার করে থাকে সেসব লোকও মশিয়ারকে উদ্ধার এর সময় উপস্থিত ছিল।
গোগা সীমান্তের চোরাচালানি ঘাট মালিক অশোক বলেন, নদীর স্রোতে সে ভেসে গিয়েছে। তাকে দুই দিন যাবৎ ওই এলাকায় খোজা হয়েছে সেখানে তার কোন সন্ধান মেলেনি। সে কি ভাবে ভেসে গেলে নদীতে কোন স্রোত নেই। এটা একটি মরা নদী। এ প্রশ্নে অশোক বলে দুই রাষ্ট্রের ডুবুরীরা ভাল ভাবে খোজ করে নাই।

খুলনা ২১ বিজিবি অধিনায়ক খোরশেদ আলম বলেন, আমরা মশিয়ার নিখোজ হওয়ার পর থেকে আপ্রান চেষ্টা করেছি তাকে উদ্ধার করার জন্য। আজ সে উদ্ধার হয়েছে। তার নিকটে ৫কেজি স্বর্ণ ছিল। এতে আর সন্দেহের কোন কারন নেই। সে স্বর্ণ পাচারের জন্য ইছামতি নদী পার হয়ে যাওয়ার সময় হয়ত ডুবে গিয়েছিল।

শার্শা থানার ওসি মনিরুজ্জামান বলেন, লাশের ময়না তদন্তর জন্য যশোর মর্গে পাঠানো হয়েছে। বিজিবি ৫.২৭১ কেজি (৪০ পিছ) স্বর্ণ উদ্ধার করেছে। পাচারের সাথে কারা যুক্ত আছে তা তদন্ত সাপেক্ষে বলা যাবে।