হিট স্ট্রোক হলো একটি গুরুতর তাপজনিত অসুস্থতা, যার ফলে শরীরের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের (১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট) বেশি হয়ে যায়। ত্বক লাল হয়ে যাওয়া, মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা এবং বিভ্রান্তি আতপাঘাতের প্রধান কিছু লক্ষণ-উপসর্গ।
হিট স্ট্রোকের তিনটি ধাপ
১. হিট ক্রাম্পস (heat cramps)
২.হিট এক্সাজশন( heat exhaustion)
৩.হিট স্ট্রোক ( heat stroke)
হিট ক্র্যাম্প হলো
পেশির খিঁচুনি, যা ডিহাইড্রেশন এবং অতিরিক্ত ঘাম থেকে হয় যা খুব ব্যথাদায়ক এবং মাংসপেশিতে খুব ব্যথা হয়। প্রচণ্ড গরমে মাংসপেশিতে ব্যথা হওয়ার প্রথম ধাপ হলো হিট ক্রাম্পস। পেটে, পিঠে, বাহুতে বা পায়ে হিট ক্র্যাম্প সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।
আরও পড়ুন: তীব্র গরমেও যেভাবে ঠান্ডা থাকতে পারেন
তাপ প্রতিরোধ করুন
বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন। প্রচুর পানি পান করুণ। গরমে দুপুরে ব্যায়াম করা থেকে বিরত থাকুন। সকাল বা ভোরে অথবা রাতে ব্যায়াম করতে পারেন। তবে প্রচুর পরিমাণে পানি বা ফলের রস পান করুন। পানি আপনার শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
ঘাম বন্ধ করতে তাপ থেকে বিরতি নিন। অ্যালকোহল, ক্যাফেইন এবং চিনিযুক্ত পানীয় পান করা থেকে বিরত থাকুন। হিট ক্যাম্পের সঙ্গে প্রচুর ঘাম বের হয় শরীরে থেকে। বলা যেতে পারে তিনটা স্বাস্থ্যের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।
হিট এক্সাজশন
অতিরিক্ত ক্লান্তি, ঘাম, পানির তৃষ্ণা পাওয়া, পেশি ব্যথা, দ্রুত শ্বাস নেওয়া দুর্বল হয়ে পড়া ইত্যাদি।
হিট স্ট্রোকে শরীরের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড এ উঠে যায়। শরীর শুষ্ক হয়ে যায়, ঘাম বন্ধ হয়ে যায়, মাথা ঝিমঝিম করা, অস্বাভাবিক আচরণ, অজ্ঞান, খিচুনি হতে পারে, হিট স্ট্রোকে শরীরের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড এ উঠে যায়, শরীর শুষ্ক হয়ে যায়, ঘাম বন্ধ হয়ে যায়, মাথা ঝিমঝিম করা, অস্বাভাবিক আচরণ, অজ্ঞান, খিচুনি হতে পারে।
হিট স্ট্রোক হলো— একটি মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি। এখানে একজন রোগী মারা যাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি।
দেহের তাপমাত্রা যখন খুব বেশি ছাড়িয়ে যায়, তখন রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। শিশুদের তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কম তাই বেশি ঝুঁকিতে থাকে শিশুরা।
যারা দিনমজুর, শ্রমিক মাঠে-ঘাটে দীর্ঘ সময় ধরে একনাগারে রোদের মধ্যে কাজ করে তাদের আক্রান্ত সম্ভাবনা খুব বেশি। সুস্থ থাকতে হলে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা সবার আগে নিতে হবে।
বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ঘরে থেকে বাইরে বের হবেন না। দিনের বেলা বাইরে বের হলে অবশ্যই ছাতা সঙ্গে রাখবেন অথবা টুপি ব্যবহার করুন। বাইরে বের হলে সুতির ঢিলেঢালা জামাকাপড় পড়বেন, বিশুদ্ধ খাবার পানি খাবেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ২ থেকে ৩ লিটার পানি পান করুন, ঘামের সঙ্গে লবন ও পানি বের হয়ে যায় তাই ওরস্যালাইন খাবেন ফলের রস খাবেন। খেয়াল রাখতে হবে পানি যেন বিশুদ্ধ হয়।
যারা টানা একনাগারে দিনের বেলায় বাইরে রোদের মধ্যে কাজ করছেন তারা একনাগারে কাজ না করে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে ছায়ার মধ্যে তারপর আবার কাজ শুরু করবেন।
হিট স্ট্রোকের আগে যখন হিট ক্র্যাম্প বা হিট এক্সহসশন দেখা দেয় তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিলে হিট স্ট্রোক প্রতিরোধ করা সম্ভব।
যদি হিট স্ট্রোকের মতো লক্ষণগুলো দেখা যায় মাথা ঘুরানো, মাথা ঝিমঝিম করা, বমি বমি ভাব, হৃদ স্পন্দন বেড়ে যাওয়া, শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া তাহলে সঙ্গে সঙ্গে রোগী নিজেই যেতে পারলে ভালো অথবা আশপাশে যদি কেউ থাকে তাহ লে রোগীকে ছায়াযুক্ত শীতল স্থানে নিয়ে যেতে হবে এবং চোখে-মুখে পানির ঝাপটা দিতে হবে। জামাকাপড় টাইপ থাকলে ঢিলা করে দিতে হবে। নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
লেখক: আয়েশা আক্তার
উপ পরিচালক
২৫০ শয্যার টিবি হাসপাতাল।