বেনাপোল কাস্টমসে ১০ মাসে রাজস্ব ঘাটতি ৬৭ কোটি ৮৯ লাখ টাকা

বৈশ্বিক মন্দা ও ডলার সংকটে ঋণপত্র (এলসি) খুলতে না পারায় বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি কমে গেছে। ফলে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) ল্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব আদায় কম হয়েছে ৬৭ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। রাজস্ব আদায়ের ল্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ২৮১ কোটি টাকা। সেখানে আদায় হয়েছে ৫ হাজার ২১৩ কোটি ১১ লাখ টাকা।

 

২০২২-২৩ অর্থ বছরের প্রথম ১০ মাসে বেনাপোল বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি করা হয়েছিল ১৭ লাখ ৫৫৩ মেট্রিক টন পণ্য। আর চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে আমদানি করা হয়েছে ১৪ লাখ ৪২ হাজার ৫৮৩ মেট্রিক টন। পণ্য কম আমদানি হয়েছে ২ লাখ ৫৭ হাজার ৯৬৫ মেট্রিক টন।

 

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলার সংকট ও দামের উর্ধ্বগতি কোনভাবে নিয়ন্ত্রণে না আসায় আমদানিকারকেরা আমদানি করতে পারছে না। দ্রুত সংকট না কাটলে বছর শেষে আমদানির পরিমাণ আরো কমে বড় ধরনের রাজস্ব ঘাটতির কবলে পড়তে হতে পারে।

 

কাস্টমস সুত্রে জানায়, ভারত থেকে যেসব পণ্য আমদানি হয় তার ওপর প্রতিমাসে নিদিষ্ট পরিমাণে রাজস্ব আয়ের ল্যমাত্রা নির্ধারণ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর। আমদানি স্বাভাবিক থাকলে ল্যমাত্রার কাছাকাছি পৌঁছায় কাস্টমস কর্তৃপ। কিন্তু আমদানি কমে যাবার কারণে গত কয়েক বছর ধরে রাজস্ব আদায়ের ল্যমাত্রা পূরণ করতে পারছেনা বেনাপোল কাস্টমস।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কাস্টমস বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল লতিফ জানান, ডলারের দাম ঊর্ধ্বগতি আর সংকটের কারণ দেখিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কয়েক বছর ধরে এলসির সংখ্যা কমিয়েছেন। এতে আমদানি কমায় দেখা গেছে রাজস্ব ঘাটতি। তবে অর্থবছর শেষে এ সংকট মোকাবেলা করে বাণিজ্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।

বেনাপোল আমদানি-রফতানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক জানান, বৈশ্বিক মন্দায় ডলার সংকটের কারণ দেখিয়ে ব্যাংকগুলো ডলার দাম অযৌক্তিক বাড়ানোয় এলসি খুলতে পারছি না। সরকারের নির্ধারিত ডলার রেট থাকলেও বর্তমানে ১০০ ডলারের বিপরীতে ব্যাংক ১২৫ থেকে ১২৮ টাকা পর্যন্ত কাটছে। এর বিরূপ প্রভাবে দেশে শিল্পকলকারখানায় উৎপাদন ব্যহত ও আমদানি পণ্যের মূল্য লাগামহীনভাবে বাড়ার আশঙ্কা বাড়ছে।

যশোরের মোটরসাইকেল পার্টসের বৃহৎ আমদানিকারক রিপন অটোসের চেয়ারম্যান এজাজ উদ্দিন টিপু জানান, ডলারের বিনিময়মূল্য বৃদ্ধির কারণে পণ্য আমদানি বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। আবার ব্যাংকগুলোও এলসি করতে চাইছেনা। এতে করে মোটরপার্টস ও মোটরসাইকেল পার্টসের আমদানিকারকরা পণ্য আমদানি করতে পারছে না।

যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খান জানান, ডলার সংকটের কারণে সবচেয়ে বেশি তিগ্রস্ত হচ্ছেন আমদানিকারকেরা। আবার কিছু এলসি করা গেলেও ডলারের বিনিময় হার বেশি লাগছে। এতে করে পণ্যের দাম বেশি লাগছে। আর আমদানি কমে গেলে সরকারের রাজস্ব আদায়ও কম হবে এটাই স্বাভাবিক।

বেনাপোল কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার শাফায়েত হোসেন জানান, ব্যবসায়ীরা পণ্য আনার জন্য ব্যাংক থেকে এলসি খুলতে পারছেনা। যেকারণে আমদানি কমে গেছে। আর আমদানি কমলে আমাদের রাজস্ব আদায়ও কমে যাবে এটা স্বাভাবিক।