যশোরে ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ

যশোরে রাস্তায় উগ্রতা দেখাচ্ছে ট্রাফিকের দায়িত্ব নিয়ন্ত্রণকারী শিক্ষার্থীরা। সামান্যতেই সাধারণ মানুষের সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়ছে। আবার তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে টিপ্পনীও দিচ্ছে। তাদের জবাবদিহির মধ্যে পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে, যা রীতিমত বেয়াদবী। আবার অনেকে ট্রাফিক আইন ভাঙ্গার অপরাধে মামলা করার চ্যালেঞ্জ পর্যন্ত ছুড়ে দিচ্ছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে যশোরের একজন সাংবাদিককে রীতিমতো দালাল বলে গালিগালাজ করেছে ওই শিক্ষার্থীরা। এতে হতবাক হয়েছেন পথচারিরা।

গত চারদিন ধরে যশোরের পুলিশ বিভাগ কর্মবিরতি পালন করছে। ফলে যশোরের কোথায়ও ট্রাফিক পুলিশ নেই। এদিকে রাস্তায় যানবাহন চলাচল ধীরে ধীরে বাড়তে থাকায় ট্রাফিক ব্যবস্থা প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। মানুষ ও যানবাহন যাতে সুশৃঙ্খলভাবে চলাচল করতে পারে সেই তাগিদে কোটা সংষ্কার আন্দোলনের কর্মীরা রাস্তায় নেমে পড়ে। সাথে আনসার ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদেরও দেখা গেছে রাস্তায়। যেটা রীতিমতো সাড়া ফেলে যশোরসহ সারা দেশে। সাধারণ মানুষের প্রসংশা পেতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। সচিত্র প্রতিবেদনও প্রকাশ করে যশোরসহ সারা দেশের সংবাদ মাধ্যম গুলো। অনেকেই তাদের রাস্তায় খাবার ও পানি সরবরাহ করছে। কিন্তু এই মহৎ কাজটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ছে কিছু উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থীদের কারনে। অনেকে তাদের আচরণে বিরক্তবোধ করছেন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে শহরের মনিহার এলাকায় যান যশোরে দৈনিক স্পন্দন’র চীফ রিপোর্টার ও প্রেসক্লাব যশোরের যুগ্ম সম্পাদক কাজী আশরাফুল আজাদ। তার মাথায় হেলমেট না থাকায় একজন শিক্ষার্থী তাকে দাড় করান। জিজ্ঞাসা করেন ‘হেলমেট নেই কেন?’ তখন ওই সাংবাদিক বলে হেলমেট না থাকা অন্যায়, কিন্তু আপনারা এই ভাবে কইফিয়ৎ চাওয়া ঠিক না। আপনি প্রশাসনের কেউ না। ফলে আপনি শিক্ষার্থী, আপনাকে বিনয়ী হতে হবে। সে সময় আশেপাশে চলে আসেন আরো কয়েকজন শিক্ষার্থী। তারা নানাভাবে কটুক্তি করতে থাকেন। একসময় চারপাশ ঘিরে ধরে বলতে থাকে, সাংবাদিকরা তো দালাল, শেখ হাসিনার দালাল’। এই দৃশ্য দেখতে থাকেন পথচারিরা। এরপর নানা অশোভন কথা বলতে থাকে। একপর্যায়ে এক শিক্ষাথী মুঠোফোন বের করে অন্যদের বলতে থাকে ‘সাংবাদিকের চারিপাশে দাড়া, একটা সেলফি তুলি।’ ওই শিক্ষার্থী তার মুঠোফোনে একটি সেলফিও সংরক্ষণে রাখেন। তাদের আচারণও ছিলো মারমুখি। অগত্য আর কোন কথা না বাড়িয়ে সাংবাদিক কাজী আশরাফুল আজাদ ওই স্থান ত্যাগ করেন। দৃশ্যটি অনেক পথচারি দেখে বিস্মিত হয়েছেন।

মুড়লী মোড়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে দায়িত্ব পালন করছিলো বিএনসিসি’র সদস্যা। হেলমেট না থাকায় দাঁড় করিয়ে নানা কুটক্তি করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সাধারণ মানুষ কোথায় যাচ্ছে সেটাও তারা জিজ্ঞাসা করছে। হেলমেট না থাকার কারনে মামলা হবে বলে সাধারণ মানুষকে চ্যালেঞ্জ পর্যন্ত করছে। যা মানুষের কাছে রীতিমতো বিরক্তিকর মনে হচ্ছে।

আর এর রোডের ব্যবসায়ী আরমান হোসেন বিরক্তির সুরে বলেছেন, শিক্ষার্থীরা একটি ভাল কাজ করছে। তাদের কারনে মানুষ ভালভাবে চলাচল করতে পারছে। কিন্তু সেই শিক্ষার্থীরা রীতিমতো কৈফিয়ত চাচ্ছে যা তারা পারে না, তাদের কৈফিয়ত চাওয়ার কোন অধিকার বা আইনগত ভিত্তিনেই। অনেকের সাথে দুর্ব্যবহার করছে। এটা কাম্য নয়। তারা মানুষের সাথে সুন্দর ব্যবহার করবে। হাসি মুখে আইন মেনে চলার পরামর্শ দেবে। কোন ভাবে সাধারণ মানুষের কৈফিয়ত চাইতে পারে না।

এ বিষয়ে সাংবাদিক কাজী আশরাফুল আজাদের সাথে কথা হয় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সফল নেতা সাব্বির খানের সাথে। তিনি এই ঘটনার জন্য ফোনে দুঃখ প্রকাশ করেছেন, এবং কারা আসাধাচারণ করেছে তা দেখছেন বলে জানিয়েছেন।