বাগেরহাটের খাদ্য কর্মকর্তার দুনীর্তি ও নারীকেলেংকারী ঘটনায় তোলপাড়: ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিলেন সচিব

এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন বাগেরহাট সদর খাদ্য গুদামের আলোচিত ইনচার্জ আবু বকর সিদ্দিক । এতে জেলা ও আঞ্চলিক খাদ্য কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে । ক্ষোভ বাড়ছে খুলনা বিভাগের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অন্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে । তবে এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব।

গত ৩ ফেব্রুয়ারি বহু অপকর্ম করে এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে বাগেরহাট সদর গুদামের ওসিএলএসডি শিরোনামে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। এতে দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছেন বাগেরহাট সদর খাদ্য গুদামের ওসিএলএসডি আবু বকর সিদ্দিক । সংবাদ প্রকাশের পর বেসামাল হয়ে বন্ধের জন্য বিভিন্ন মহলে তদবির করে যাচ্ছেন । এদিকে দুনীর্তিপরায়ণ ওসিএলএসডি আবু বকর সিদ্দিকের বিরুদ্ধে বেরিয়ে আসছে দুনীর্তি ও অনিয়মের আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য । ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর আবু বকর সিদ্দিক বিগত সরকারের আমলে ছাত্রলীগের কোটায় সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরে দুই বার নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে দুনীর্তি ও অনিয়মে অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠেন । তার চাকরিকালীন বেশি সময় অতিবাহিত করেছেন অর্থ ও নারীর পিছনে ।

সুত্র বলছে, গুদামে কেনাকাটায় ছলচুরিতে ওস্তাদ আবু বকর সিদ্দিক । তিনি চুয়াডাঙ্গা সদর, সাতক্ষীরার কলারোয়াসহ যে কয়টি গুদামে দায়িত্ব পালন করেছেন প্রতিটি গুদামে একই স্টাইলে ছলচুরি করে নিজের পকেটভারী করেছেন । বাগেরহাটের ক্ষেত্রেও যার ব্যতিক্রম হয়নি। বাগেরহাটে বিগত বোরো কেনাকাটায় লালচে বর্ণের ও পুরাতন চাল কিনে খামাল ভতি করেছেন । খামালের চারপাশে কিছু ভালো মানের চাল সাজিয়ে স্তুপ করে রাখা হয়েছে । এমনভাবে গঠন করা করা হয়েছে যে খামাল না ভাঙ্গলে যা বাইরে থেকে দেখে বোঝার কোন উপায় নেই যে ভেতরের চালগুলো খাবারের অনুপযোগী নিম্নমানের । এই ছলচুরি প্রসেসটি তিনি ইতিপূর্বে চুয়াডাঙ্গা সদর ও সাতক্ষীরার কলারোয়া ওসিএলএসডি থাকাকালীন সময়েও করেছিলেন । ওই অপকর্মের দায়ে আবু বকর সিদ্দিককে চুয়াডাঙ্গায় সাসপেন্ড এবং কলারোয়া থেকে সট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছিল।

সুত্র বলছে, বাগেরহাট সদর খাদ্য গুদামের খামালের অভ্যন্তরে নিম্মানের চাল ও পুরাতন বস্তা থাকায় গুদামের খামাল ভাঙ্গলেই তার কুকর্ম ফাঁস হয়ে যাবে। এজন্য তদন্ত কমিটি গঠন না করতে ও খামাল ভেঙ্গে পরীক্ষা না করার জন্য ধুরন্ধর আবু বকর সিদ্দিক ইতিমধ্যে স্থানীয় খাদ্য কর্মকর্তা ম্যানেজ করতে দৌঁড়ঝাপ করছেন।

সুত্র বলছে , বাগেরহাটে যোগদানের পরপরই আবু বকর সিদ্দিক বস্তা কেলেংকারি করে আলোচনায় আসেন। ওই সময় আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করে যার সত্যতাও পাওয়া যায় । কিন্তু আবু বকর সিদ্দিকের বিরুদ্ধে এ ঘটনায় উল্লেখযোগ্য কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। অভিযোগ রয়েছে নিজের রাজনৈতিক প্রভাব ও আরসিফুড কে মোটা অঙ্কের টাকা উৎকোচ দিয়ে বস্তা কেলেংকারির ঘটনাটি ধামাচাপা দেন আবু বকর সিদ্দিক ।
সুত্র বলছে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে আবু বকর সিদ্দিক খাদ্য পরিদর্শক সমিতির ব্যানারে থেকে একদিকে অপকর্ম করেছেন অন্যদিকে নেতৃত্বও দিয়েছেন।

ওই সমিতি ইতিমধ্যে বিলুপ্ত হয়েছে । দেশ ছেড়ে পালিয়েছে ফ্যাসিস্ট সরকার। তবে ধুরন্ধর আবু বকর সিদ্দিকও ভোল্ট পাল্টে হয়েছেন বৈষম্য বিরোধী খাদ্য পরিদর্শক সংগঠনের নেতা । যার নামে তদবির চলছে গুদামে ওসিএলএসডি’র বদলীতে। যদিও ওই বৈষম্য বিরোধী খাদ্য পরিদর্শক সমিতি গঠনের বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন আবু বকর সিদ্দিক । সম্প্রতি আরসিফুড অফিস থেকে এক বদলীর আদেশে ঝিনাইদহের সদর খাদ্য গুদামে যোগদান করতে বলা হয় জাহাঙ্গীর আলমকে। ঝিনাইদহের সদর খাদ্য গুদামের দায়িত্ব গ্রহণের দিন বাগেরহাট থেকে ঝিনাইদহ সদর খাদ্য গুদামে ছুটে যান আবু বকর সিদ্দিক । ওই দায়িত্ব গ্রহণের সময় গুদামের নবাগত ওসিএলএসডি’র সাথে একটি ছবি তুলে নিজের ফেসবুকে একটি পোষ্ট দেন।

বাগেরহাট থেকে ঝিনাইদহের দূরত্ব প্রায় ১৪০-১৫০ কিলোমিটার । আবু বকর সিদ্দিক ঊর্ধ্বতন কোন কর্মকর্তাও নয়। এটা তার অফিসের পাশ্ববর্তী কোন অফিসও নয়। আবার ওই দিন তিনি ছুটিও নেননি
। ওই বদলীর সাথে তার কোন সংশ্লিষ্টতা না থাকলে কিসের ভিত্তিতে অফিস ফাঁকি দিয়ে বাগেরহাট থেকে ঝিনাইদহে গিয়ে দায়িত্ব গ্রহণের সময় উপস্থিত ছিলেন। এ প্রশ্নের কোন সুদুত্তর মিলছে না। অভিযোগের ব্যাপারে
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাসুদুল হাসানের সাথে যোগাযোগ করা হলে, তিনি আবু বকর সিদ্দিকের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন।