জিম্বাবুয়ে সিরিজের প্রথম টেস্ট খেলে পিএসএলে যাচ্ছিলেন পেসার নাহিদ রানা। তার জায়গায় স্কোয়াডে আনা হয়েছিল স্পিনার তানভির ইসলামকে। তখনই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল চট্টগ্রাম টেস্টে বাংলাদেশ দলের পরিকল্পনা, স্পিন উইকেট বানিয়ে একগাদা স্পিনার খেলিয়ে প্রতিপক্ষকে কাবু করার কৌশল ছিল দলের। সে কৌশলে সফলও হয়েছে বাংলাদেশ, ৩ দিনের শেষে তুলে নিয়েছে ইনিংস ও ১০৬ রানের বিশাল এক জয়।
এই জয়ে মুখরক্ষা হয়েছে বটে। প্রথম টেস্টে ৩ উইকেটের হারে দলটা হোয়াইটওয়াশের দুয়ারে ছিল, তা এড়ানো গেছে, সিরিজ ১-১ ড্র করা গেছে। কিন্তু তাতে প্রশ্নও উঠে যাচ্ছে। এমন সিদ্ধান্ত কি আসলে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে সামনে এগোতে দিচ্ছে, নাকি আবার পিছিয়ে নিয়ে যাচ্ছে?
এমন প্রশ্নই তুলেছেন বাংলাদেশের সাবেক নির্বাচক হাবিবুল বাশার। তিনি হতাশা গোপন করেননি। ক্রিকবাজকে তিনি বলেছেন, ‘আশা করি শুধুই একটা ম্যাচের জন্য ব্যতিক্রম করা হয়েছে। হয়তো আমাদের একটা ম্যাচ জিততেই হতো, সেই চিন্তা থেকেই এমন উইকেট তৈরি হয়েছে। আমরা সবাই জানি যে, জিম্বাবুয়ের মতো দলের বিপক্ষে এমন উইকেট বানালে আমরা জিতব। তবে আমরা যে পুরনো চিন্তা থেকে বের হচ্ছিলাম, এটা আবার সেই দিকেই ফিরে যাওয়া হলো আর কি।’
জিম্বাবুয়ে এই সফরে আসার আগে ৪ বছর ধরে কোনো জয় পায়নি। সেই দলের বিপক্ষেও এমনভাবে জয় তুলে নেওয়ার ফর্মুলার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুললেন সাবেক এই নির্বাচক, ‘এই ধরনের উইকেট আমরা দক্ষিণ আফ্রিকা বা অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের বিপক্ষে তৈরি করলে সেটা যৌক্তিক হতো। কারণ, বড় দলগুলোর বিরুদ্ধে আমরা হোম কন্ডিশনের সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করতেই পারি। কিন্তু জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এমন উইকেট বানানো কতটা যৌক্তিক, সেটা নিয়ে প্রশ্ন আছে।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ হেরে দ্বিতীয় ম্যাচে স্পিন কৌশলে আশ্রয় নেওয়ার মানে প্রক্রিয়া থেকেও পিছু হঠা, মনে করিয়ে দিলেন হাবিবুল। তিনি বলেন, ‘আমাদের বিদেশের মাটিতে পারফরম্যান্স নিয়ে বরাবরই প্রশ্ন আছে। আমরা চাচ্ছিলাম ব্যাটারদের বাউন্সি উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে নিতে শেখাতে। প্রথম টেস্টে সেটা হয়নি বলে যদি পুরোনো পথে ফিরি, সেটা সঠিক নয়।’
তবে দলের সিনিয়র সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন অবশ্য ভিন্ন মত পোষণ করলেন। তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামে সাধারণত ব্যাটিং সহায়ক উইকেটই থাকে। গরম আবহাওয়ায় পেসাররা খুব একটা সহায়তা পায় না। তাই আমরা দুজন পেসার নিয়ে খেলেছি। জিম্বাবুয়েও একজন পেসার বাদ দিয়ে বাড়তি স্পিনার খেলিয়েছে।’
তিনি জানান, প্রথম ইনিংসে স্পিনারদের সাফল্যের কারণটা হচ্ছে ধৈর্য, উইকেটের কোনো কারসাজি নয়। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রথম ইনিংসে ধৈর্য ধরে বল করেছি। স্পিনাররা খুব বেশি টার্ন পায়নি, তাইজুল ফ্লাইটে উইকেট পেয়েছে। কেউ যদি মনে করে আমরা পিচের কারণে জিতেছি, সেটা ভুল হবে।’
চট্টগ্রামে দুই পেসার খেলানোর মানে পেসারদের ওপর দলের আস্থাহীনতা নয়, সেটা মনে করিয়ে দেন সালাউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমাদের পেসারদের প্রতি এখনও পূর্ণ আস্থা আছে। তবে বিপিএল ও ডিপিএলের কারণে তাদের গতি কিছুটা কমে গেছে। সঠিক অনুশীলনের মাধ্যমে তা ফিরে আসবে। একটা-দুটা ম্যাচের পারফরম্যান্স দিয়ে ক্রিকেটের অগ্রগতি বা পিছিয়ে যাওয়া নির্ধারণ করা যায় না। আমাদের আরও অনেক চ্যালেঞ্জ পার করতে হবে।’