ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার তামিনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি এখন জরাজীর্ণ এক ভবন। ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ছে, বেরিয়ে এসেছে মরিচা ধরা রড, আর বিমের ফাটল দেখে জীবনহানির আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। অবস্থা এতটাই করুণ যে, আকাশে মেঘ দেখলেই বিনা নোটিশে স্কুল ছুটি দিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন শিক্ষকরা। ঝড়-বৃষ্টি তো দূরের কথা, সামান্য মেঘ দেখলেই বইখাতা আর নিজেদের বাঁচাতে শিক্ষার্থীরা দ্রুত বাড়ি ফেরে।
চরম ঝুঁকিতে শিক্ষার্থীরা
বিদ্যালয়ের এই করুণ দশা দীর্ঘ এক দশক ধরে। ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এবং ১৯৯৪ সালে সরকারিভাবে নির্মিত তিন কক্ষের একতলা ভবনটির ছাদের ফাটল দিন দিন বাড়ছে। পলেস্তার খসে বহু শিক্ষার্থীর কপাল ফেটেছে। সম্প্রতি ক্লাস চলাকালীন সময়ে এক শিশু শিক্ষার্থীর মাথায় পলেস্তারা ভেঙে পড়ে, যার ফলে তাকে বেশ কয়েকটি সেলাই দিতে হয় এবং মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে সে বেঁচে ফেরে।
অভিভাবক আব্দুর রাজ্জাক মোল্যা, লাইলি খাতুন, ছবিরন নেছা, ঝর্ণা খাতুনসহ অনেকেই জানান, তাদের সন্তানদের নিরাপত্তার কথা ভেবে তারা স্কুলের আশেপাশে বা শিক্ষকদের কমনরুমে বসে থাকেন। প্রধান শিক্ষক আহাদ আলীসহ অন্যান্য শিক্ষকরা জানান, তাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া ও খেলাধুলায় জেলায় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করলেও, এই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের কারণে পাঠদান মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
বারবার আবেদন, তবুও সুরাহা নেই
শিক্ষকরা জানান, দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বহু বছর ধরে উপজেলা ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিত ও মৌখিকভাবে বিষয়টি জানিয়ে এলেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। প্রধান শিক্ষক আহাদ আলী আরও জানান, স্কুলের সামনের একমাত্র খেলার মাঠটি সামান্য বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায়, ফলে বর্ষা মৌসুমে খেলাধুলা বা শিক্ষার্থীদের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, দ্রুত নতুন ভবন নির্মাণ না হলে পাঠদান বন্ধ হয়ে যাবে এবং যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
এ বিষয়ে শৈলকুপা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিশ্বজিত সাহা জানান, বিষয়টি আগামী মাসিক সমন্বয় সভায় উপস্থাপন করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে এলাকাবাসী ও অভিভাবকদের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কালক্ষেপণ করছে এবং দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।