পপুলার-দেশ ক্লিনিক ও আরিয়ান ডায়াগনস্টিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের হানা, লাখ টাকা জরিমানা

যশোরের পপুলার মেডিকেল সার্ভিসেস অ্যান্ড হসপিটাল, দেশ ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও আরিয়ান ডায়াগনস্টিক সেন্টারে হানা দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। মঙ্গলবার দুপুরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহির দায়ান আমিনের নেতৃত্বে একটি টিম এ অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় ওই তিন প্রতিষ্ঠানে নানা অসঙ্গতি ও অনিয়মের কারণে এক লাখ ১৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।

সূত্র জানায়, দুপুরে ভ্রাম্যমাণ আদালত শহরের ঘোন নওয়াপাড়া রোডের পপুলার মেডিকেল সার্ভিসেস অ্যান্ড হসপিটালে যায়। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, চাকচিক্যপূর্ণ এক্স-রে রুম, অথচ সেখানে যশোর এমএম কলেজের সমাজবিজ্ঞানের ছাত্র এক্স-রে করছে। এ সংক্রান্ত তার কোনো সনদ না থাকলেও তিনি এ পেশায় নিয়মিত কাজ করছেন।

শুধু তাই নয়, দুইজন মহিলা ল্যাব টেকনিশিয়ান কর্মরত রয়েছেন, তারাও কোনো সনদ নেই। ভ্রাম্যমাণ আদালতের এ সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে তারা ব্যর্থ হন। এর বাইরেও কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে নানা অনিয়মের বিষয় উঠে আসে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছে। প্রতিষ্ঠানটি যথেষ্ট পরিমাণে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকলেও বড় ধরনের অসঙ্গতি উঠে আসে। এসব অপরাধে প্রতিষ্ঠান মালিকদের একজন হাসিবুর রহমানের কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।

পরে ওই টিম যায় যশোর জেনারেল হাসপাতালের ২য় গেটের সামনে দেশ ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। সেখানে গিয়ে দেখা যায় আরও খারাপ অবস্থা। রিসিপশনিস্ট নেই, তিনি রয়েছেন রেস্টে। একইভাবে নেই ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার ও নার্সও। কিছু সময় পর হুড়মুড় করে কেউ কেউ চলে আসেন প্রতিষ্ঠানে। খাতা-কলমে ছয়জন নার্স থাকলেও একজনও নেই সেখানে। এ সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতের টিম অপারেশন থিয়েটার পরিদর্শন করে দেখতে পায় জরাজীর্ণ অবস্থা। অপারেশনে ব্যবহৃত সরঞ্জামগুলোর হাল বেহাল। মানা হচ্ছে না নিয়মনীতি। নেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা।

একই রকম অবস্থা দেখা যায় প্যাথলজি ও স্যাম্পল রুমেও। এছাড়া প্রতিষ্ঠানের ওয়ার্ডগুলো দেখা যায় গুমোট প্রকৃতির। সেখানে রয়েছে মারাত্মক অক্সিজেনের ঘাটতি। দেখা যায়, একপাশে রয়েছে ময়লা আবর্জনার স্তুপ, অপরপাশে শুয়ে আছে নবজাতক মা ও শিশুরা। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নেই বললেই চলে। নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। বাধ্যতামূলকভাবে থাকতে হবে এমন কাগজপত্রও দেখাতে ব্যর্থ হয় প্রতিষ্ঠানের মালিক রাজু আহম্মেদ। ভ্রাম্যমাণ আদালত প্রতিষ্ঠান মালিকের কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করে।

এর আগে, ওই টিম যায় যশোর শহরের নওয়াপাড়া রোডের আরিয়ান ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠান শুরুর আগেই কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। তাদের নেই কোনো অনুমোদন, অথচ রোগীর আসা-যাওয়া চলছে দেদারসে। এ সময় সতর্ক করে প্রতিষ্ঠান মালিক আনিচুর রহমানের কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।

ভ্রাম্যমাণ আদালতে আরও অংশ নেন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট রেজওয়ান সরদার, এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মাকামে মাহমুদা মীম, এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ডারিয়া নওশিন লুবনা ও যশোর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার রওশন আরা লিজা।