ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন দুর্যোগপীড়িত শ্যামনগরের বাসিন্দারা

সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার আয়তন প্রায় ২ হাজার কিলোমিটার।সুন্দরবন সংলগ্ন এই উপজেলার জনসংখ্যা ৩ লাখেরও বেশি। দুর্যোগ এবং লবণ শ্যামনগরের বাসিন্দাদের প্রধান বিপদ সিডর এবং আইলার মত প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করেই বাঁচতে হচ্ছে তাদেরকে। একদিকে নিত্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের হানা, অন্যদিকে সমুদ্র ঘেঁষা এলাকা হওয়ায় জমি-পানি সবকিছুতেই লবণের আগ্রাসন। যা তাদের দৈনন্দিন জীবন যাপন করে তুলেছে কঠিনতর।

এতসব সমস্যা জয় করেও অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন সাতক্ষীরার শ্যামনগরের বাসিন্দারা। তাদের এই যুদ্ধে সহযোগী হয়ে পাশে রয়েছে বেশ কয়েকটি উন্নয়ন সংস্থা। তাদের থেকে এখানকার বাসিন্দারা পেয়েছেন চিংড়ি চাষে উন্নত প্রশিক্ষণ, আয়ত্ব করেছেন লবনসহিষ্ণু চাষাবাদের কৌশলও।

তেমনই একটি উন্নয়ন সংস্থা সিএনআরএস। এই সংস্থাটি বাংলাদেশ বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় সিডিপি, ক্রেলসহ বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে সুন্দরবন ও বেঁড়িবাধ রক্ষা, মিঠা পানির পুকুর খনন, লবণসহিষ্ণু মাটিতে সবজি চাষ, মাছ চাষ, হস্তশিল্পের বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি, হাঁস-মুরগী পালনসহ নারী-পুরুষদের বিকল্প কর্মসংস্থান উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

ক্রেল প্রকল্পের আওতায় ২০১৩ সালে শ্যামনগর উপজেলার সুন্দরবন বেষ্টিত উপকূলীয় এলাকার ৩ টি ইউনিয়নের প্রায় ২০ কিলোমিটার চর বনায়ন করে। যা এখন দৃষ্টিনন্দন মিনি সুন্দরবন নামে খ্যাত। আর এ বনায়নের ফলে এলাকার বেঁড়িবাধ রক্ষার পাশাপাশি মিঠা পানির পুকুর রক্ষার কাজসহ বিভিন্ন সুবিধা পাচ্ছেন এ অঞ্চলের মানুষ।

এছাড়া এখানকার মানুষের প্রধান সমস্যা বিশুদ্ধ পানির অভাব। মানুষ আগে বর্ষার পানি ধরে রেখে অথবা ৭/৮ কিলোমিটার মাটির রাস্তা পায়ে হেঁটে পুকুর থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করত। এখন এই প্রকল্পের আওতায় কয়েকটি পুকুর খনন করে পিএসএফ এর মাধমে তারা বিশুদ্ধ খাবার পানি সংগ্রহ করতে পারছে।

যে সব নারীরা সুন্দরবনের উপর নির্ভর করে প্রতিদিন ৫০/৬০ টাকা আয় করতো এ রকম দেড় হাজারেরও বেশি নারীদের প্রশিক্ষণ নিয়ে হস্তশিল্পের বিভিন্ন প্রকার সামগ্রী তৈরি করছে। তারা এখন দিনে ১৫০/২০০ টাকারও বেশি আয় করছেন। তাদের হাতে তৈরি এসব সামগ্রী দেশের বাইরেও যাচ্ছে।

অন্যদিকে পুরুষদেরও মটরভ্যান, ইজিবাইক কিনে দেওয়াসহ যে যে কাজে পারদর্শী তাদের সে কাজের জন্য সহযোগিতা করা হয়েছে। এছাড়া ৬শ’ জনকে বিভিন্ন টিম গঠন করে বন ও বেঁড়িবাধ রক্ষার কাজে নিয়োজিত করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের বনমন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় উপকুলীয় এলাকায় এভাবে বন ও বেঁড়িবাধ রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে সিএনআরএস।

এছাড়া এ প্রকল্প থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে চিংড়ি ঘেরের পাড়ে নানা রকম সবজি চাষ করে বাড়তি অর্থ উপার্জন করছেন এ অঞ্চলের নারীরা।

এ ব্যাপারে ক্রেল প্রকল্পের কো-অর্ডিনেটর শরন কুমার চৌহান জানান, সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জে এ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১২ হাজার সুফল ভোগী কাজ করে যাচ্ছেন। তারা এ প্রকল্পের কাজ করে ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটিয়েছেন।

তিনি আরো জানান, এ প্রকল্পের মাধ্যমে নারী-পুরুষদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিকল্প কর্মসংস্থানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বিকল্প কর্মসংস্থানের মধ্যে রয়েছে- সুন্দরবন ও বেঁড়িবাধ রক্ষা, মধূ আহরণ, মিঠা পানির পুকুর খনন, লবণসহিষ্ণু মাটিতে সবজি চাষ, মাছ চাষ, হস্তশিল্পের বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি, হাঁস-মুরগী পালনসহ বিভিন্ন ধরনের আয়বর্ধনমূলক কার্যক্রম।

শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউপি চেয়ারম্যান ভবতোষ কুমার মন্ডল জানান, সুন্দরবন ও সুন্দরবনের বেঁড়িবাধ রক্ষায় ক্রেল স্থানীয় জনগণকে সাথে নিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।