পুলিশকে অন্ধকার যুগে নিয়ে যান হাসিনা

বাংলাদেশ পুলিশের কিছু অসাধু কর্মকর্তার জন্য পুরো বাহিনীর ভাবমূর্তি সংকটের মুখে পড়েছে। এ সংকটের জন্য দায়ী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা। তিনি গত ১৫ বছরে পুলিশকে অন্ধকার যুগে নিয়ে গেছেন এবং তাদের অপরাধী বানিয়েছেন। চেইন অব কমান্ড ভেঙে দিয়ে পুরো বাহিনীকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। দেশের স্বার্থে পুলিশকে হাসিনার অন্ধকার যুগের চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। পুলিশকে সত্যিকার অর্থে জনবান্ধব ও মানবিক বাহিনী হিসাবে গড়ে তুলতে সংস্কারের বিকল্প নেই। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান সেই সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে।

শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতি আয়োজিত ‘বাংলাদেশ পুলিশ সংস্কার : প্রেক্ষিত নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন।

বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অবসরপ্রাপ্ত ডিআইজি ড. মো. মতিয়ার রহমান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাবেক আইজিপি আশরাফুল হুদা। বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতির সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত ডিআইজি ড. এম আকবর আলীর সভাপতিত্বে বৈঠকে মুখ্য আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক মাহমুদুর রহমান।

এতে আরও বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব এসএম জহুরুল ইসলাম, সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে ইলাহি আকবর, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ফরিদ আহমেদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শরীফুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. বোরহান উদ্দিন খান, বিএনপির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, পুলিশ সংস্কার কমিশনের ছাত্র প্রতিনিধি জারিফ রহমান, খেলাফত মজলিসের সাধারণ সম্পাদক ড. আহমেদ আব্দুল কাদের প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে মাহমুদুর রহমান বলেন, পুলিশ আজকের একটা প্রচণ্ড ভাবমূর্তি সংকটে পড়েছে- এর জন্য কি পুলিশ দায়ী? এর জন্য সিস্টেম দায়ী। যে ফ্যাসিবাদী সিস্টেম শত বছর ধরে তৈরি করা হয়েছিল- বাংলাদেশের একজন ফ্যাসিস্ট শাসক এবং তার বিদেশি সাপোর্টাররা মিলে এমন শাসনব্যবস্থা বাংলাদেশে চাপিয়ে দিয়েছিল। এ কারণে পুলিশের আজকের এ অবস্থা।

সাবেক ডিআইজি ড. এম আকবর আলী বলেন, আগামী নির্বাচনকে অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করতে হয় তাহলে কাকে দিয়ে করাবেন? পুলিশকে দিয়েই করতে হবে। সেই পুলিশের মনবল বলতে কিছুই নেই। তাই সবার আগে তাদের মনবল ফিরিয়ে আনতে হবে।

সাবেক আইজিপি আশরাফুল হুদা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা বলেছেন, নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টির জন্য পুলিশকে পূর্ববর্তী অন্ধকার যুগের চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। দেখিয়ে দিতে হবে পুলিশ খারাপ নয়। পুলিশ কিছুসংখ্যক খারাপ মানুষ দিয়ে পরিচালিত হয়েছিল মাত্র। প্রধান উপদেষ্টার এমন কথার সঙ্গে আমরা একমত। এটা আমাদের সবার প্রত্যাশা।

সাবেক বিচারপতি ফরিদ আহমেদ বলেন, গত ১৫ বছর পুলিশ একটা দলকে বিশেষ সেবা দিয়েছে। এই সময়ে তারা দেশের জনগণকে সেবা দেয়নি। এটা তারা ইচ্ছাকৃতভাবে করেনি। কিছু কর্মকর্তা নিজ স্বার্থে পুরো বাহিনীকে এমন কাজ করতে বাধ্য করেছে।

মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে ইলাহি আকবর বলেন, সারা দেশে পুলিশের অনেক মডেল থানা হয়েছে। বড় বড় বিল্ডিং হয়েছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের সেবা কতটুকু নিশ্চিত করতে পেরেছে। এ কারণেই জুলাই আন্দোলনের সময় জনগণ পুলিশের ওপর ক্ষিপ্ত ছিল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রফেসর ড. বোরহান উদ্দিন খান বলেন, আইন পরিবর্তনের পক্ষে আমি নই। কারণ আমাদের দেশে যে বিদ্যমান আইন রয়েছে আমরা সে আইন পুরোপুরি প্রয়োগ করতে চাই।

বিএনপির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল বলেন, শেখ হাসিনা বাংলাদেশ পুলিশকে শেষ করে দিয়েছে। তিনি এই বাহিনীর মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছেন। বিশেষ করে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলকে দমন করতে এ বাহিনীকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন। তার এসব কর্মকাণ্ডের কারণে পুলিশ গণশত্রুতে পরিণত হয়েছিল।

খেলাফত মজলিস বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক ড. আহমেদ আব্দুল কাদের বলেন, নিজ স্বার্থে পুলিশকে ব্যবহারের প্রবণতা আমাদের দেশে রয়েছে। দেশ স্বাধীন থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত যারাই ক্ষমতায় এসেছে তারাই পুলিশকে ব্যবহার করেছে। এই প্রবণতা বন্ধ করতে হবে।